জামালপুরে দুটি সরকারি স্কুলে ছিল না উৎসবের আমেজ

এসএসসি’র ফল প্রকাশের পর জামালপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে থেকে তোলা ছবি। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর জেলায় ঐতিহ্যবাহী জামালপুর জিলা স্কুল ও জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাস ও শতাধিক জিপিএ-৫ পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। কিন্তু ৬ মে এসএসসি ফল ঘোষণার পর এ দুটি সরকারি বিদ্যালয় ছিল একদম ফাঁকা।

পাস করা কোনো পরীক্ষার্থী এবং তাদের একজন অভিভাবককেও বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। ফলে ছিলো না কোনো আনন্দ উৎসবের আমেজ। তবে কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট শিক্ষকদের দিকে ঝুকে পড়ায় এমনটি হয়েছে বলে বিদ্যালয় দুটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

জানা গেছে, শতবর্ষের পুরনো ঐতিহ্যবাহী জামালপুর জিলা স্কুল থেকে ২৩৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সবাই পাস করেছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২০ জন পরীক্ষার্থী। অন্যদিকে মেয়েদের জন্য জেলায় সেরা বিদ্যাপীঠ জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২২৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১৫ জন।

প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণার পরপরই সরকারি এই বিদ্যালয় দুটিতে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের পদচারণায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠতো উৎসবমুখর। শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যালয়ের ড্রামসেট নিয়ে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে আনন্দ করতো। শিক্ষকদের সাথে দলবেঁধে ছবি তোলা ছিল চিরচেনা একচিত্র। সবাই মিলে আনন্দ-খুশি উপভোগ করার পাশাপাশি মিষ্টি খাওয়ার ধুম পড়ে যেতো।

কিন্তু এবারই প্রথম ফল ঘোষণার পর বিদ্যালয় দুটিতে গিয়ে দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বেলা ২টার দিকে জামালপুর জিলা স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, একজন পরীক্ষার্থীও নেই, একজন অভিভাবকও নেই। পুরো বিদ্যালয় ফাঁকা। নি:স্তব্ধ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুন নাহার মাকছুদার কক্ষে কয়েকজন শিক্ষক বসে আছেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল ফল ঘোষণার পর থেকে পরীক্ষার্থীরা কেউ আসেনি। একজন অভিভাবকও আসেননি। এ সময় তিনি ফোনে বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথাও বলছিলেন।

জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েও একই চিত্র পাওয়া গেছে। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক কেউ আসেনি বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষক সুলতানা রাজিয়া ও কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তারাও এ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন এবং না আসার কি কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন।

এর কারণ প্রসঙ্গে জামালপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামছুন নাহার মাকছুদা বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘ঘরে বসে ইন্টারনেটে ফল পাওয়া যায়, এই কারণেই হয়তো বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ নেই তাদের। আবার এমনও হতে পারে তারা হয়তো কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের ডাকে সাড়া দিয়ে কিংবা কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের বাসাবাড়িতে দৌড়াচ্ছে। গতবার থেকেই এই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। আমরা আগে থেকেই পরীক্ষার্থীদের জানিয়ে দেই যে ফল প্রকাশের দিন সবাইকে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। গত বছর শতভাগ পাশ করেনি। এবার শতভাগ পাস করেছে। ১২০ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। আজকে সত্যিই আমাদের আনন্দের দিন। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে এলে অনেক ভালো হতো।’

একই প্রসঙ্গে জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা রাজিয়া বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘আমরা তো আগে থেকেই পরীক্ষার্থীদের জানিয়ে রাখছি। এখন তারা না আসলে কি করবো। বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে ফলাফল টানিয়ে দিয়েছি। ইন্টারনেটের কারণে তারা ঘরে বসেই ফল দেখতে পায়। পরীক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল এবং শতভাগ পাস করার আনন্দের এই দিনে তারা বিদ্যালয়ে আসলে ভালো হতো। কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট শিক্ষকদের কারণে এমন হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটাও তো একটা বড় সমস্যা।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি।