বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুনে ১৯ জনের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন

বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক : রাজধানীর বনানীতে বহুতল ভবনে (এফ আর টাওয়ার) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আটকা পড়ে এ পর্যন্ত ১৯ জনের প্রাণহাণির খবর পাওয়া গেছে। অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৭০ জন আহত হয়েছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন) দীলিপ কুমার ঘোষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর বাসসের।

তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকার উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধণকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, দমকল কর্মী, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সময়ে (রাত সাড়ে ৮টা) ওই ভবন ও তৎসংলগ্ন অপর একটি ভবনে উদ্ধার কাজ চলছিলো।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র একজন শ্রীলংকান নাগরিকসহ সাতজনের মৃত্যুর খবর প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করলেও পরে একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ২২তলা ওই বহুতল ভবন এফ আর টাওয়ারের ১৫ তলার লিফটে আটকে পড়া তিনজনের লাশ দেখতে পেয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার মো. রাসেল শিকদার জানান, দমকল কর্মী, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর তৎপরতায় বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে সম্পূর্ণরুপে আগুন নির্বাপণ করা হয়। ২৮ মার্চ দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে বনানীর ওই বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এই খবর পাওয়ার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরসহ নগরীর বিভিন্ন স্টেশন থেকে ২৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর তৎপরতায় ওই ভবন থেকে এপর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুনে ১৯ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। তারা হচ্ছেন- মো. মামুন, মনির হোসেন, মাকসুদুর রহমান, নিরস বিগনে রাজা (২৪), আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৩২) ও আমিনা ইয়াসমীন। এর মধ্যে মো. মামুন, মনির হোসেন ও মাকসুদুর রহমান নগরীর ইউনাইটেড হাসপাতাল এবং আমিনা ইয়াসমীন এ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান।

এ ছাড়া শ্রীলংকার নাগরিক নিরস বিগনে রাজা (২৪)। তিনি রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান। অপরজন আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৩২)। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার শরীরের ৯৫ ভাগ পুড়েছে। তার পকেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের একটি পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে।

রাসেল সিকদার বলেন, আহতদের মধ্যে এই পর্যন্ত ৬৮ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কুর্মিটোলা হাসপাতালে ৩৪ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২০জনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের পঙ্গু, শিকদার ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এদিকে আগুনের খবর পেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা সেখানে বেশকিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং ভবনে আটকা পড়াদের দ্রুত উদ্ধার এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য তদারকি করেন। এসময় স্বাস্থ্য মন্ত্রী আহতদেও সব চিকিৎসা খরচ সরকার বহন করবে বলে ঘোষণা দেন।

ডিউটি অফিসার রাসেল শিকদার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর ওই বহুতল ভবনে আটকে পড়া অন্তত শতাধিক মানুষ ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এসময় অনেকে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে হাতের ঈশারায় উদ্ধারের আকুতি জানাতে থাকে। অনেকে মোবাইল ফোনে তাদের পরিবার ও স্বজনদের কাছে আগুন লাগার খবর জানিয়ে তাদের উদ্ধারের আকুতি জানায়। কেউ কেউ সেখানে অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতার চিত্র ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় এবং সহায়তা কামনা করেন। এসময় অনেকে জীবন বাচাঁতে ওই ভবনের শৌচাগারের পাইপ বেয়ে নামার চেষ্টা করে।আবার অনেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর ওই ভবনে আটকে পড়াদের অনেকে ভবনের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার এবং ফায়ার সার্ভিসের স্বয়ংক্রিয় লেডার (ডিজিটাল মই) দিয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার করা হয়।

ভবনটিতে দ্য ওয়েভ গ্রুপ, হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস, আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড ছাড়াও অর্ধশতাধিক অফিস রয়েছে। সূত্র : বাসস