দেওয়ানগঞ্জে গুলিতে যুবলীগকর্মী নিহত, আহত ২৭, থানায় মামলা

আব্দুল খালেক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের তীব্র কোন্দলের জের ধরে এক সহিংসতায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় আব্দুল খালেক (৪২) নামের একজন যুবলীগকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এবং অন্তত ২৭ জন কর্মীসমর্থক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে হামলার ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবলীগকর্মী আব্দুল খালেক দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ডালবাড়ি এলাকার মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের ভাতিজা মো. মুসলিম বাদী হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দেওয়ানগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মো. সোলায়মান হোসেন, দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নুরুন্নবী অপু ও বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাকিরুজ্জামান রাখালসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মো. সোলায়মান হোসেন। এ নিয়ে দুই প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও দলীয় কোন্দল বিরাজ করে আসছে। এর জের ধরে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১১টার দিকে চুকাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খানের উপস্থিতিতে চলা নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী বৈঠকে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

২০-২৫টি মোটরসাইকেলে হেলমেটধারী অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের জানালা দিয়ে উপর্যুপরি গুলি ছুঁড়ে দ্রুত কেটে পড়ে। এতে পরিষদের ভেতরে থাকা যুবলীগকর্মী আব্দুল খালেক (৪২) পেটে কয়েকটি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগনেতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট মো. আনার আলী, যুবলীগকর্মী মো. মুসলিম ও মো. মামুনসহ অন্তত ২৭ জন কর্মীসমর্থক গুরুতর আহত হন। তাদেরকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মধ্যে মো. আনার আলী, মো. মুসলিম ও মো. মামুনকে জামালপুর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বাকিরা সবাই দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সোলায়মান হোসেন ও তার সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে আমার কর্মীসমর্থকদের ওপর হামলা ও বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করেছে। হামলার পর আহতদের নিয়ে যখন দেওয়ানগঞ্জ হাসপাতালে ব্যস্ত ছিলাম, তখন সোলায়মান হোসেন ও তার লোকজনরা নিহত আব্দুল খালেকের বাড়িতে হানা দিয়ে তার স্ত্রী তানজিনা আক্তার লাকী ও তার পাঁচ বছরের ছেলে শিশু খালেদ বিন বিজয়কে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে। তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ হামলার ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সোলায়মান হোসেনসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে দেওয়ানগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার সকল আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সোলায়মান হোসেনকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে তার সহোদর ভাই উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাকিরুজ্জামান রাখাল অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ আমার ভাইয়ের জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্বিত হয়ে তার কর্মীসমর্থকদের দিয়ে বুধবার রাতে চুকাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইয়ের ভায়রা-ভাই আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনার পর আবুল কালাম আজাদের লোকজনরা আব্দুল খালেকের স্ত্রী তানজিনা আক্তার লাকী ও তার দুই সন্তানকে দুই ঘন্টা আটক করে রেখেছিল। এটা জানতে পেরে আমরা লোক পাঠিয়ে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করেছি। স্বামীর মৃত্যুতে শোকার্ত তানজিনা আক্তার লাকী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি তার স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা দায়ের করবেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’

২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর আড়াইটার দিকে নিহত আব্দুল খালেকের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী তানজিনা আক্তার লাকীকে পাওয়া যায়নি। তার ভাতিজা মো. তছলিম অভিযোগ করে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে হামলার কিছুক্ষণের মধ্যে তানজিনাদের বাবার বাড়ির কিছু লোক এসে তাকে এবং তার শিশু ছেলেকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে। তারা আব্দুল খালেকের মেয়ে স্কুলছাত্রী রাখি মনিকেও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সে যায়নি। আমি আমার চাচার হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।’

দেওয়ানগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে নিহত আব্দুল খালেকের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। নিহতের বাবা-মা না থাকায় এবং ঘটনার রাত থেকে স্ত্রী নিখোঁজ থাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ নিহত আব্দুল খালেকের মরদেহ গ্রহণ করে এলাকায় তার দাফনের ব্যবস্থা করেছেন। তবে পুলিশ ঘটনার পর থেকে এই মামলার একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

দেওয়ানগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. লুৎফর রহমান বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘হামলায় নিহত আব্দুল খালেকের ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়ে গুলি করে হতাহতের ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সোলায়মান হোসেনসহ ৩১ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’