উন্নয়ন সংঘের রি-কল প্রকল্পে গাভী পালন করে বদলে গেছে ফুলমতির জীবন

দুধ সংগ্রহ করছেন ফুলমতি বেগম। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠি ডটকম

নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সহায় সম্পত্তি, ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব ফুলমতি বেগমের অভাব দূর হয়েছে। তিনি এখন সফল ব্যবসায়ী এবং একজন স্বাবলম্বী নারী। বলছিলাম জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের বওলাতলী গ্রামের সংগ্রামী নারী ফুলমতি বেগমের জীবন সংগ্রামের কথা। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান তার সংসার জীবন ও সংগ্রামী জীবনের কথাগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বওলাতলী গ্রামের শাহাজল হকের সাথে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের ডাকাতিয়া গ্রামের আজিজুর রহমানের মেয়ে ফুলমতি বেগমের। বিয়ের পর স্বামী শাহাজল হকের বাড়ি-ভিটা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। এরপর বড়খাল গ্রামে ফের বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিন বছর বসবাস করার পর ফের ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে তার বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়। অভাব-অনটনের সংসার হওয়ায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয় ফুলমতির পরিবার। এরই মধ্যে শাহাজল হক- ফুলমতি দম্পতির ঘরে চার মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম হয়। আয় না বাড়লেও সংসারে ব্যয়ের মাত্রা বেড়েই যায় তার। স্বামী শাহাজল হক দিনমুজুরের কাজ করে যে কয় টাকা পায় তা দিয়ে তিন বেলা খেতে পারে না তারা। মাঝে মধ্যে নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করেও সংসারের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করেন তার স্বামী শাহাজল হক। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অর্থের চাহিদাও বেড়ে যায় তার ।

২০১৩ সালে রি-কল প্রকল্পের মাধ্যমে গরু পালন ও দুধের ব্যবসার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাকে।তার চরম দুর্দিন তখন অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এর অর্থায়নে পরিচালিত উন্নয়ন সংঘের রি-কল ২০২১ প্রকল্পের সহযোগিতায় বওলাতলী প্রদীপ উন্নয়ন সংঘ নামে একটি সিবিও’র সদস্যরা তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ওই সিবিও’র সদস্যরা ফুলমতিকেও সদস্য হওয়ার আহবান করেন। শুরু হয় জীবনের পটপরিবর্তনের। গ্রামের অন্যান্য নারীদের সাথে তিনিও ওই সিবিওর সাথে যুক্ত হন। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর একদিকে যেমন তার চোখ খুলে যায় অন্যদিকে সংগ্রামী জীবন শুরু হয় এই নারীর। আর পেছনে না তাকিয়ে গাভী পালন শুরু করেন ফুলমতি। একই সঙ্গে তিনি দুধ বিক্রি শুরু করেন। অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় উন্নয়ন সংঘের রি-কল ২০২১ প্রকল্পের উদ্যোগে ফুলমতিকে দধের ব্যবসার জন্য দুধ রাখার জন্য ক্যান, পরিমাপক যন্ত্র, মগ, চেয়ারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদান করা হয়।

প্রথমে ১০ লিটার করে দুধ প্রতি দিন নিজ হাতে স্থানীয় মন্ডলপাড়া গ্রামে দুধ বিক্রি করেন ফুলমতি বেগম। মানুষের নানা রকম নেতিবাচক কথা ও সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি তার মত করে এগিয়ে যেতে থাকেন। এরই মধ্যে দুধের ব্যবসার পরিধিও বেড়ে যায়। প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সুন্দর মত সংসার চলতে থাকে। একে একে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ লিটার দুধ বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেন ফুলমতি। তার স্বামীর সহায়তায় দেওয়ানগঞ্জ বাজার, বেলতলী বাজার, চিকাজানী বাজার ও ইসলামপুর বাজারে দুধ সরবরাহ করছেন। পাশাপাশি গাভীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে তার পরিবারে। এখন জমি, ঘর, আসবাবপত্র, ঘরে সোলার , পযাপ্ত খাবার সব কিছু আছে তার সংসারে। কোন কিছুরই অভাব নেই । চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করিয়েছেন। শুধুমাত্র দুধের ব্যবসায় তার ভাগ্য ফিরেছে। মাত্র মাত্র পাঁচ বছরেই পাল্টে গেছে তার জীবনের। স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। গতি পেয়েছে সকল কাজের ।

কথা হলে সংগ্রামী নারী ফুলমতি বেগম জানান, নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম আর উন্নয়ন সংঘ রি-কল ২০২১ প্রকল্পের সহযোগিতায় আমার জীবনের পরিবর্তন হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমার সার্বিক উন্নতি হয়েছে। এমনকি সমাজে এখন আমার অনেক সম্মান বেড়েছে। এখন অন্যের দুয়ারে হাত পাততে হয় না।

উন্নয়ন সংঘের রি-কল ২০২১ প্রকল্পের সমন্বয়কারী জোৎস্না আক্তার জানান, চরাঞ্চলের বিপদাপন্ন নারীদের ঘাত সহিষ্ণু , তাদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত করা , নারীর নেতৃত্ব বৃদ্ধি করা সহ টেকসই উন্নয়ন করতে রি-কল ২০২১ প্রকল্প বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় কাজ করছে। তিনি আরো বলেন , নারীরা শুধু ঘরের কাজ নয় তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও অর্থনৈতিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।