জয় দিয়ে টি-২০ সিরিজ শুরু করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
বাঁ-হাতি পেসার শেলডন কট্রেলের ৪ উইকেট ও ওপেনার শাই হোপের ২৩ বলে ৫৫ রানের সুবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় দিয়ে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ শুরু করলো সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৭ ডিসেম্বর সিরিজের প্রথম টি-২০ ম্যাচে ক্যারিবীয়রা ৮ উইকেটে হারিয়েছে টাইগারদের। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সিলেটে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে নেমেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের সামলাতে হিমশিম খান বাংলাদেশের টপ-অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান- তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও সৌম্য সরকার।

ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই মিড-অফে কট আউট থেকে বেঁচে যান তামিম। তবে দ্বিতীয় ওভারে নিজের ইনিংসের ইতি টানের তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি পেসার শেলডন কট্রেলের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে তালু বন্দী হন ৫ রান করা তামিম।

তামিমের মত একই শট খেলতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দিয়ে ফিরেন লিটনও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক পেসার ওশান টমাসের বাউন্সারে উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে পুল করে আউট হন লিটন। তিনি করেন ৬ রান।

তামিম-লিটনের দেখানো পথে হাটেন তিন নম্বরে নামা সৌম্য। কট্রেলের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে থামেন তিনি। তার ব্যাট থেকেও আসে ৫ রান। এ সময় ৩১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।

সতীর্থদের যাওয়া-আসার মিছিলে ব্যাট হাতে মারমুখী ছিলেন অধিনায়ক সাকিব। সাকিবের ১৪ বলে ২৩ রানের সুবাদেই পাওয়া প্লেতে ৫৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। টপ-অর্ডার না পারলেও সাকিবের সাথে মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বড় জুটি গড়ার আশায় ছিলো বাংলাদেশ শিবির।

কিন্তু মুশফিকুর রহিম ৫ রান করে রান আউটের ফাঁদে পড়েন। ফলে বাংলাদেশের চিন্তা আরও বেড়ে যায় । তবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও আরিফুল হক দু’অংকের কোটা পেরিয়ে বাংলাদেশকে ভালো জুটি এনে দেয়ার আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। মাহমুদুল্লাহ ২৫ ও আরিফুল ৩০ রানের জুটি গড়েন সাকিবের সাথে। মাহমুদুল্লাহ ১২ ও আরিফুল ১৭ রান করেন। তাদের বিদায়ের পরই সংক্ষিপ্ত ভার্সনে অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান সাকিব।

হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৬১ রানে থেমে যান সাকিব। ৪৩ বল মোকাবেলা করে ৮টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন সাকিব। অধিনায়ক ফিরে যাবার পর ১ ওভার বাকী থাকতে ১২৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেলডন কট্রেল ২৮ রানে ৪ টি ও কিমো পল ২৩ রানে ২ উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ১৩০ রানের সহজ লক্ষ্যকে হাতের মোয়া বানিয়ে ফেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার এভিন লুইস ও শাই হোপ। ওয়ানডে সিরিজে ২টি সেঞ্চুরি হাকানো হোপ ছিলেন মারমুখী মেজাজে। তাই ২০ বলে স্কোর বোর্ডে ৫১ রান পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে ১৮ রান অবদান রেখে ফিরেন লুইস। তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন মিডিয়াম পেসার সাইফউদ্দিন।

ব্রেক-থ্রু পেয়েও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। কারণ ব্যাট হাতে মারমুখী মেজাজেই ছিলেন হোপ। নিজের মুখোমুখি হওয়া ১৬তম বলেই টি-২০ ক্রিকেটে ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান হোপ। তবে এরপর খুব বেশি দূর যেতে পারিনেনি তিনি শেষ পর্যন্ত ২৩ বলে তিনটি চার ও ছয়টি ছক্কায় ৫৫ রান করে স্পিনার মাহমুদুল্লাহ বলে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন হোপ। দ্বিতীয় উইকেটে নিকোলাস পুরানের সাথে ২৫ বলে ৪৭ রান যোগ করেন তিনি হোপের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩২ রান যোগ করে ১০ দশমিক ৫ ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন পুরান ও কিমো পল। পুরান ২৩ ও পল ২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কট্রেল।

আগামী ২০ ডিসেম্বর ঢাকার মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০।

স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক ব্র্রাফেট ব কট্রেল ৫
লিটন দাস ক ব্রাফেট ব টমাস ৬
সৌম্য সরকার ক পাওয়েল ব কট্রেল ৫
সাকিব ক এন্ড ব কট্রেল ৬১
মুশফিকুর রহিম রান আউট (পাওয়েল) ৫
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক হোপ ব কট্রেল ১২
আরিফুল হক ক পুরান ব এ্যালেন ১৭
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ক পুরান ব ব্রাফেট ১
মেহেদি হাসান মিরাজ ক হোপ ব পল ৮
আবু হায়দার অপরাজিত ১
মুস্তাফিজুর রহমান বোল্ড ব পল ০
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-২, নো-১, ও-১) ৮
মোট (অলআউট, ১৯ ওভার) ১২৯
উইকেট পতন : ১/১১ (তামিম), ২/১৯ (লিটন), ৩/৩১ (সৌম্য), ৪/৪৮ (মুশফিক), ৫/৭৩ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/১০৩ (আরিফুল), ৭/১১০ (সাইফউদ্দিন), ৮/১২২ (সাকিব), ৯/১২৯ (মিরাজ), ১০/১২৯ (মুস্তাফিজ)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
টমাস : ৪-০-৩৩-১,
কট্রেল : ৪-০-২৮-৪ (ও-১),
পল : ৪-০-২৩-২ (নো-১),
ব্রাফেট : ৩-০-১৩-১,
অ্যালেন : ৩-০-১৯-১,
পাওয়েল : ১-০-৭-০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস :
লুইস ক আরিফুল ব সাইফউদ্দিন ১৮
শাই হোপ ক মুস্তাফিজুর ব মাহমুদুল্লাহ ৫৫
পুরান অপরাজিত ২৩
পল অপরাজিত ২৮
অতিরিক্ত (লে বা-৫, ও-১) ৬
মোট (২ উইকেট, ১০.৫ ওভার) ১৩০
উইকেট পতন : ১/৫১ (লুইস), ২/৯৮ (হোপ)।
বাংলাদেশ বোলিং :
সাকিব আল হাসান : ৩.৫-০-৩২-০,
মেহেদি হাসান মিরাজ : ২-০-৩৭-০,
আবু হায়দার : ১-০-১৫-০,
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন : ১-০-১৩-১ (ও-১),
মুস্তাফিজুর রহমান : ১-০-১৫-০,
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ : ২-০-১৩-১।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : শেলডন কট্রেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সূত্র : বাসস