২৫ জানুয়ারি শনিবার সকালে জামালপুর শহরের ফৌজদারি মোড় থেকে ‘মুজিব বাহিনী, জামালপুর’ লেখা ব্যানার নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আকস্মিক ঝটিকা মিছিল করেছে। এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুরের নেতাকর্মীদের মাঝে।
ছাত্রলীগের ওই মিছিলের প্রতিবাদে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দ্রুত বিচারের দাবিতে ২৬ জানুয়ারি রবিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও দয়াময়ী মোড়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। বিকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ দয়াময়ী মোড়ে গিয়ে ছাত্রদের দাবির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস দিলে বিকাল ৪টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের ওই মিছিলের প্রতিবাদে ২৬ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন জামালপুর জেলার নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের দয়াময়ী মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা দয়াময়ী মোড়ে তিনদিকের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে বিরতিহীন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেলা ৩টার দিকে আধাঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে পরবর্তীতে রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেন। এ সময় তারা রাস্তায় গাড়ির টায়ারও পোড়ায়।
বেলা পৌনে ৪টার দিকে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ দয়াময়ী মোড়ে গিয়ে ছাত্র সমন্বয়কদের সাথে কথা বলেন। একপর্যায়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২৭ জানুয়ারি সোমবার জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগমের কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠকের আশ্বাস দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা তাদের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেন। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের কারণে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে।

এর আগে বিক্ষোভ চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মীর ইসহাক হাসান ইখলাস বলেন, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী বারবার মিছিল করছে। কিন্তু প্রশাসনের টনক নড়ছে না। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করে গ্রেপ্তার করছে সাধারণ মানুষ ও সাধারণ কর্মীদের। এই দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে। আমরা ফ্যাসিস্টদের কোন ভাবেই ছাড় দেব না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব আবিদ সৌরভ বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ মিছিল করেছে। কিন্তু প্রশাসন এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তারা নিরব ভূমিকা পালন করছেন। তাই ছাত্রসমাজ আজ মাঠে নেমেছে। আমরাই তাদের প্রতিহত করব। জেলা প্রশাসন ২৭ জানুয়ারি আমাদের সাথে বৈঠক করতে চেয়েছেন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মিছিলে হামলা ও গুলি বর্ষণের মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস পাওয়ার পর থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছি।
জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবদিকদের বলেন, বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের সাথে কথা বলেছি। আপাতত ছাত্ররা আন্দোলন স্থগিত করেছে। ২৭ জানুয়ারি একটা সময় নির্ধারণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাথে বসে তাদের আন্দোলনের ইস্যু শুনতে চাই। তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি। তাদের আন্দোলনের প্রতিটি ইস্যু আইনগতভাবে দেখা হবে।