শেরপুর সদর উপজেলায় গণসংযোগের সময় জামায়াত ইসলামীর নেতা-কর্মীদের ওপর বিএনপির হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। অতর্কিত এ হামলায় অন্তত ১৫/২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে শেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দু’জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২৪ অক্টোবর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের ডাকপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, ছাত্রশিবিরের সাবেক জেলা সভাপতি ও সদর উপজেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য শফিউল ইসলাম স্বপন এবং শেরপুর পৌরসভার ওয়ার্ড সভাপতি রাকিব। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
শেরপুর-১ (সদর) আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম বিষয়টি শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুবায়দুল আলমকে অবহিত করেছেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, জুমার নামাজ শেষে গণসংযোগ করতে গেলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আমাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে তারা লাঠিসোঠা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের অন্তত ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। গুরুতর অবস্থায় আহত দু’জন শেরপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েেেছন। আমাকে রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের শহর সেক্রেটারি ডাক্তার হাসানুজ্জামান প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। না হলে আমার উপরই হামলা হত। আমি আল্লাহর রহমতে প্রাণে বেঁচে গেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ৪ শতাধিক লোক ছিলাম তাদের ১০-১২ জনের সামনে। আমরা কিন্তু ধরপাকড় করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম। যদি গতানুগতিক কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হতাম। জামায়াতে ইসলামী পুরোপুরি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। কোনভাবেই যেন কোন সন্ত্রাস তৈরি না হয় এ ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। আজকে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আমরা বলেছি, এই শান্ত স্বভাবটিকে মনে করবেন না যে আমরা পারছি না। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। মানে আপনার সহযোগিতা আমরা চাচ্ছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় এটা আপনার থানা থেকেই নজির স্থাপন হোক। ওসি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তিনি তার বাহিনী নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে ব্যবস্থা নিবেন।
তিনি বলেন, ঘটনাটির সাথে সম্পৃক্ত চারজন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করেছে। তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়টিও তিনি (ওসি) আমলে নিয়েছেন।
রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমরা বিএনপির সাথে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক সহযাত্রী ছিলাম। কখনও এরকম অনাকাংখিত ঘটনা হয়নি। কিন্তু আজ যখন দেশ স্বাভাবিকতার দিকে যাচ্ছে। দেশ যখন ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশ যখন সামগ্রিকভাবে আইন শৃংখলার উন্নতির দিকে যাচ্ছে। ঠিক তখন বিএনপি একই কায়দা, পুরনো কায়দা, ফ্যাসিবাদী কায়দা নতুন করে জাহির করার জন্য, নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করি। যারা আমাদের উপর হামলা করেছে তাদেরকে ইতিমধ্যে বাহবা জানানো হয়েছে। এটা কত নোংরা ধরনের একটা রাজনীতি বাংলাদেশের ইতিহাসে আমাদের নতুন করে দেখতে হচ্ছে।
এদিকে জামায়াত ইসলামীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শেরপুর জেলা বিএনপি ও ছাত্রদল শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে।

অপরদিকে রাত ১০টায় জেলা বিএনপির উদ্যোগে শেরপুর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আইনজীবী মো. সিরাজুল ইসলাম হামলার ঘটনাটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বলেন, বরং তারাই (জামায়াত) পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এলাকায় তিন চারটি মসজিদে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সমবেত হয়। মিটিং করে, মিছিল করে, জনগণের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করে। এতে সচেতন এলাকাবাসী তীব্র প্রতিবাদ করে এবং তীব্র প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটেই তারা (জাামায়াত) এলাকা থেকে চলে আসে। পরবর্তীতে অবৈধভাবে শেরপুর সদর থানা ঘেরাও করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আমাদের দায়ী করে মিটিংও করে তারা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কোনো নেতা-কর্মী যদি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে আমরা দলীয়ভাবে ওই নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুবায়দুল আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, জামায়াত নেতৃবৃন্দ ঘটনাটি মৌখিকভাবে জানালেও এখনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।
মুগনিউর রহমান মনি : নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম 

















