অপরাজেয়-বাংলাদেশ একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা। সংস্থাটি দীর্ঘ দিন ধরে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় ও সহিংসতার শিকার শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। বর্তমানে সংস্থাটি দি ফ্রিডম ফাণ্ডের আর্থিক সহায়তায় যৌন নির্যাতনের শিকার/পাচারের শিকার ও বাণিজ্যিকভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুদের বিভিন্ন ধরনের সেবা ও সুরক্ষা দিয়ে আসছে।
কিন্তু এইসব শিশুদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে, নাগরিক সনদ, বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন সনদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে যেসব শিশুর জন্ম নিবন্ধন নেই বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার কারণে জন্মনিবন্ধন করতে পারছিল না। এসব শিশুদের বিষয়ে আইনে উল্লেখ থাকার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অপরাজেয়-বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জন্ম-নিবন্ধন দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে আইনের ‘অপ্রাপ্য’ অপশন ব্যবহার করে শিশুদের জন্মনিবন্ধনের বিষয়টির জটিলতা নিরসণ ঘটে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতায় অপরাজয়-বাংলাদেশ এ পর্যন্ত মোট ২৫ জন শিশুর জন্মনিবন্ধন করিয়ে সনদ সংগ্রহ করতে পেরেছে। এই ‘অপ্রাপ্য’ অপশন শুধু অপরাজেয় বাংলাদেশ এর প্রকল্পভুক্ত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্ম নিবন্ধনই নয়, সারাদেশের এমন শিশুদের জন্ম নিববন্ধনের দীর্ঘদিনের জটিলতাও কেটে গেছে। এই অপ্রাপ্য অপশন ব্যবহার করে তাদের মতো শিশুদেরও জন্ম নিবন্ধন খুব সহজে করা যাবে বলে মনে করছে অপরাজেয় বাংলাদেশ।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ এর সংশোধনী আইনে ‘অপ্রাপ্য’ অপশন সম্পর্কে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- “আইনের দফা (ক) ও (খ) তে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি এতিম, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, পিতৃ বা মাতৃপরিচয়হীন, পরিচয়হীন, বেদে, ভবঘুরে, পথবাসী বা ঠিকানাহীন বা যৌনকর্মী হওয়ায় নিবন্ধক তথ্যের ঘাটতির কারণে উক্ত ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন প্রত্যাখ্যান করিতে পারিবেন না এবং এরূপ ক্ষেত্রে যে সকল তথ্য অসম্পূর্ণ থাকিবে সে সকল স্থানে ‘অপ্রাপ্য’ শব্দ লিখে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে।”
অর্থাৎ আইন অনুযায়ী যেসব শিশুর জন্ম নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই, সেসব শিশু ‘অপ্রাপ্য’ অপশন ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে। ফলে এই আইনের বলে অপরাজেয় বাংলাদেশের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মনিবন্ধন জটিলতার অবসান করে দিয়েছে।
অপরাজেয় বাংলাদেশের জামালপুরের কেন্দ্র ব্যবস্থাপক মো. আশরাফুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, জামালপুর কেন্দ্রের শিশুদের জন্মনিবন্ধনের জন্য বিদ্যমান আইনের ‘অপ্রাপ্য’ অপশনটির বিষয়ে অপরাজেয়-বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জন্ম-নিবন্ধন দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের অবহিত করি। তারা এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক সহযোগিতা করেন। যার ফলে অপরাজয়-বাংলাদেশ এ পর্যন্ত মোট ২৫ জন শিশুর জন্মনিবন্ধন করিয়ে তাদের সনদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অপরাজেয় বাংলাদেশ মনে করছে যেসব শিশুর জন্ম-নিবন্ধন নেই বা প্রয়োজনীয় তথ্যের কারণে করতে পারছে না, বিদ্যমান আইনের এই ‘অপ্রাপ্য’ অপশন ব্যবহার করে তাদের মতো সকল শিশুদের জন্মনিবন্ধন সনদ পাওয়া সম্ভব।