ঢাকা ০৬:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নরুন্দি রেলস্টেশনে অবকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতির দাবি জামালপুরে ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত মাতলামির অভিযোগে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগনেতা নূর হোসেন আবহানী গ্রেপ্তার মাদারগঞ্জে ৩১ দফা কর্মসূচির লিফলেট বিতরণ করেছে ছাত্রদল বকশীগঞ্জে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে শুকনো খাবার বিতরণ জামালপুর যৌনপল্লী যেন এই শহরের অন্ধকারবেষ্টিত এক নির্মমতার উদাহরণ জামালপুরে ৫ দফা দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল জামালপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত মাদারগঞ্জে হকার্স মার্কেটে আগুন, ২১ দোকান পুড়ে ছাই জামালপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ নিহত ৪, আহত ৪

বকশীগঞ্জে বিষাক্ত আগাছানাশক ছিটিয়ে কৃষকের তিন বিঘা জমির ধান বিনষ্ট

বকশীগঞ্জ : ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আতোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

একবার নয় দু’বার নয় টানা পাঁচ বার বিষাক্ত আগাছানাশক ছিটিয়ে ফসল নষ্ট করা হয়েছে। দুই বছর ধরে উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারেননি কৃষক আতোয়ার হোসেন। সেই কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে এবারও তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন তিনি। এবারও শেষ রক্ষা হয়নি। ধান পাকার অপেক্ষায় ছিলেন আতোয়ারের পরিবার।

স্বপ্ন ছিল এবার ধান কেটে বাড়িতে নিতে পারবেন তিনি। কিন্তু বাঁধ সাধে পুরনো শকুন। ক্ষুদ্র কৃষক আতোয়ার হোসেনের স্বপ্ন চূর্ণ বিচূর্ণ করে এবারও আগাছানাশক ছিটিয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে তার তিন বিঘা জমির ধান। ৬ মে মঙ্গলবার রাতে কে বা কারা তার তিন বিঘা জমির ধান ক্ষেতে ছিটায় বিষাক্ত আগাছানাশক। এর পরদিন থেকেই মরতে শুরু করে ধান ক্ষেতটি। দুই দিন না যেতেই স্পষ্ট হয়ে উঠে বিষাক্ত আগাছা নাশকের ক্ষতচিহ্ন। ঘটনাটি ঘটেছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের বালুরচর গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধারদেনা করে চলতি বোরো মওসুমে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন ক্ষুদ্র কৃষক আতোয়ার হোসেন। কিন্তু প্রতিবারের ন্যায় এবারও সেই জমিতে বিষাক্ত নাশক ছিটিয়ে বিনষ্ট করা হয় ধান ক্ষেত। ৬ মে গভীর রাতে কে বা কারা এসব আগাছানাশক ছিটান। এরপর থেকে সোনালী ধান ক্ষেত বিবর্ণ রূপ ধারণ করে। দুই দিন পর ধান ক্ষেত সাদা সাদা ও বিবর্ণ হয়ে উঠে। ধান ক্ষেতটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে পড়লে হতাশা দেখা দেয় কৃষক আতোয়ারের পরিবারে। এমন কান্ডে ক্ষোভ দেখা দেয় পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে।

এখন ধান ক্ষেতের পাশে বসে ডুকরে কাঁদেন আতোয়ার হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা বেগম। এই তিন বিঘা জমি চাষ করেই বাবা, স্ত্রী, তিন সন্তান নিয়ে কোন রকম সংসার চালান আতোয়ার হোসেন। এখন কিভাবে সংসার চালাবেন সেই চিন্তায় সময় কাটছে তার। একে একে পাঁচবার ফসল নষ্ট করায় কৃষক আতোয়ারর হোসেনের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ। গত দুই বছরে এক টাকার ফসলও ঘরে তুলতে পারেননি তিনি। অথচ দিন রাত পরিশ্রম করেছন সোনালী ফসল ঘরে তুলবেন বলে। কিন্তু সেই স্বপ্ন চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা।

কৃষক আতোয়ার হোসেন জানান, গত দুই বছরে আমার জমির পাঁচটি ফসলে বিষ দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। আমার বাড়ির সামনে থেকে গরু চুরি করা হয়েছে। দুই বছরে আবাদ করতে গিয়ে দুই লাখ টাকার ঋণগ্রস্ত হয়েছি। ফসলগুলো ঘরে তুলতে পারলে পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারতাম। এখন কি করব বুঝতি পারছি না।

স্থানীয় বালুরচর গ্রামের ফুলু মিয়া জানান, আতোয়ার হোসেন একজন গরিব কৃষক। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। কিন্তু দুবৃর্ত্তের হিংসার আগুনে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন আতোয়ার হোসেন। তার সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই অমানবিক। আমরা এর বিচার চাই। স্থানীয় গুলজেহার আলী, নবী হোসেন ও কালাম মিয়াও একই দাবি জানান।

আতোয়ারের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের রিজিকের উপর কেন হামলা করা হল। আমার সন্তানদের কি খাওয়াব এখন। এর বিচার চাই।

বকশীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম জানান, কৃষক আতোয়ার হোসেনের সাথে জঘন্য কাজ করা হয়েছে। এটা একটা ফৌজদারি অপরাধ। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে ধান ক্ষেতটি পরিদর্শন করা হয়েছে। যেকোন সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে তাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে ১০ মে শনিবার বিকালে বকশীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আতোয়ার হোসেন।

বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক ও হৃদয়বিদারক। এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নরুন্দি রেলস্টেশনে অবকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতির দাবি

বকশীগঞ্জে বিষাক্ত আগাছানাশক ছিটিয়ে কৃষকের তিন বিঘা জমির ধান বিনষ্ট

আপডেট সময় ০৮:১৩:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

একবার নয় দু’বার নয় টানা পাঁচ বার বিষাক্ত আগাছানাশক ছিটিয়ে ফসল নষ্ট করা হয়েছে। দুই বছর ধরে উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারেননি কৃষক আতোয়ার হোসেন। সেই কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে এবারও তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন তিনি। এবারও শেষ রক্ষা হয়নি। ধান পাকার অপেক্ষায় ছিলেন আতোয়ারের পরিবার।

স্বপ্ন ছিল এবার ধান কেটে বাড়িতে নিতে পারবেন তিনি। কিন্তু বাঁধ সাধে পুরনো শকুন। ক্ষুদ্র কৃষক আতোয়ার হোসেনের স্বপ্ন চূর্ণ বিচূর্ণ করে এবারও আগাছানাশক ছিটিয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে তার তিন বিঘা জমির ধান। ৬ মে মঙ্গলবার রাতে কে বা কারা তার তিন বিঘা জমির ধান ক্ষেতে ছিটায় বিষাক্ত আগাছানাশক। এর পরদিন থেকেই মরতে শুরু করে ধান ক্ষেতটি। দুই দিন না যেতেই স্পষ্ট হয়ে উঠে বিষাক্ত আগাছা নাশকের ক্ষতচিহ্ন। ঘটনাটি ঘটেছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের বালুরচর গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধারদেনা করে চলতি বোরো মওসুমে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন ক্ষুদ্র কৃষক আতোয়ার হোসেন। কিন্তু প্রতিবারের ন্যায় এবারও সেই জমিতে বিষাক্ত নাশক ছিটিয়ে বিনষ্ট করা হয় ধান ক্ষেত। ৬ মে গভীর রাতে কে বা কারা এসব আগাছানাশক ছিটান। এরপর থেকে সোনালী ধান ক্ষেত বিবর্ণ রূপ ধারণ করে। দুই দিন পর ধান ক্ষেত সাদা সাদা ও বিবর্ণ হয়ে উঠে। ধান ক্ষেতটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে পড়লে হতাশা দেখা দেয় কৃষক আতোয়ারের পরিবারে। এমন কান্ডে ক্ষোভ দেখা দেয় পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে।

এখন ধান ক্ষেতের পাশে বসে ডুকরে কাঁদেন আতোয়ার হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা বেগম। এই তিন বিঘা জমি চাষ করেই বাবা, স্ত্রী, তিন সন্তান নিয়ে কোন রকম সংসার চালান আতোয়ার হোসেন। এখন কিভাবে সংসার চালাবেন সেই চিন্তায় সময় কাটছে তার। একে একে পাঁচবার ফসল নষ্ট করায় কৃষক আতোয়ারর হোসেনের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ। গত দুই বছরে এক টাকার ফসলও ঘরে তুলতে পারেননি তিনি। অথচ দিন রাত পরিশ্রম করেছন সোনালী ফসল ঘরে তুলবেন বলে। কিন্তু সেই স্বপ্ন চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা।

কৃষক আতোয়ার হোসেন জানান, গত দুই বছরে আমার জমির পাঁচটি ফসলে বিষ দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। আমার বাড়ির সামনে থেকে গরু চুরি করা হয়েছে। দুই বছরে আবাদ করতে গিয়ে দুই লাখ টাকার ঋণগ্রস্ত হয়েছি। ফসলগুলো ঘরে তুলতে পারলে পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারতাম। এখন কি করব বুঝতি পারছি না।

স্থানীয় বালুরচর গ্রামের ফুলু মিয়া জানান, আতোয়ার হোসেন একজন গরিব কৃষক। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। কিন্তু দুবৃর্ত্তের হিংসার আগুনে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন আতোয়ার হোসেন। তার সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই অমানবিক। আমরা এর বিচার চাই। স্থানীয় গুলজেহার আলী, নবী হোসেন ও কালাম মিয়াও একই দাবি জানান।

আতোয়ারের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের রিজিকের উপর কেন হামলা করা হল। আমার সন্তানদের কি খাওয়াব এখন। এর বিচার চাই।

বকশীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম জানান, কৃষক আতোয়ার হোসেনের সাথে জঘন্য কাজ করা হয়েছে। এটা একটা ফৌজদারি অপরাধ। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে ধান ক্ষেতটি পরিদর্শন করা হয়েছে। যেকোন সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে তাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে ১০ মে শনিবার বিকালে বকশীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আতোয়ার হোসেন।

বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক ও হৃদয়বিদারক। এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।