ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ বলেছেন, তারুণ্যের উৎসব সারাদেশব্যপী পালিত হচ্ছে কেন? আপনারা যদি একটু ঘুরে দেখেন ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী যে আন্দোলনটা হয়েছিল কাদের হাত দিয়ে, এই তরুণদের হাত দিয়ে। বৈষম্যের অপর নাম হচ্ছে সাম্য। সাম্য নিশ্চিত করতে তারা আপন কলিজার তাজা রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করেছে।
৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক যুব সমাবেশে প্রধান অতিথি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ এসব কথা বলেন।
মো. মোখতার আহমেদ আরও বলেন, আমরা সমন্বয়কদের আহবায়কের কাছে একটি সুচিন্তিত তালিকা পেয়েছি। যেখানে ওনি বলেছেন তরুণদের জন্য কি করা উচিৎ। কবিরা সমাজের প্রেক্ষাপটে অনেক কিছুই বলেন। একইভাবে কিন্তু আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন এই তরুণদের উদ্দেশ্যে, গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে নাহি কিছু বড় নাহি কিছু মাহিয়ান। সেদিন নিশীথে বেলা দোস্তর পারাবারে যে যাত্রী একা কুল ভাসালো ভেলা, প্রভাতে সে আর ফিরলো না কুলে, সে দুরন্ত লাগি আঁখি মুছি আর গুছি গান আজিও নিশীথে বেলা। এই তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেছেন দুলিতেছে তৈরি ফুলিতে জল বুলিতে মাঝি পথ, সিরিয়াছে হাল, কে ধরিবে হাল আছে কার হিম্মত। সেই তরুণদের হিম্মত আছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে বিএনপি জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছে কিন্তু এই ফেরাউনের মতো যে সরকার তাকে সরাতে পারেনি। এই জগদ্দল পাথর আমাদের উপর চাপা ছিল। সেই পাথর কাদের হাতে সরল এই তরুণদের হাতে। এদের পিছনে সবাই ছিল মানে সব দলই। কিন্তু আল্লাহতালা এই ঘটনাটা ঘটিয়ে দিলেন কিন্তু তরুণদের দিয়ে। খেলাটা লেখা ছিল যে এই তরুণরাই করবে। বিএনপি পারবে না, জামায়াত পারবে না, অন্যদল পারবে না।
বিভাগীয় কমিশানার বলেন, তরুণদের জন্য আহবায়ক সাহেব যে কথাগুলো বলেছেন অত্যন্ত প্রনিধান যোগ্য। এই পয়েন্টের আলোকে আমাদের যে সামনে নীতিমালা সেই ভাবেই বাস্তবায়ন করতে হবে। ডেমোগ্রাফিক ডিফিন্ডেট এর মানে হচ্ছে আমাদের দেশে বর্তমানে যে ১৮ কোটি জনসংখ্যা তার মধ্যে ৭ কোটির বেশি হচ্ছে যুব সমাজ। যুব সমাজ কেমন! একটা ট্রাকের যে চেসিস, সবকিছু থাকে কার উপরে, একটা চেসিসের উপরে। চেসিস যদি শক্ত বা মজবুত না হয় তাহলে সব শেষ, চলবে না।
বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বলেন, আমাদের বড় ধরনের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, বর্তমানে যুবদের অবস্থান খুবি ভাল। তাদের বড় একটা পার্সেন্ট হচ্ছে কর্মদক্ষ। পৃথিবীর অনেক দেশে কিন্তু এত বড় পার্সেন্ট কর্মদক্ষ লোক নেই। আমাদের যে যুবকেরা আছে এদেরকে তিনটি জিনিস দিতে হবে। একটা হল প্রযুক্তির জ্ঞান। প্রযুক্তি মানে সেইটা বড় প্রযুক্তি না, চলার জন্য যেইটা দরকার। আর যোগাযোগের জন্য দিতে হবে ভাষা। ইংরেজি ভাষার উপরে দক্ষতা তৈরি করতে হবে। দক্ষতা মানে খুব বড় স্পিকার হওয়ার দরকার নেই। তার প্রয়োজনটা সে যেন বলতে পারে। ল্যাঙ্গুয়েজের উপরে প্রযুক্তির উপরে এবং সে যে কাজটা করবে ভোকেশনাল ট্রেনিংটা।
তিনি বলেন, আমাদের বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে বেকার থাকার দরকার নেই। আমাদের ছোট ডিগ্রি দরকার। যেন কর্মক্ষম থাকে চাকরি থাকে। এই তিনটা জিনিস দিয়ে যদি আমাদের এই জনশক্তিকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেই, আমাদের বৈদেশিক যে আর্নিং বা রেমিট্যান্সটা কোন পর্যায়ে যে যাবে, এইটা কল্পনাও করা যায় না। এত বড় একটা সম্ভাবনা খাত হচ্ছে যে যুব সমাজ। সেইটা আমাদের করতে হবে। এই নতুন বাংলাদেশে আমাদেরকে এইভাবে ভাবতে হবে। যুবদেরকে তারুণ্যের ভাবনার কথা বলছি এদেরকে রাখতে হবে। আজকের এই দিনে তারুণ্যের এই মেলা এবং প্রদর্শনীর সাফল্য কামনা করছি। যুব সমাবেশের যে শোভাযাত্রার মেসেজটা আমি দিতে চাই ব্যক্ত হোক সারা জামালপুরে। জামালপুরের মানুষ অদম্য, তাদের স্পৃহা আকাশ চুম্বী। তাদের মননশীলতা অসীম। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। আমার বিশ্বাস জামালপুরের এই যুবরা একদিন বাংলাদেশে এবং বিশ্বের বুকে তরুণদের একটি রোল মডেল হয়ে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা করছি।
জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগমের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (সার্বিক) ইফতেখার ইউনুসের সঞ্চালনায় যুব সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবু, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া মামুন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার আহবায়ক ইসহাক হাসান ইখলাস প্রমুখ।
“এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই” তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সহকারী কমিশন (ভূমি) অফিস প্রসঙ্গে গিয়ে শেষ হয়। যুব সমাবেশ শেষে বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ ভূমি অফিস প্রাঙ্গণে একটি অর্জুন গাছের চারা রোপণ করেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আব্দুল হালিম ফুটবলের বিভিন্ন ডিসপ্লে প্রদর্শন করেন।
পাঁচ দিনব্যাপী তারুণ্যের উৎসব মেলায় পিঠাসহ দেশীয় নানাধরনের পণ্যের ১৭টি স্টল স্থান পেয়েছে। যুব সমাবেশ শেষে জামালপুরের শিল্পীরা একটি জারিগান পরিবেশন করে।