ঢাকা ০১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

যৌন নির্যাতিত ও পাচার হওয়া শিশুদের সুরক্ষায় সাংবাদিক দল গঠনের সভা অনুষ্ঠিত অপরাজেয় বাংলাদেশে

সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলারচিঠিডটকম এর সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রিত শিশুদের এবং যৌন নির্যাতিত হয়ে পাচার হওয়া শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা দিতে অপরাজেয় বাংলাদেশ জামালপুর স্নেহা আশ্রয়কেন্দ্র ফ্রিডম ফান্ড-ইউএসএ সহায়তা পেয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে অপরাজেয় বাংলাদেশ জামালপুর কেন্দ্রে সাংবাদিক দল গঠনের লক্ষ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জামালপুরের বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ও বাংলারচিঠিডটকম এর সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম। তিনি বলেন, অপরাজেয় বাংলাদেশের জন্য এই প্রকল্পটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাচার হওয়া শিশুরা বিশেষ করে মেয়েশিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এই জামালপুরে গত তিন মাসে ১১টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২২টি শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জামালপুর যৌনপল্লীতে যতগুলো মেয়ে এই পর্যন্ত এসেছে তারা কিন্তু শিশুবেলায় হয় ধর্ষণের শিকার হয়েছে, নয়তো পাচারের শিকার হয়েছে। অবশেষে ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার হয়ে তাদের ঠাঁই হয়েছে যৌনপল্লীতে। স্বাভাবিক ইচ্ছায় বা স্বাভাবিকভাবে কেউ সেখানে যায়নি।

তিনি আরও বলেন, মেয়েশিশুদের এই পরিস্থিতিতে পড়ার অন্যতম কারণ হলো অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন সেট। এটিও একটি ফাঁদ। পাচারকারীচক্র কিংবা ও যৌননির্যাতনকারীচক্রের সদস্যরা এই অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে মেসেনজারে চ্যাটিং করতে করতে কোনো মেয়েশিশুকে এমনভাবে মোহাবিষ্ট করে যে, সে রীতিমতো আসক্ত হয়ে যায়। একপর্যায়ে কৌশলে নানা প্রলোভনে পড়ে ধর্ষণের শিকারও হয়, তাদের অনেকেই ফাঁদে পড়ে পাচার হয়ে যায়। তাই ১৮ বছরের আগে শিশুদের মোবাইল ফোন সেট দেওয়া যাবে না। ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক মূল্যবোধ, পরিবারিক জীবনশিক্ষা সম্পর্কে তাদেরকে বোঝাতে হবে। সচেতনতা ছাড়া এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।

সভায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিক ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার যেমন সাংবাদিক, মা-বাবা, অভিভাবক, এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবাই মিলে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের সুরক্ষার জন্য জনসচেতনতার বিভিন্ন দিকগুলো যদি সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলেই শিশুরা সুরক্ষা পাবে। এই প্রকল্পটা যাতে সফল ও তথ্যবহুল হয় সেই দিক খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের সামাজিক ও মানবিক কল্যাণে এবং তাদের মানসিক বিকাশের জন্যে সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতামূলক ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।

এই প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন অপরাজেয় বাংলাদেশ জামালপুর স্নেহা আশ্রয়কেন্দ্রের সেন্টার ম্যানেজার মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ফ্রিডম ফান্ড-ইউএসএ এর অর্থায়ন ও সহযোগিতায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে যে সমস্ত শিশুরা পাচার হয় এবং পাচার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে, সেই সমস্ত শিশুদের উদ্ধার করে উন্নত সুরক্ষা দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এই কর্মসূচি মেয়াদ ধরা হয়েছে ১৫ মাস। কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে এর মেয়াদ আরও বাড়তে পারবে। এই প্রকল্পের আওতায় একটি সাংবাদিক দলও কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে যে সমস্ত শিশুরা পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। কিংবা সহিংসতার ঝুঁকিতে আছে এমন নয় বছর বয়স থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুদের যদি গোচরে এলে, কিংবা তাদের সম্পর্কে জানা থাকলে কিংবা এই জাতীয় শিশুদের সম্পর্কে তথ্য আসা মাত্র আপনারা সাংবাদিকেরা দয়া করে আমাদের জানাবেন।

তিনি আরও বলেন, এরপর আমরা সাংবাদিকসহ পুলিশ প্রশাসন এবং সরকারি পর্যায়ে যাদের যাদের লাগে। তাদেরকে নিয়ে ওই শিশুটাকে উদ্ধার করা হবে। ওই শিশুটি যদি শারীরিক মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় থাকে, তাকে আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রে এনে এই প্রকল্পের কাউন্সেলর তাকে কাউন্সেলিং করবে। তাকে যা যা সহায়তা দেওয়া দরকার দেওয়া হবে। এরপর ওই শিশুকে তার পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়ার যত প্রক্রিয়া আছে এবং পরিবারে থাকলেও যে সহায়তা দেওয়া লাগবে তাও এই প্রকল্প থেকে দেওয়া হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলারচিঠি ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা মনজু, তালাশ টাইমসের সহ-সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ টুডে’র সাংবাদিক এম সুলতান আলম, প্রতিদিনের সংবাদের সাংবাদিক মনজুরুল হক ও দৈনিক দিনকালের চিফ রিপোর্টার মাহমুদুল হাসান মুক্তা। এ সময় এই কর্মসূচির সাথে যুক্ত সমাজকর্মী আব্দুল মোতালেব হোসেন বাদল ও আফিয়া আফসানা, শিক্ষক মনিজা খাতুন, কাউন্সিলর ও কেইস ম্যানেজার মুসলিমা জান্নাত, প্রকল্পটির হাউজ মাদার ঝর্ণা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা

যৌন নির্যাতিত ও পাচার হওয়া শিশুদের সুরক্ষায় সাংবাদিক দল গঠনের সভা অনুষ্ঠিত অপরাজেয় বাংলাদেশে

আপডেট সময় ১১:৪৮:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রিত শিশুদের এবং যৌন নির্যাতিত হয়ে পাচার হওয়া শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা দিতে অপরাজেয় বাংলাদেশ জামালপুর স্নেহা আশ্রয়কেন্দ্র ফ্রিডম ফান্ড-ইউএসএ সহায়তা পেয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে অপরাজেয় বাংলাদেশ জামালপুর কেন্দ্রে সাংবাদিক দল গঠনের লক্ষ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জামালপুরের বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ও বাংলারচিঠিডটকম এর সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম। তিনি বলেন, অপরাজেয় বাংলাদেশের জন্য এই প্রকল্পটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাচার হওয়া শিশুরা বিশেষ করে মেয়েশিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এই জামালপুরে গত তিন মাসে ১১টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২২টি শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জামালপুর যৌনপল্লীতে যতগুলো মেয়ে এই পর্যন্ত এসেছে তারা কিন্তু শিশুবেলায় হয় ধর্ষণের শিকার হয়েছে, নয়তো পাচারের শিকার হয়েছে। অবশেষে ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার হয়ে তাদের ঠাঁই হয়েছে যৌনপল্লীতে। স্বাভাবিক ইচ্ছায় বা স্বাভাবিকভাবে কেউ সেখানে যায়নি।

তিনি আরও বলেন, মেয়েশিশুদের এই পরিস্থিতিতে পড়ার অন্যতম কারণ হলো অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন সেট। এটিও একটি ফাঁদ। পাচারকারীচক্র কিংবা ও যৌননির্যাতনকারীচক্রের সদস্যরা এই অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে মেসেনজারে চ্যাটিং করতে করতে কোনো মেয়েশিশুকে এমনভাবে মোহাবিষ্ট করে যে, সে রীতিমতো আসক্ত হয়ে যায়। একপর্যায়ে কৌশলে নানা প্রলোভনে পড়ে ধর্ষণের শিকারও হয়, তাদের অনেকেই ফাঁদে পড়ে পাচার হয়ে যায়। তাই ১৮ বছরের আগে শিশুদের মোবাইল ফোন সেট দেওয়া যাবে না। ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক মূল্যবোধ, পরিবারিক জীবনশিক্ষা সম্পর্কে তাদেরকে বোঝাতে হবে। সচেতনতা ছাড়া এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।

সভায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিক ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার যেমন সাংবাদিক, মা-বাবা, অভিভাবক, এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবাই মিলে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের সুরক্ষার জন্য জনসচেতনতার বিভিন্ন দিকগুলো যদি সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলেই শিশুরা সুরক্ষা পাবে। এই প্রকল্পটা যাতে সফল ও তথ্যবহুল হয় সেই দিক খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের সামাজিক ও মানবিক কল্যাণে এবং তাদের মানসিক বিকাশের জন্যে সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতামূলক ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।

এই প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন অপরাজেয় বাংলাদেশ জামালপুর স্নেহা আশ্রয়কেন্দ্রের সেন্টার ম্যানেজার মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ফ্রিডম ফান্ড-ইউএসএ এর অর্থায়ন ও সহযোগিতায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে যে সমস্ত শিশুরা পাচার হয় এবং পাচার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে, সেই সমস্ত শিশুদের উদ্ধার করে উন্নত সুরক্ষা দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এই কর্মসূচি মেয়াদ ধরা হয়েছে ১৫ মাস। কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে এর মেয়াদ আরও বাড়তে পারবে। এই প্রকল্পের আওতায় একটি সাংবাদিক দলও কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে যে সমস্ত শিশুরা পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচার হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। কিংবা সহিংসতার ঝুঁকিতে আছে এমন নয় বছর বয়স থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুদের যদি গোচরে এলে, কিংবা তাদের সম্পর্কে জানা থাকলে কিংবা এই জাতীয় শিশুদের সম্পর্কে তথ্য আসা মাত্র আপনারা সাংবাদিকেরা দয়া করে আমাদের জানাবেন।

তিনি আরও বলেন, এরপর আমরা সাংবাদিকসহ পুলিশ প্রশাসন এবং সরকারি পর্যায়ে যাদের যাদের লাগে। তাদেরকে নিয়ে ওই শিশুটাকে উদ্ধার করা হবে। ওই শিশুটি যদি শারীরিক মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় থাকে, তাকে আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রে এনে এই প্রকল্পের কাউন্সেলর তাকে কাউন্সেলিং করবে। তাকে যা যা সহায়তা দেওয়া দরকার দেওয়া হবে। এরপর ওই শিশুকে তার পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়ার যত প্রক্রিয়া আছে এবং পরিবারে থাকলেও যে সহায়তা দেওয়া লাগবে তাও এই প্রকল্প থেকে দেওয়া হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলারচিঠি ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা মনজু, তালাশ টাইমসের সহ-সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ টুডে’র সাংবাদিক এম সুলতান আলম, প্রতিদিনের সংবাদের সাংবাদিক মনজুরুল হক ও দৈনিক দিনকালের চিফ রিপোর্টার মাহমুদুল হাসান মুক্তা। এ সময় এই কর্মসূচির সাথে যুক্ত সমাজকর্মী আব্দুল মোতালেব হোসেন বাদল ও আফিয়া আফসানা, শিক্ষক মনিজা খাতুন, কাউন্সিলর ও কেইস ম্যানেজার মুসলিমা জান্নাত, প্রকল্পটির হাউজ মাদার ঝর্ণা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।