সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় জামালপুর জেলায় নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলাম (পিপিএম-সেবা) বলেছেন, মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখনই সে আল্লাহর নাম নেয়। তারপর সে পুলিশের কথা মনে করে। সমাজ বিনির্মাণে পুলিশের দরকার আছে। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে সাংবাদিকদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। আপনারা দেখেন শুনেন এবং লিখেন। আপনাদের সাথে অবশ্যই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।
২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকেলে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে জামালপুর প্রেসক্লাবসহ জেলার বেশ কয়েকটি সাংবাদিক সংগঠনের সাথে যুক্ত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ সব কথা বলেন জামালপুরে নবাগত পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, সুন্দর লেখনিতে সত্যটাকে প্রকাশের মাধ্যমে সাংবাদিক তার সঠিক দায়িত্বটুকু পালন করেন। আর প্রশাসনিক আইন ও নানান বাধ্যবাধকতার মধ্যে থেকে পুলিশকে কাজ করতে হয়। বৈষ্যম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে পুলিশ এবং সাংবাদিকের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
পুলিশ সুপার বলেন, আমার ভালো লাগলো যে, অনেক সাংবাদিক আছেন এখানে। আপনারাই সমাজের সমস্যাগুলো দেখেন। সেগুলো সমাধানের জন্য আপনাদের মধ্যে বেশ তাড়না আছে। আপনারা যদি সাংবাদিক না হতেন তাহলে সাধারণভাবে মোকাবেলা করতেন। কষ্ট পেতেন। কিছুক্ষণ পর ভুলে যেতেন। আপনারা কিন্তু এভাবে সমাজের সমস্যাগুলো এমন ফোরামে তুলে ধরতে পারতেন না। আমি এবং আমার সহকর্মীরা সর্বোচ্চ দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করবো সমস্যা সমাধানের জন্য।
সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পরে পুলিশের মনোবলে ঘাটতি রয়েছে যেটা আমরা জানি। আপনাদের এই জনপদে তেমন সমস্যা হয়নি। পুলিশ আসলে তার যখন একজন সহকর্মী কষ্ট পায়, মারা যায় বা সমস্যা হয়, সেটি তাকে কোন না কোনভাবে তাড়িত করে। সেই আন্দোলনে যারা যারা নিহত হয়েছেন সমস্ত ছাত্র-জনতা, আমাদের পুলিশ সবার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

পুলিশ সুপার বলেন, যে যে জায়গায় পুলিশের ঘাটটি রয়েছে। লিমিটেশন রয়েছে। পুলিশের কোন সমস্যা আছে। সবকিছুই তুলে ধরবেন। আমাদের কোন পুলিশ সদস্যের সম্পর্কে কোন অভিযোগ পান তাহলে আমাকে জানাবেন। অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের জানাবেন। আমাদের উপর আস্থা রাখেন। আমরা অবশ্যই সমাধান করে দিবো।
তিনি বলেন, এই জামালপুর জেলার সঙ্গে আমার একটা দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আছে। ২০০০ সালের দিকে সরিষাবাড়ীর চরশিশুয়া গ্রামে আমার এক বন্ধুর বাড়িতে এসেছিলাম। তখনই আমি এই জেলার মানুষের আচার-আচরণ, তাদের চিন্তা চেতনায় খুব মুগ্ধ হয়েছি। আপনারা যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর কথা বলেছেন। আপনারা অবশ্যই আমাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। যে সমস্ত জায়গায় বৈষম্য আছে, মাদক, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, যেকোন অপরাধ, সাইবার অপরাধ, কিশোর গ্যাংয়ের কথা উঠেছে। সেগুলো নিয়ে সঠিক তথ্য দিবেন। আমরা অবশ্যই সেগুলো সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাবো। এখানে ট্রাফিকের কথা এসেছে। সেটাও আমারা দেখবো।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন প্রসঙ্গ টেনে পুলিশ সুপার বলেন, এতবড় একটা পরিবর্তন হয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এটা আমি আপনি সবাই জানি। এই পরিবর্তনের পরে আমাদের অনেক প্রত্যাশা থাকবে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন সংগ্রাম হচ্ছে এটা ঠিক। এছাড়া আমাদের পুলিশের মধ্যে অনেক সমস্যা আছে। সেই সমস্যাগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয়, সচিব ও আইজি মহোদয়ের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, যে সমস্ত জায়গায় পুলিশ মানুষকে হয়রানি করে। সেই বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স থাকবে। আমরা এগুলো হতে দিবো না। আমরা এসেছি এই জনপদের মানুষকে সহযোগিতা করতে। তাদের জন্য কাজ করতে। আমরা তাদের সমস্যা সৃষ্টির জন্য আসিনি।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার বলেন, আমরা এই দেশেরই মানুষ। আপনারা অল্প সময়ের মধ্যে একটা ছোট বিষয়কে সুন্দর করে মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে পারেন। যেটা আমাদের জন্যই দরকারি। আমাদের যেখানে ভুলত্রুটি আছে সেগুলো ধরিয়ে দিবেন। আপনারা পাবলিক প্লেসে না বলে আমাকে যদি একাকি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারেন, জানাতে পারেন, আমরা সেগুলোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিবো। সামনের দিনগুলোতে আমরা এক সাথে কাজ করবো। আমরা যদি সাংবাদিক, পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন যারা আছেন সবাই যদি এক সাথে কাজ করি সমাজটাকে বিনির্মাণ করতে। তাহলেই আপনাদের এই জনপদ সুন্দর ও শান্তিপ্রিয় হয়ে উঠবে।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আনোয়ার ও সোহেল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় জামালপুর জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও চ্যানেল আই টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক হাফিজ রায়হান সাদা, দৈনিক আলোচিত জামালপুরের সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রেজনু, দৈনিক মুক্তআলোর সম্পাদক নুরল আলম সিদ্দিকী, দৈনিক সচেতনকণ্ঠের সম্পাদক মো. বজলুর রহমান, বাংলারচিঠিডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা মনজু, দৈনিক সমকালের সাংবাদিক মো. আনোয়ার হোসেন মিন্টু, দৈনিক মানবকণ্ঠের সাংবাদিক জাকারিয়া জাহাঙ্গীর, দেশটিভির সাংবাদিক মেহেদী হাসান, দৈনিক ভোরের ডাকের শরিফুল ইসলাম ঝোকন, দৈনিক পল্লীকণ্ঠ প্রতিদিনের সাংবাদিক দিলরুবা ইয়াসমিন রুমা প্রমুখ। মতবিনিময় সভা শেষে নবাগত পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলামকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক হাফিজ রায়হান সাদা।
মতবিনিময় সভায় জামালপুর প্রেসক্লাবের সকল সদস্য, সাংবাদিক ও সহযোগী সদস্যবৃন্দ এতে অংশ নেন। এছাড়াও অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, জামালপুর মডেল প্রেসক্লাব, ই-প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্য, কর্মকর্তা ও সাংবাদিকেরা এই মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
মোস্তফা মনজু : জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম 



















