হামাসের আকস্মিক হামলার পর যুদ্ধে ইসরাইল ও গাজা

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক

যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইসরাইল ও গাজা। ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনী সংগঠন হামাস ইসরাইলে আকস্মিক বড়ো ধরনের ও সর্বাত্মক হামলা চালানো শুরু করে।

জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের সকল আস্তানাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার অঙ্গীকার করেছেন।

এদিকে হামাসের হামলার পর গাজায় একের পর এক বিমান হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত গাজায় নিহত মানুষের সংখ্যা ২৩২ এরও বেশি দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ১৭শ লোক। খবর এএফপি’র।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবরুদ্ধ গাজার সাতটি এলাকার বাসিন্দাদের ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলেছে।

ইতোমধ্যে অনেক পরিবার গাজায় ঘর ছেড়ে পালানো শুরু করেছে। তারা জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে।

ফিলিস্তিনী গোষ্ঠী হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে আকাশ, নৌ ও স্থল হামলা চালায়। তাদের সশস্ত্র যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ঢুকে পড়লে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। ইসরায়েল বলছে, হামাসের হামলায় ২৫০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।

এদিকে নেতানিয়াহু হতবিহ্বল জাতিকে বলেছেন, আমরা যুদ্ধে আছি।

তিনি গাজাবাসীকে বলেন, আমি গাজাবাসীকে বলছি, এ মুহূর্তে গাজা ছাড়ুন। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে গাজার সর্বত্র অভিযান চালাবো।

তিনি সতর্ক করে বলেন, এই নরকের শহরে যেখানেই হামাস রয়েছে সেখানেই আমরা হামলা চালাব। তাদের সকল আস্তানা গুঁড়িয়ে দেবো।

এদিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে, গাজায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে।

অন্যদিকে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বন্দুকধারীদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘর্ষ অব্যাহত থাকার খবর পাওয়া গেছে।

হামাসের নেতারা বলেছেন, গাজায় শুরু হওয়া হামলা দখলকৃত পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এদিকে, গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা গতকাল শনিবার সারা রাত অন্ধকারে কাটিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ঘনবসতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করছে। এসব হামলার পাল্টা জবাবে রকেট ছুড়ছে হামাস। তবে সেগুলোর বেশির ভাগই মাঝ আকাশে প্রতিহত করা হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনে ২৩২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১ হাজার ৭০০ জন।

হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপপ্রধান সালেহ আল-আরোরি বলেছেন, হামাস ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অনেক ইসরায়েলিকে বন্দী করে রেখেছে। এসব বন্দীর বিনিময়ে ইসরায়েলে কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করতে পারবে হামাস। আরোরি দবি করেছেন, হামাস অনেক ইসরায়েলি সেনাকে অপহরণ করেছে ও হত্যা করেছে।

হামাস ইসরায়েলে এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’। দখলদার ইসরায়েলের হাত থেকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাই এ অভিযানের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের এ সংগঠনটি।

এদিকে রোববার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠক ডেকেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন এ মিত্রের প্রতি দৃঢ় ও অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অন্য কেউ যাতে ইসরাইলের প্রতি শত্রুতা করতে না পারে সে বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনাকারী যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইসরাইলের প্রতি জোর সমর্থন ব্যক্ত করে হামাসের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফর ডার লেইন হামাসের এ হামলাকে সবচেয়ে ঘৃণ্য আকারের সন্ত্রাস বলে বর্ণনা করেছেন।

তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হামাসকে সমর্থন করে তাদের এ পদক্ষেপে তিনি গর্বিত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। লেবাননী গ্রুপ হিজবুল্লাহ হামাসের হামলাকে ‘নায়কোচিত অভিযান’ বলে বর্ণনা করেছে।

জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শান্তিদূত টর ওয়েনেসল্যান্ড একটি বিপদজনক পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করে সবপক্ষকে পিছু হটার আহ্বান জানিয়েছেন।