আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলো না বাংলাদেশ

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : সর্বশেষ সিরিজে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে পারলেও, এবার আয়ারল্যান্ডকে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলো না বাংলাদেশ।

৩১ মার্চ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচ হারলেও তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলো টাইগাররা। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টি আইনে ২২ রানে ও দ্বিতীয়টি ৭৭ রানে জিতেছিলো বাংলাদেশ।

প্রথমে ব্যাট করে শামীম হোসেনের হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৯ দশমিক ২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১২৪ রান করে বাংলাদেশ। ৪২ বলে ৫১ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন শামীম হোসেন। জবাবে অধিনায়ক পল স্টার্লিংয়ে ঝড়ো হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৪তম ওভারেই জয় নিশ্চিত করে আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের মাটিতে টাইগারদের বিপক্ষে যেকোন ফরম্যাটে প্রথম জয়ের স্বাদ পেলো আইরিশরা। স্টার্লিং ৪১ বলে ৭৭ রান করেন।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এবারের সিরিজে প্রথম টস জিতে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্বান্ত নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি থেকে মেহেদি হাসান মিরাজ-মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় শরিফুল ইসলাম ও রিশাদ হোসেনকে একাদশে অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ।

ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ১টি করে বাউন্ডারিতে ৯ রান তোলেন দুই বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আয়ারল্যান্ড পেসার মার্ক অ্যাডায়ারের বলে আউট হন ৫ রান করা লিটন। তৃতীয় ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তকে ৪ রানে বিদায় দেন অফ-স্পিনার হ্যারি টেক্টর।

এরপর পাওয়ার প্লেতে আরও ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। চতুর্থ ওভারে রনিকে ১৪ রানে শিকার করেন পেসার কার্টিস ক্যাম্পার। ১০ বল খেলে ৩টি চার মারেন রনি। ষষ্ঠ ওভারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ৬ রানে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান অ্যাডায়ার। এতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৪১ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সপ্তম ওভার তাওহিদ হৃদয়কে ১২ রানে শিকার করে বাংলাদেশের চাপ বাড়ান লেগ স্পিনার বেন হোয়াইট। হৃদয় ফেরার পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শামীম ও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা রিসাদ। ১৬ বলে ২০ রান তুলে নবম ওভারে বিচ্ছিন্ন হন তারা। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আয়ারল্যান্ডের স্পিনার ম্যাট হামফ্রেসের করা দশম ওভারের প্রথম বলে শিকার হন ৮ রান করা রিশাদ। ১ বল পর তাসকিন আহমেদকে শূন্য হাতে বিদায় দেন হামফ্রেস। ৬১ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।

কিন্তু অষ্টম উইকেটে নাসুম আহমেদকে নিয়ে ৩৪ বলে ৩৩, নবম উইকেটে শরিফুলের সাথে ১০ বলে ১০ ও দশম উইকেটে হাসান মাহমুদের সাথে ১৫ বলে ২০ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে সম্মানজনক সংগ্রহ এনে দেন শামীম।

শেষ উইকেট জুটিতে ১৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন শামীম। ৪২ বলে হাফ-সেঞ্চুরির পর শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হন শামীম। ৪ বল বাকী রেখে ১২৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪২ বলে ৫১ রান করেন শামীম। ২ রানে অপরাজিত থাকেন হাসান। আয়ারল্যান্ডের অ্যাডায়ার ৩টি ও হামফ্রেস ২টি উইকেট নেন।

১২৫ রানের টার্গেটে আয়ারল্যান্ডকে ভালো শুরু করতে দেননি পেসার তাসকিন। তৃতীয় ওভারেই রস অ্যাডায়ারকে ৭ রানে বিদায় করেন তিনি। ষষ্ঠ ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই উইকেট তুলে নেন পেসার শরিফুল ইসলাম। লরকান টাকারকে ৪ রানে আউট করেন তিনি। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৪৭ রান তুলে আয়ারল্যান্ড।

তৃতীয় উইকেটে আয়ারল্যান্ডের জয়ের পথ মসৃণ করেন অধিনায়ক পল স্টার্লিং ও হ্যারি টেক্টর। বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ৩১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন স্টার্লিং। অর্ধশতকের পর ১১তম ওভারে শরিফুলের বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২০ রান তোলেন স্টার্লিং।

১৩তম ওভারে তৃতীয়বারের মত আক্রমনে এসে স্টার্লিংকে শিকার করেন স্পিনার রিশাদ। তৃতীয় উইকেটে টেক্টরের সাথে ৪২ বলে ৬৮ রান যোগ করেন স্টার্লিং। ১০টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪১ বলে ৭৭ রান করেন আইরিশ দলপতি।

স্টার্লিং ফেরার পর কার্টিস ক্যাম্ফারকে নিয়ে বাকী ১৭ রান তুলে ১৪ ওভারেই আয়ারল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন টেক্টর। ক্যাম্ফার ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯ বলে ১৬ ও টেক্টর ১৮ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের তাসকিন-শরিফুল ও রিশাদ ১টি করে উইকেট নেন।

আগামী ৪ এপ্রিল থেকে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড।

স্কোর কার্ড :
লিটন ক ডকরেল ব মার্ক অ্যাডায়ার ৫
রনি ক মার্ক অ্যাডায়ার ব ক্যাম্ফার ১৪
শান্ত ক ক্যাম্ফার ব টেক্টর ৪
সাকিব ক হোয়াইট ব অ্যাডায়ার ৬
হৃদয় ক টেক্টর ব হোয়াইট ১২
শামীম ক ডকরেল ব হ্যান্ড ৫১
রিসাদ বোল্ড ব হামফ্রেসে ৮
তাসকিন ক ক্যাম্ফার ব হামফ্রেসে ০
নাসুম ক স্টার্লিং ব ডেলানি ১৩
শরিফুল ক টাকার ব মার্ক অ্যাডায়ার ৫
হাসান অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (বা-১, ও-৩) ৪
মোট (অলআউট, ১৯.২ ওভার) ১২৪
উইকেট পতন : ১/৯ (রনি), ২/১৮ (লিটন), ৩/২৪ (হৃদয়), ৪/৪১ (রনি), ৫/৪১ (লিটন), ৬/৬১ (হৃদয়), ৭/৬১ (রনি), ৮/৯৪ (লিটন), ৯/১০৪ (হৃদয়), ১০/১২৪ (হৃদয়)।
আয়ারল্যান্ড বোলিং :
হ্যান্ড : ২.২-০-১৫-১,
মার্ক অ্যাডায়ার : ৪-০-২৫-৩,
টেক্টর : ৪-০-২৮-১ (ও-১),
ক্যাম্ফার : ৪-০-২৩-,
হোয়াইট : ২-০-১৫-১ (ও-১),
হামফ্রেসে : ২-০-১০-২,
ডেলানি : ১-০-৭-১ (ও-১)।
আয়ারল্যান্ড ইনিংস :
স্টার্লিং ক শান্ত ব রিশাদ ৭৭
রস অ্যাডায়ার বোল্ড ব তাসকিন ৭
টাকার ক লিটন ব শরিফুল ৪
টেক্টর অপরাজিত ১৪
ক্যাম্ফার অপরাজিত ১৬
অতিরিক্ত (লে বা-১, ও-৭) ৮
মোট (৩ উইকেট, ১৪ ওভার) ১২৬
উইকেট পতন : ১/১৭ (অ্যাডায়ার), ২/৪১ (টাকার), ৩/১০৯ (স্টার্লিং)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৪-০-২৮-১ (ও-১),
সাকিব : ২-০-১৫-০,
হাসান : ২-০-২৬-০ (ও-২),
শরিফুল : ২-০-২৫-১,
নাসুম : ১-০-১২-০,
রিশাদ : ৩-০-১৯-১।
ফল : আয়ারল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : পল স্টার্লিং(আয়ারল্যান্ড)
সিরিজ সেরা: তাসকিন আহমেদ(বাংলাদেশ)
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ।