জামালপুরে বাল্যবিয়েমুক্ত গ্রাম প্রতিষ্ঠায় এপির লাগসই উদ্যোগ

জামালপুরে বাল্যবিয়েমুক্ত গ্রাম প্রতিষ্ঠায় শরিফপুর ইউপি চেয়ারম্যানসহ ইউপি সদস্য এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে সভা অনুষ্ঠিত হয়।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: ‘আমার জীবন আমার স্বপ্ন’ বাস্তবায়নে কিশোর, কিশোরীদের মাঝে জাগরণ তৈরি এবং এলাকাবাসীর ঐক্যবদ্ধ আওয়াজে সামাজিক ব্যাধি বাল্যবিয়েমুক্ত গ্রাম প্রতিষ্ঠায় জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রাম (এপি) এর উদ্যোগে লাগসই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে গ্রাম নির্বাচন করে জরিপ ও গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সাথে সভা, কিশোর, কিশোরী দলের সাথে সভা, ব্যক্তি পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেছে জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রাম।

জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর, শরিফপুর এবং জামালপুর পৌরসভার একটি করে গ্রাম নির্বাচনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে বাল্যবিয়েমুক্তকরণে উন্নয়ন সংঘের কর্মীরা কাজ করছে।

জানা যায়, ১১ থেকে অনূর্ধ ১৮ মেয়ে এবং ১৪ থেকে অনূর্ধ ২১ বছর বয়সী মেয়েদের তালিকা সংগ্রহ করা হবে। যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা এবং তাদের সহায়তা নিশ্চতকরণে যোগাযোগ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা জানান।

এসংক্রান্ত এলাকায় আলাদা একটি দল গঠন করা হবে যারা ওয়াচডগ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ এবং দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের কাছে তথ্য সরবরাহ করে কাজের জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা হবে। নিবিড় পরিবীক্ষণ, সহায়ক পরিদর্শন এবং কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করে বাল্যবিয়ে রোধে ভূমিকা রাখা হবে। প্রতিমাসে সভায় তালিকাভুক্ত কিশোর, কিশোরীদের অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা এবং তাদের সাথে নিয়মিত কাউন্সিলিং করা হবে।

বাল্যবিয়েমুক্ত গ্রাম প্রতিষ্ঠায় এলাকার কিশোর, কিশোরী ও অভিভাবকদের সাথে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক প্রচার, প্রচারণা চালানো, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও অনুষ্ঠানে বাল্যবিয়েবিরোধী বক্তব্য তুলে ধরা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন করা, উঠান বৈঠক, অভিভাবক সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে গ্রাম জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা হবে বলে উন্নয়ন সংঘের এপি ব্যবস্থাপক মিনারা পারভীন জানান। পাশাপাশি প্রতিটি কাজের প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ। সামাজিক নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা।

উল্লেখ হংকং সরকারের আর্থিক সহায়তায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়ন সংঘ জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে। দীর্ঘমেয়াদী ও বহুমাত্রিক এপির মূল ফোকাস হচ্ছে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে তরান্বিত করা। এসব তথ্য জানিয়ে ওয়ার্ল্ড ভিশনের জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক সাগর ডি কস্তা বলেন, শিশুদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্যে খানার স্থায়ী আয়ের উৎসে সহযোগিতা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, ওয়াস, শিশু সুরক্ষা এবং অংশগ্রহণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের অবস্থা উন্নতির লক্ষ্যে জামালপুরে এরিয়া প্রোগ্রাম (এপি) ১০ বছর মেয়াদী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ থেকে সকল পর্যায়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাশাপাশি অন্যান্য এনজিওদের এ কাজে সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখার ব্যবস্থা করা হবে। নিকাহ নিবন্ধক (কাজী), ইমাম, মৌলবী, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মাতাব্বরসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার মানুষদের যুক্ত করা হবে। সুস্থধারার সংস্কৃতি চর্চা, বিনোদন, ক্রীড়ানুষ্ঠান আয়োজন করার মাধ্যমে কিশোর, কিশোরীদের মানসিক শক্তি অর্জন এবং নিজের স্বপ্নবুননে আগ্রহী করে গড়ে তোলা হবে। অপসংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে যাতে ভেসে না যায় সে জন্য ওদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করা হবে।