রানির কফিন এক নজর দেখার জন্য লন্ডনের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের ভিড়

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ ১৪ সেপ্টেম্বর লন্ডনে হাজার হাজার লোক শ্রদ্ধা জানানোর আগে রাজা চার্লস তৃতীয় তাঁর মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কফিনের একটি শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

স্কটল্যান্ডে তার মৃত্যুর ছয় দিন পর রানি এলিজাবেথের মরদেহ তার বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে ওয়েস্টমিনিস্টার হলে নিয়ে যাওয়া হবে। ১৯ সেপ্টেম্বর রানির শেষকৃত্যের আগ পর্যন্ত চারদিন তার মরদেহ সেখানে রাখা হবে।

রাজধানীর রাস্তা দিয়ে কফিন নিয়ে যাওয়ার সময় রাজা এবং রাজপরিবারের অন্যান্য প্রবীণ সদস্যরা শবযানের পিছনে নীরবে হাঁটবেন এবং তারপর ওয়েস্টমিনিস্টার পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সের ১২ শতকের ক্যাভারনস হলে পৌঁছাবেন।

জনসাধারণকে বিকাল ৫টা (১৬০০ জিএমটি) থেকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। শোকাহতদের ইতোমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে যে তাদের চব্বিশ ঘণ্টা পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষা করতে হতে পারে। দর্শকদের এই ভিড় ৫ মাইল বা ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।

রানির শবযত্রা দেখতে সবার আগে ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে সম্মুখ অবস্থানে থাকা শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভুত ৫৬ বছর বয়সী প্রশাসনিক সহকারী ভেনেসা নান্থাকুমারান বলেছেন, ‘এটি আবেগপ্রবণ মুহূর্ত হতে চলেছে এবং আমি জানি না প্রথম একজন হিসাবে সেখানে গিয়ে আমি কেমন অনুভব করব।’

‘আপনাকে ধন্যবাদ জানানো আমাদের কর্তব্য। এটি হৃদয় থেকে প্রার্থনা হতে চলেছে। এটি খুব দুঃখজনক, শান্ত এবং দুর্বহ বেদনাদায়ক হতে চলেছে।’

প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের মুখপাত্রের মতে, ২ লাখের বেশী লোক এই শবযাত্রায় শামিল হবে। ২০০২ সালে রানির মায়ের মৃত্যুর পর তার কফিনে শ্রদ্ধা জানাতে ২ লাখের মতো লোক সমবেত হয়েছিল। কঠোর নিয়ম মেনে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে এই শোক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সরকার লোকেদের ‘উপযুক্ত পোশাক’ পরার পরামর্শ দিয়েছে এবং তাদের মোবাইল ফোনগুলোতে চার্জ রাখার জন্য বহনযোগ্য ব্যাটারি প্যাক আনতে বলেছে -এটি একটি ইঙ্গিত দেয় যে রানির কফিন এক নজর দেখার জন্য লোকদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে।

রাজধানীতে হোটেলের কক্ষগুলো খুঁজে পাওয়া ক্রমশই কঠিন হচ্ছে। এমনকি নিম্নমানের হোটেল রুমগুলোতে প্রতি রাতের ভাড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ পাউন্ডে উঠেছে। পাশাপাশি পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ এই ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে লন্ডন শহরটিতে চলাচল স্বাভাবিক রাখা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য চাপের মধ্যে রয়েছেন।

লন্ডন পুলিশ বাহিনীর নবনিযুক্ত প্রধান মার্ক রাউলি ১৩ সেপ্টেম্বর স্কাই নিউজকে বলেছেন ‘এটি মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা অনেক, বহু বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

প্রয়াত ৯৬ বছর বয়সী রানির মৃতদেহ ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্কটিশ রাজধানী এডিনবার্গ থেকে একটি আরএএফ বিমানে লন্ডনে নিয়ে আসা হয়। যিনি ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডে তার বালমোরাল এস্টেটে ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ মারা যান।

বুধবারের শোকযাত্রায় গত সোমবার এডিনবার্গে অনুরূপ অনুষ্ঠানের প্রতিফলন ঘটাবে। সেখানে তার কফিন যখন শহরের নিস্তব্ধ রাস্তার মধ্য দিয়ে সেন্ট জাইলস ক্যাথেড্রালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন হাজার হাজার লোক সেই শোকযাত্রায় শামিল হয়েছিল।

স্কটিশ সরকার জানিয়েছে সেখানে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৩৩,০০০ জন লোক রানির কফিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন বলেছেন, ‘স্কটল্যান্ড আমাদের স্কটস রানিকে একটি দুঃখজনক, কিন্তু স্নেহপূর্ণ বিদায় দিয়েছে। আমরা তাকে আর তার মতো কখনো দেখতে পাব না।’

উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ড থেকে এডিনবার্গ সফররত লিন টেম্পলটন মঙ্গলবার কফিন শবযাত্রার পর এএফপি’কে বলেন, ‘এটি ইতিহাসের অংশ আমরা এটি আর কখনও দেখতে পাব না।’

স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের পর, চার্লস মঙ্গলবার রাজা হিসেবে প্রথমবারের মতো উত্তর আয়ারল্যান্ড সফর করে যুক্তরাজ্যের চারটি দেশে তার সফর অব্যাহত রাখেন।

শুক্রবার তিনি ওয়েলস সফরে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

৭৩ বছর বয়সী নতুন রাষ্ট্রপ্রধান তার মায়ের মৃত্যুতে তার মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রায়শই আন্তরিক প্রতিক্রিয়ার জন্য ব্রিটিশ মিডিয়াতে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছেন যা ব্রিটেনে জনসংখ্যার একটি বিরল মুহুর্তের দিকে নিয়ে গেছে।

১৯৯৭ সালের গাড়ি দুর্ঘটনায় তার প্রাক্তন স্ত্রী ডায়ানার মৃত্যুর পর থেকে তিনি তার জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করেছেন এবং তার সাম্প্রতিক দিনগুলিতে আরো বেড়েছে। মঙ্গলবার একটি নতুন সমীক্ষায় এ কথা বলা হয়।

রানির কফিনের শোভাযাত্রাটি ঠিক বিকাল ২টা ২২ মিনিটে (১৩২২ জিএমটি) শুরু হবে এবং এতে রানির পরিবারের সকলেই উপস্থিত থাকবেন।

বিগ বেন রানির বয়সের সমান ৯৬ বার ঘণ্টা বাজাবে এবং হাইড পার্ক থেকে কামানের গোলা ছুঁড়ে গান স্যালুট জানানো হবে।