জাতীয় ঐক্যের সরকার চান শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ দেশব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সরকার গঠনের আহ্বান জানালেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গুটাবায়ে রাজাপাকসে। এর আগে দেশটির সব মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর তার কাছে নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। সোমবার সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

রাজাপাকসের মিডিয়া অফিস বিবৃতির মাধ্যমে জানায়, বর্তমানে জাতীয় প্রয়োজনেই শ্রীলংকায় একটি ঐক্যের সরকার দরকার। এখন সময় এসেছে দেশের সব নাগরিক ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক হয়ে কাজ করার।

সেখানে বলা হয়, চলমান জাতীয় সংকট মোকাবিলায় পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করা সব রাজনৈতিক দলকে একত্রে কাজ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

এদিকে সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় পদত্যাগ করেছেন লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অজিথ নিভার্ড ক্যাবরাল। টুইট বার্তার মাধ্যমে ক্যাবরাল জানান, পদত্যাগপত্র এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন কিনা সে ব্যাপারে স্পষ্টভাবে এখনো কিছুই জানানো হয়নি।

এরা আগে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ছাড়া মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্য তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। রোববার দেশটির শিক্ষামন্ত্রী দিনেশ গুণবর্ধন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নিজের ছেলে নামাল রাজাপাকসে। টুইট বার্তার মাধ্যমে তিনি দাবি করে বলেন, বর্তমানে এই পদক্ষেপই একমাত্র দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সিদ্ধান্ত নিতে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীকে সাহায্য করবে।

উল্লেখ্য, দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে এবার সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশটি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে এসেছে তলানিতে, যার কারণে অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রীও আমদানি করতে পারছে না দেশটি। দেখা দিয়েছে জ্বালানি, তেল, খাদ্য ও ওষুধের সংকট। করোনা মহামারির কারণে ধস নেমেছে দেশটির প্রধান খাতগুলোর অন্যতম পর্যটনে। কমেছে বৈদেশিক রেমিট্যান্সও। এ দুটি খাতই ছিল দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূলত সরকারের অব্যবস্থাপনা, সরকার পরিচালনায় ভুল নীতি, বেহিসেবি ঋণ, কর মওকুফ ইত্যাদি কারণে দেশটির অর্থনীতির এ দুর্দশা। এর ওপর শেষ পেরেক ঠুকেছে কভিড-১৯ মহামারি।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে জ্বালানির অভাবে প্রায় এক মাস ধরে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন থাকছে শ্রীলংকার শহরগুলো। গ্রামের অবস্থা আরো শোচনীয়। রাস্তাঘাটেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। একই কারণে প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল দেশটির গণপরিবহন ব্যবস্থা। কাগজের অভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে পরীক্ষা, সংকট দেখা দিয়েছে পত্রিকা প্রকাশ করা নিয়েও।

সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ ও আর্থিক সংস্থার কাছে অর্থসহায়তা বা ঋণ চেয়েছে শ্রীলংকা। যদিও চলতি বছরই আগের নেয়া ৭০০ কোটি ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে দেশটির। সেটারই কোনো সংস্থান এখনো হয়নি। এর মধ্যে আবারো ঋণের সন্ধান শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল জানা গেছে, শ্রীলংকাকে ৪০ হাজার টন চাল পাঠাচ্ছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। নয়াদিল্লির কাছ থেকে কলম্বোর ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পর ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এ সিদ্ধান্ত নেন।সূত্র:ডেইলি বাংলাদেশ।