জামালপুরে শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতি নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে এপির মতবিনিময়

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: খাদ্যের কথা ভাবতে হলে পুষ্টির কথা ভাবতে হবে। এ চিন্তা সামনে রেখে এবং অপুষ্টির হাত থেকে শিশুদের রক্ষার স্বার্থে জামালপুরে উন্নয়ন সংঘ ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাস্তবায়নাধীন এরিয়া প্রোগ্রাম (এপি) এর অন্যান্য কাজের পাশাপাশি পুষ্টি উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এলাকায় ৬ থেকে ৩৬ মাস বয়সী ৫ হাজার ২৩৩ জন শিশুর পুষ্টি পরিস্থিতি নিয়ে জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয়। জরিপ শেষে শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতির বর্তমান ফলাফল নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময় সভায় আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস।

৭ ফেব্রুয়ারি জামালপুর পৌরসভাধীন পাথালিয়া বীক্ষণ কোচিং সেন্টারে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জামালপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম শিমুল। এতে অন্যান্যের মাঝে আলোচনায় অংশ নেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা আনিছুর রহমান, উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, এপি ব্যবস্থাপক মিনারা পারভীন, হযরত শাহজামাল (রহ.) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সংঘের এপির সিডিও মারিও মুক্তি মন্ডল। মতবিনিময় সভায় এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারী, পুরুষ ও উন্নয়ন সংঘের কর্মীসহ ৫০ জন অংশ নেন।

সভা সূত্রে জানা যায়, জামালপুর পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ড ও লক্ষ্মীরচর ও শরিফপুর ইউনিয়নে ৫ হাজার ২৩৩ জন শিশুর ওপর জরিপ চালিয়ে ২১৪ জন তীব্র মাত্রার পুষ্টিহীন, মাঝারী ৮৭১ এবং স্বল্প মাঝারী ১ হাজার ৪২৬ জন পুষ্টিহীন শিশু চিহ্নিত করা হয়। কর্মসূচির কৌশল অনুযায়ী বা নির্দেশনা অনুযায়ী এসব শিশুদের অভিভাবকদের নিয়ে পুষ্টিকর রান্না তৈরি এবং শিশুদের খাবরের পদ্ধতি শিখানো হবে। প্রাথমিকভাবে ১২ দিনব্যাপী এ ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুদের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলা হবে। এ অভ্যাস অব্যাহত যেন থাকে এর জন্যে উন্নয়ন সংঘের এপি কর্মীরা নিয়মিত ফলোআপ করবেন। উল্লেখ সংস্থার পক্ষ থেকে এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে ইতিপূর্বে বাড়ির আঙ্গিনায় পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন শাকসবজির বীজ ও ফল গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া পুষ্টি বিষয়ে উপকারভোগীদের নিয়ে নিয়মিত উঠান বৈঠকসহ বিভিন্নভাবে সচেতনতামূলক কাজ পরিচালনা করা হয়।

শিশুদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্যে খানার স্থায়ী আয়ের উৎসে সহযোগিতা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, ওয়াস, শিশু সুরক্ষা এবং অংশগ্রহণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের অবস্থা উন্নতির লক্ষ্যে জামালপুরে শুরু হয়েছে এরিয়া প্রোগ্রাম (এপি) নামে ১০ বছর মেয়াদী কর্মসূচি। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সংঘ জামালপুরে এপি বাস্তবায়ন করছে।

সূত্র জানায়, উন্নয়ন সংঘ কর্তৃক এরিয়া প্রোগ্রামটি জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর, শরিফপুর ইউনিয়ন এবং জামালপুর পৌরসভার ১, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ৩৯টি গ্রামে ২৩ হাজার ২৮২ জন উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়েছে। কর্মসূচির সকল কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ নিয়ে গ্রাম উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কার্যক্রমের মধ্যে জীবীকায়ন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ওয়াস ও স্পন্সরশীপ অন্যতম। এরমধ্যে আবার খানা জরিপ, দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবেশ সম্মত গ্রাম প্রতিষ্ঠা, জিঙ্ক ধান উৎপাদন, অতিদারিদ্রের উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দল গঠন, সক্ষমতার বিকাশ ঘটানো, প্রসবপূর্ব ও প্রসব পরবর্তী সেবা, শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, বিপদাপন্ন শিশুর তালিকা তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে হংকং ।