পাকিস্তানের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলো বাংলাদেশ

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ ব্যাটারদের ব্যর্থতায় এক ম্যাচ হাতে রেখেই সফরকারী পাকিস্তানের কাছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে গেছে বাংলাদেশ।

২০ নভেম্বর সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৮ উইকেটে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ ৪ উইকেটে হেরেছিলো টাইগাররা।

এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১০৮ রান করে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। জবাবে ১১ বল বাকী রেখে ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয় পাকিস্তান।

সিরিজে টিকে থাকার মিশনে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ম্যাচেও টস জিতে ব্যাট হাতে নেমেছিলো বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের মত আজও ব্যাট হাতে পুরোপুরি ব্যর্থ বাংলাদেশের দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও সাইফ হাসান।

২ ওভারের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফিরেন নাইম-সাইফ। নাইম ৮ বলে ২ ও সাইফ ১ বল খেলে শুন্য রান ফিরেন। পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে লেগ বিফোর হন সাইফ। নাইমকে শিকার করেন পাকিস্তানের আরেক পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম। প্রথম ম্যাচে ১ রান করে করেছিলেন তারা।

৫ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান নাজমুল হোসেন শান্ত ও আফিফ হোসেন। দ্রুত রান তুলেছেন দু’জনে। পাওয়া-প্লের সুবিধা কাজে লাগানোর লক্ষ্য ছিলো শান্ত ও আফিফের। পুরোপুরি সফল না হলেও, পাওয়ার প্লেতে ৩৬ রান পায় বাংলাদেশ।

অষ্টম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌঁছায়। তবে নবম ওভারের প্রথম বলে শান্ত-আফিফের জুটি ভাঙ্গেন পাকিস্তানের স্পিনার শাদাব খান। ১টি করে চার-ছক্কায় ২১ বলে ২০ রান করেন আফিফ। তৃতীয় উইকেটে ৩৭ বলে ৪৬ রান তুলেন শান্ত ও আফিফ।

আফিফের বিদায়ের পর অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সাথে আরও একটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শান্ত। ভালো শুরুর পরও বড় জুটি গড়তে পারেননি তারা। ১৩তম ওভারে মাহমুদুল্লাহর বিদায় ঘটে। পেসার হারিস রউফের বলে আউট হবার আগে ১টি চারে ১৫ বলে ১২ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। শান্ত-মাহমুদুল্লাহ ২৭ বলে ২৮ রান যোগ করেন।

পরের ওভারে থামেন শান্তও। দারুন খেলতে থাকা শান্তকে শিকার করেন শাদাব। নিজের বলে নিজেই দারুন এক ক্যাচ নেন শাদাব। ৫টি চারে ৩৪ বলে ৪০ রান করেন শান্ত।

শান্তর ফিরে যাওয়ায় উইকেটে আসেন মাহেদি হাসান। আগের ম্যাচে ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে, বাংলাদেশকে লড়াই করার পুঁিজ এনে দিয়েছিলেন মাহেদি। কিন্তু আজ ৮ বলে ৩ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। এতে ১৬তম ওভারে ৮৮ রানে ৬ উইকেট পতনে বড় সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের।

ক্রিজে বাংলাদেশের পক্ষে স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে ছিলেন নুরুল হাসান। আফ্রিদির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ১১ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১০৮ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ৮ ও তাসকিন আহমেদ ২ রানে অপরাজিত ছিলেন।
পাকিস্তানের আফ্রিদি ১৫ রানে ও শাদাব ২২ রানে ২টি করে উইকেট নেন।

সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে ১০৯ রানের সহজ টার্গেট পায় পাকিস্তান। সেই লক্ষ্যে স্পিনার মাহেদির করা ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি মারেন পাকিস্তানের ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান।

পরের ওভারে পেসার তাসকিনকেও বাউন্ডারি হাকান রিজওয়ান। তবে তৃতীয় ওভারে বাংলাদেশকে উইকেট শিকারের আনন্দে মাতান পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমকে বোল্ড করেন ফিজ। এ ম্যাচে ৫ বলে ১ রান করা বাবর প্রথমটিতে তাসকিনের বলে বোল্ড হয়েছিলেন ।

শুরুতেই অধিনায়ককে হারানোর পর সতর্ক হয়ে পড়েন রিজওয়ান ও তিন নম্বরে নামা ফখর জামান। তাদের সতর্কতায় পাওয়ার প্লেতে ২৭ রান পায় পাকিস্তান। ১০ ওভার শেষে রান ৫০।

এরপর রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন রিজওয়ান ও জামান। তবে ১২তম ওভারে জীবন পান জামান। লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন জামান। ডিপ উইকেটে ক্যাচ নেয়ার সুযোগ পেয়েও সেটি হাতছাড়া করেন সাইফ। বলও চলে যায় সীমানায়। তখন ব্যক্তিগত ২৬ রানে ছিলেন জামান।

জীবন পেয়ে আর পেছনে ফিরে তাকাননি জামান। ৪০তম বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন জামান।

হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া জামানের সাথে ম্যাচ শেষ করার পথেই ছিলেন রিজওয়ান। কিন্তু দলীয় ৯৭ রানে রিজওয়ানকে শিকার করেন বিপ্লব। এবার ক্যাচ মিস করেননি সাইফ। ৪টি চারে ৪৫ বলে ৩৯ রান করে আউট হন রিজওয়ান। দ্বিতীয় উইকেটে রিজওয়ান-জামান ৭৮ বলে ৮৫ রান তুলেন।

রিজওয়ানের বিদায়ে উইকেটে আসেন হায়দার আলি। তখন জয়ের জন্য ২৭ বলে ১২ রান প্রয়োজন ছিলো পাকিস্তানের। সেই কাজটুকু বিপদ ছাড়াই সাড়েন জামান ও হায়দার। ৫১ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় অপরাজিত ৫৭ রান করেন জামান। ৬ রানে অপরাজিত থাকেন হায়দার।

আগামী ২২ নভেম্বর সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।

স্কোর কার্ড : (টস- বাংলাদেশ)

বাংলাদেশ ইনিংস :
মোহাম্মদ নাইম ক জামান ব ওয়াসিম ২
সাইফ হাসান এলবিডব্লু ব আফ্রিদি ০
নাজমুল হোসেন শান্ত ক এন্ড ব শাদাব ৪০
আফিফ ক রিজওয়ান ব শাদাব ২০
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক রিজওয়ান ব রউফ ১২
নুরুল হাসান ক রিজওয়ান ব আফ্রিদি ১১
মাহেদি হাসান ক এন্ড ব নাওয়াজ ৩
আমিনুল ইসলাম অপরাজিত ৮
তাসকিন আহমেদ অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (লে বা-৮, ও-২) ১০
মোট (৭ উইকেট, ২০ ওভার) ১০৮
উইকেট পতন : ১/১ (সাইফ), ২/৫ (নাইম), ৩/৫১ (আফিফ), ৪/৭৯ (মাহমুদুল্লাহ), ৫/৮২ (শান্ত), ৬/৮৮ (মাহেদি), ৭/১০২ (নুরুল)।

পাকিস্তান বোলিং :
আফ্রিদি : ৪-০-১৫-২,
ওয়াসিম : ৩-০-৯-১,
মালিক : ২-০-১৬-০,
রউফ : ৩-০-১৩-১,
শাদাব : ৪-০-২২-২ (ও-২),
নাওয়াজ : ৪-০-২৫-১।

পাকিস্তান ব্যাটিং :
রিজওয়ান ক সাইফ ব বিপ্লব ৩৯
বাবর বোল্ড ব মুস্তাফিজ ১
জামান অপরাজিত ৫৭
হায়দার অপরাজিত ৬
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-৪) ৬
মোট (২ উইকেট, ১৮.১ ওভার) ১০৯
উইকেট পতন : ১/১২ (বাবর), ২/৯৭ (রিজওয়ান)।

বাংলাদেশ বোলিং :
মাহেদি : ৪-০-২৩-০,
তাসকিন : ৪-০-২২-০,
মুস্তাফিজ : ২.১-০-১২-১ (ও-১),
শরিফুল : ১.৫-০-১০-০,
আমিনুল : ৪-০-৩০-১ (ও-১),
শান্ত : ১-০-৩-০ (ও-১),
আফিফ : ১-০-৬-০,
সাইফ : ০.১-০-১-০।
ফল : পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ফখর জামান(পাকিস্তান)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল পাকিস্তান।