‘এরকম ঘরে থাকতে পারবো কখনো ভাবতে পারিনি’

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের হলদীগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্বোধনের পর জমি ও ঘরের ফাইল তুলে দেওয়া হয় উপকারভোগীদের হাতে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

এরকম ঘরে থাকতে পারবো কখনো ভাবতে পারিনি। আমি স্বামী পরিত্যাক্তা। আমার কোন ঘর-বাড়ি ছিল না। বাপের বাড়িতে ছিলাম। আমাকে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) একটি ঘর উপহার দিয়েছেন। সেই ঘর পেয়ে ধন্য হয়েছি। কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতীর হলদীগ্রাম আশ্রয়কেন্দ্রে ঠিকানা পাওয়া উপকারভোগী তাসলিমা খাতুন (৩০)।

২০ জুন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলার পাঁচটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক উপকারভোগীদের হাতে জমির দলিল ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন।

পরে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মাহমুদ। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী একজন উপকারভোগীর সাথে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাসলিমা এসব কথা বলেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মুজিববর্ষে দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সদর উপজেলায় ৩০টি, নকলায় ৪২টি, নালিতাবাড়ীতে ৫০টি, শ্রীবরদীতে ২০টি ও ঝিনাইগাতীতে ২৫টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘরগুলো প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, রিকশাচালক, দিনমজুর, বিধবা, কাজের মহিলাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। ঘর নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ১৪৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

নতুন নির্মিত ঘরগুলোর উদ্বোধন উপলক্ষে ঘরের দরজার সামনে লাগানো হয়েছে নামফলক, ঝুঁলানো হয়েছে ‘নৌকা তরুণ’। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকারভোগীদের দেওয়া হয়েছে নতুন জামা-কাপড়।

ঝিনাইগাতী উপজেলার শালচূড়া গ্রামের আরেক উপকারভোগী ষাটোর্ধ্ব দিন মজুর লাল মিয়া বলেন, জন্মের কয়েক বছর পরেই বাবা-মা হারাই। অন্যের বাড়িতে থেকে বড় হই। বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে ছিলাম দীর্ঘদিন। পরে শ্যালকের অত্যাচারে সেই বাড়ি ছেড়ে স্ত্রীÑসন্তান নিয়ে পাখির মতো ঘুরে বেড়াই। এখন প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আমি অনেক খুশি।

এ সময় তিনি ও তার স্ত্রী রেজিয়া খাতুন নতুন পাওয়া ঘর ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে বলেন, আধাপাকা ঘরটি তাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে রান্নাঘর। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো। বিদ্যুৎ আছে। পানি আছে। পরিবার নিয়ে এখন খুব ভালোভাবে থাকতে পারবো।

এ দিন নতুন ঘরের চাবি বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব, পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী চন্দন কুমার পাল পিপি ও প্রত্যেক উপজেলার ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা।

মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমি ও ঘর উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগে দরিদ্র মানুষের স্বপ্ন সত্যি হবে।