চেয়ারম্যানের থাপ্পরে পুলিশ সদস্য আহত, বিচার দাবি

ইউপি চেয়ারম্যানের থাপ্পরে ঘাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত গ্রাম পুলিশ সদস্য সাদা মিয়া। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের থাপ্পরে ঘাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত এক গ্রাম পুলিশ সদস্য চিকিৎসার অভাবে প্রায় ১০ মাস যাবত মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঘটনাটি ঘটেছে, জেলার ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউপিতে। ওই পুলিশ সদস্যের নাম সাদা মিয়া (৪৫)। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সরকারের ভিজিএফ এর চাল বিতরণে চেয়াম্যানের অনিয়মে সহযোগিতা না করায় তিনি এ হামলার শিকার হন।

এর প্রতিকার চেয়ে ইতোমধ্যে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন তিনি।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০২০ সালের ১৯ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ নম্বর কাংশা ইউপির পক্ষ থেকে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করা হয়। গুরুচরনদুধনই বাজারে ইউপির অস্থায়ী কার্যালয়ে চাল বিতরণের সময় হত দরিদ্রদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণের কথা থাকলেও ইউপি জহুরুল হক ৬-৭ কেজি করে চাল বিতরণ করেন। অনিয়মের বিষয়টি স্থানীয়রা ইউএনওকে অবহিত করেন। পরে ইউএনও রুবেল মাহমুদ ঘটনাস্থলে আসার খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তার লোকজনকে গুদামে রক্ষিত অতিরিক্ত চাল দ্রæত সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় তার অনুগতরা অতিরিক্ত চাল সরিয়ে বিভিন্ন দোকান ও আশপাশের বাড়িতে সরিয়ে নেন। এতেও পার পাননি ইউপি চেয়ারম্যান। এক পর্যায়ে ইউএনও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্লিপের তুলনায় অতিরিক্ত চাল পান গুদামঘরে। পরে ইউএনও নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অতিরিক্ত চাল উপস্থিত দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করেন। এক সময় ইউএনও চাল বিতরণ শেষে কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে আমি (সাদা মিয়া) কেন চাল সরিয়ে রাখিনি এ অপরাধে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান আমাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান জহুরুল হক তার ঘাড়ে সজোড়ে থাপ্পর দিলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন। ওই আঘাতে তার ঘাড়ের রগ ছিঁড়ে যায়। বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় তার দিন কাটছে। এক পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে শুধু ঘুরিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে শরীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে ধার দেনা করে চিকিৎসার জন্য ঢাকার ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তার ঘাড়ে অস্ত্রপচার করার প্রয়োজন আছে বলে জানান।

পরে আবারও আর্থিক সহায়তা চেয়ে চেয়ারম্যানের গেলে উল্টো তাকে চাকুরিচ্যুত করাসহ নানা ধরনের হুমকি ধামকি দেন।

২২ মে দুপুরে সাদা মিয়া বলেন, আর্থিক সামর্থ না থাকায় কাংশা ইউপির সচিব সুরুজ্জামানের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার নেই। এর পাশাপাশি পরিচিত আরও কয়েকজনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এত দিন চিকিৎসা খরচ চালাই। এখন হাতে টাকা না থাকায় চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। ফলে হাঁটাচলা করতে না পারায় পঙ্গু হয়ে যাচ্ছি। তাই বসত ঘরের জমি ৯০ হাজার টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২৩ মে শেষ সম্বল এই জমিটি রেজিষ্ট্রি করে দিব।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, সামনে ইলেকশন। আমি যেন আগামীতে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করতে না পারি এ জন্য স্থানীয় কয়েকজন ইউপি সদস্য ষড়যন্ত্র করে আসছে। আর সাদা মিয়াকে মারধরের ঘটনাটি মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

ইউএনও রুবেল মাহমুদ অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি পর্যালোচনা শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে উপজেলা গ্রাম পুলিশ সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিক মিয়া বলেন, সাদা মিয়া বিচার না পেলে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় করা হবে।