ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন নরুন্দি ইউপি চেয়ারম্যান

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নরুন্দি ইউপি ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তা নাজমা খাতুন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর সদরের নরুন্দি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় চার মাস ধরে নাগরিকসেবা দিতে পারছেন না ভুক্তভোগী নরুন্দি ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তা নাজমা খাতুন। তাকে পরিষদ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে ডিজিটাল সেন্টারে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

করোনাকালে তার সাথে এই অমানিবক আচরণের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। ৩০ অক্টোবর সকালে জামালপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন জেলায় চারবারের শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা নাজমা খাতুন।

সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোক্তা নাজমা খাতুন বলেন, আমি জামালপুরে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে কর্মরত উদ্যোক্তাদের মধ্যে ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে জেলায় শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা নির্বাচিত হয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন সেবা প্রত্যাশীদের সব ধরনের কাজ দক্ষতার সাথে স্বল্পমূল্যে করে দেওয়ার কারণে এলাকায় আমার বেশ পরিচিত রয়েছে। গত জুন মাসে করোনাকালে ক্ষতি পুষিয়ে উঠার জন্য সরকার কর্মহীন দরিদ্র মানুষদের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা করে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন। ওই সময় নরুন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সরকার তার মনগড়া কিছু মোবাইল নম্বর দিয়ে আমাকে উপকারভোগীদের ভুয়া তালিকা তৈরির কাজ করে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। কিন্তু আমি এ ধরনের অনিয়ম করতে রাজি হইনি।

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীভাতাভোগীদের টাকার বিনিময়ে কার্ড দেওয়াসহ আরও কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ইউপি চেয়ারম্যান গত ১ জুলাই ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আমাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। অনিয়ম যাতে ফাঁস না হয় এজন্য চেয়ারম্যান তার পরিষদের সব কাজ তার এক ভাতিজাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছেন। এতে একদিকে এলাকাবাসীর কাছে আমাকে হেয় করা হয়েছে, অন্যদিকে কাজ করে টাকা উপার্জন করতে পারছি না। ফলে গত চার মাস ধরে আমি স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করছি। ডিজিটাল সেন্টারটি বন্ধ থাকায় কম্পিউটার-ইন্টারনেটে জরুরি সেবা বঞ্চিত হওয়াসহ নানান বিড়ম্বনার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় বিপুল সংখ্যক সেবাপ্রত্যাশীরা।

নরুন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সরকার নরুন্দি এলাকার মোয়াল্লেম আব্দুল হক হত্যা মামলার প্রধান আসামি। চেয়ারম্যান ওই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছেন কিছুদিন। ওই মামলায় তাকেসহ পাঁচজন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিটও দাখিল করেছে পুলিশ। শাহজাহান আলী সরকার হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে দিব্যি চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোক্তা নাজমা খাতুন এই বিষয়টিও তুলে ধরে প্রশ্ন রাখেন, হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি কি করে চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকেন। আইন অনুযায়ী তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকেও বরখাস্ত করার দাবি জানান তিনি।

নাজমা খাতুন আরও বলেন, এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে আমার সমস্যা সমাধানের বিষয়ে তাকে বিস্তারিত জানিয়েছি। জেলা প্রশাসক জামালপুর সদরের ইউএনওকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে ইউএনওর সাথে দেখা করে তার কথামতো আমি গত ১২ অক্টোবর তার কাছে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে আমাকে ডিজিটাল সেন্টারে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ইউএনও’র কোন সাড়া পাইনি।