জুতার সূত্র ধরে ক্লু-লেস হত্যা মামলার তিন আসামিকে পাকড়াও করল শেরপুর পুলিশ

গ্রেপ্তার তিন আসামি

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জুতার সূত্র ধরে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস একটি হত্যা মামলার তিন আসামিকে পাকড়াও করেছে শেরপুর পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলো- সাগর (২০), বিল্লাল মিয়া (২৫) ও সাইম মিয়া (১৮)। এদের প্রত্যেকের বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলায়। সদর উপজেলার উত্তর নৌহাটা তাতালপুর এলাকার অটো রিকশাচালক আনসার আলীকে হত্যার ১৯ দিনের মাথায় এ হত্যা রহস্য উদঘাটন করা হলো। ১৯ আগস্ট বিকালে এএসপি (সদর) সার্কেল আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, অটো রিকশাচালক আনসার আলীর মৃতদেহ গত ২৯ জুলাই বিকালে শ্রীবরদীর গড়জরিপা ইউপির শৈলারকান্দা গ্রামে শৈলা বিল হতে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশে ভিকটিমের পায়ের জুতা ও তার পাশে আরেক জোড়া জুতা উদ্ধার করে। পরে আনসার আলীর স্ত্রী জরিনা বেগম লাশ শনাক্তের পর অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুম করার অভিযোগে শ্রীবরদী থানায় মামলা দায়ের করে। এর পরপরই পুলিশ মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে নামে। প্রথম অবস্থায় উদ্ধারকৃত জুতা ছাড়া আর কোন ক্লু না থাকায় সেই জুতার সূত্র ধরেই ঘটনাস্থলের আশপাশের গ্রামগুলোতে জুতা ব্যবহারকারীর পরিচয় খোঁজার চেষ্টা চালায়। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকে। এক সপ্তাহ পর পুলিশ জুতা ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্তের জন্য একটি ক্লু খুঁজে পায়। একই রকম নতুন একজোড়া জুতা সাগর নামে এক তরুণের পায়ে রয়েছে এমন খবরে তাকে সন্দেহের তালিকায় আনা হয়।

পরে জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণ জানায় তার আগের জুতাগুলো ছিঁড়ে যাওয়ায় ২৯ জুলাই সে নতুন জুতা কিনে আনে। তার পুরনো জুতাগুলো দেখার জন্য তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ঘর থেকে সাগর পুরাতন জুতা আনবে বলে কৌশলে পালিয়ে যায়।

এরপর সাগরের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারের কললিস্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় ঘটনার দিন ওই তরুণের অবস্থান ছিল মামলার ঘটনাস্থল শৈলার বিলে।

পরে স্থানীয় বিট পুলিশিং এর সদস্যদের মাধ্যমে সাগরের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রেখে অভিযান পরিচালনা করে গত ১৭ আগস্ট তাকে (সাগরকে) শ্রীবরদী পুলিশ হেফাজতে নেয়। এ সময় পুলিশের উপর্যুপরী জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদের নাম প্রকাশ করে। তার দেওয়া তথ্য মতে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত বিল্লাল মিয়া (২৫) ও সাইম মিয়া (১৮) কে গ্রেপ্তার করে। এবং ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আসামির মধ্যে দু’জন সদর উপজেলার তাতালপুর বাজার থেকে আনসার আলীর অটো রিকশা ভাড়া নিয়ে কালিবাড়ি বাজারে যায়। গন্তব্যে পৌঁছে আসামিরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া দিতে চাইলে আনসার আলী ভাড়া নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তখন ওই দুইজন তাদেরকে আরেকটু এগিয়ে দিতে বলে এবং সেখানে তাদের লোকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দিবে বলে জানায়। একপর্যায়ে অটো রিকশাওয়ালাকে দুই আসামি কালিবাড়ি থেকে কুরুয়া সড়কে যাওয়ার সময় শৈলার বিলের মাঝামাঝি বড় সেতু কাছে এসে আনসার আলীকে ভাড়া না দিয়ে উল্টো তার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। তখন সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা গ্রেপ্তার আসামির সহযোগীরা আনসার আলীকে উপর্যুপরী কিল-ঘুষি মারতে থাকে এবং তার পকেটে থাকা টাকা কেড়ে নেয়। তাদের মধ্যে একজন আনসার আলীর গলা চেপে ধরে ধাক্কা দিলে আনসার আলী সেতু থেকে পানিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন ৫/৬ জন আসামি আনসার আলীকে পানিতে চুবিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর আরও ৪/৫ জন আনসার আলীর শরীর থেকে শার্ট এবং লুঙ্গি খুলে তার লাশ বিলের কচুরি পানার নিচে লুকিয়ে রাখে। গ্রেপ্তার আসামিরা জানায় এ ঘটনায় সাথে মোট ১২ জন জড়িত।