একজন কর্মবীর ও রাজনীতির কবি মির্জা আজম এমপি

মির্জা আজম এমপি

:: মো. ওবায়দুর রহমান বেলাল::

তৃণমূল থেকে তিল তিল করে বেড়ে উঠা একজন কর্মবীর, রাজনীতির কবি মির্জা আজম এমপি ১৯৬২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সুখ নগরী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মির্জা আবুল কাশেম ও মা নুরুন্নাহার বেগম। সাত ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় সন্তান। ১৯৯৫ সালের ৩১ মার্চ নেত্রকোনা জেলা সদরের দেওয়ান আলেয়া আজমকে জীবন সঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করেন। পারিবারিক জীবনে তাদের দুই কন্যা- মির্জা আফিয়া আজম অপি ও মির্জা আসফিয়া আজম অমি।

১৯৬৮ সালে বালিজুড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তার শিক্ষা জীবনের শুরু। ১৯৭৮ সালে জামালপুর জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা (ম্যাট্রিক) , এবং জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (ইন্টারমিডিয়েট) ও ১৯৮৩ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ১৯৭৭ সালে হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে ছাত্রলীগের সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, ১৯৮৭ সালে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সম্মেলনে সভাপতি এবং একই বছরে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯৬ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

তিনি যখন যেখানে যে দায়িত্ব পেয়েছেন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। ১৯৯১ সালে অত্যন্ত তরুণ বয়সে জামালপুর -০৩ আসন ( মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, ২০০৩ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এ’সময় জামাত-বিএনপি জোট সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে যুব রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। নানক-আজম জুটি বারবার জোট সরকারের কোপানলে পড়েও এতটুকু পিছপা হননি। ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ এই নেতা দলের সংকটময় মুহূর্তে রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসাবে জীবন-পণ সংগ্রাম চালিয়েছেন। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মর্মান্তিক পিলখানা ট্রাজেডি মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুনিপুণ ভাবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ থেকে পরপর ছয়বার বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে একটানা ত্রিশ বছর মহান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকা-সহ জামালপুর জেলার রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। নিজ সংগঠনের বাইরেও তার কর্মনিষ্ঠতা, আন্তরিকতা ও সদাচরণ ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্বে একটি মিথ্যা মামলায় তাকে জামিন নামঞ্জুর করায় কয়েক ঘন্টার মধ্যে সমগ্র জামালপুর কার্যত অচল হয়ে যায়, রাস্তায় নেমে আসে সর্বস্তরের মানুষ। অবস্থা বেগতিক দেখে মধ্যরাতে আদালত বসিয়ে জামিন মঞ্জুর করত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এই একটি ঘটনা-ই কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে তার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার।

অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি বিরোধী দলীয় হুইপ, নবম সংসদে সরকার দলীয় হুইপ, দশম সংসদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী, একাদশ সংসদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ’ছাড়া পঞ্চম সংসদে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, সপ্তম সংসদে সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, নবম জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগতভাবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, কোরিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, ডেনমার্কসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সকল দেশ সফর করেন। ইতোমধ্যে একাধিকবার সস্ত্রীক পবিত্র হজ্ব ব্রত পালন করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরলস পরিশ্রম ও একাগ্রতার মধ্যদিয়ে উন্নয়নের মূল স্রোতের বাইরে থাকা তার নির্বাচনী এলাকা সহ সমগ্র জামালপুর জেলা সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দুর্বার গতিতে। তার নির্বাচনী এলাকা মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগকে তিনি সাজিয়েছেন নিজের পরিবারের মত করে। উপজেলা পর্যায়ে কোটি টাকা ব্যয়ে অডিটোরিয়াম-সহ নিজস্ব কার্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং সবগুলো ইউনিয়নের উল্লেখযোগ্য বাজারে আওয়ামী লীগের নামে জমি ক্রয় করে স্থায়ী কার্যালয় প্রতিষ্ঠা তার সুদুর প্রসারী রাজনৈতিক চিন্তার প্রতিফলন। মির্জা আজম এই অঞ্চলে একটি নাম-ই নয় শুধু, একটি প্রতিষ্ঠানও বটে! এক কথায় তার পরিকল্পনা গুলো-ই এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন, তার কর্মের সমষ্টি-ই এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি। তার অকৃত্রিম ভালবাসার কাছে সমগ্র জামালপুর জেলার মানুষ আজ পরাজিত।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার বাহাত্তুর বছরের অভিযাত্রায় জামালপুর জেলার সর্বোচ্চ প্রাপ্তির স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৯ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় সমগ্র জামালপুর তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে আনন্দের সুবাতাস বইছে।

লেখক : মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মাদারগঞ্জ উপজেলা শাখা