মির্জা আজমের প্রচেষ্টায় আসছে ২১০ কোটি টাকার জামালপুর জেলা কারাগার উন্নয়ন প্রকল্প

আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর

জামালপুর জেলার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে জামালপুর জেলায় প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়ে এবার বদলে যাবে ১২১ বছরের পুরনো জামালপুর জেলা কারাগার।

পুরনো এই কারাগারের প্রশাসনিক ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা এবং নারী, পুরুষ ও কিশোর বন্দিদের ওয়ার্ড নির্মাণসহ ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জামালপুর জেলা কারাগার পুনর্নির্মাণ নামের একটি প্রকল্প একনেকের সভায় উঠছে আগামী ২১ জুন রবিবার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৮৯৯ সালে জামালপুর কারাগার প্রথম চালু হয় উপ-কারাগার হিসেবে। এটি জেলা কারাগারে উন্নীত হয় ১৯৮৮ সালে। বর্তমানে অনুমোদিত বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৩০৭ জন। এর মধ্যে ২৯১ জন পুরুষ ও ১৬ জন মহিলা কারাবন্দি রাখার ব্যবস্থা থাকলেও এর চাইতে অনেক বেশি বন্দি কয়েদি কারাগারে থাকছেন। সময়ের প্রয়োজনে চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি প্রায় ১২১ বছরের পুরনো এই জামালপুর জেলা কারাগারের উন্নয়নের বিশেষ উদ্যোগ নেন। তারই প্রচেষ্টায় স্ব-রাষ্ট্রমন্ত্রণায়ের আওতাধীন কারা অধিদপ্তর ‘জামালপুর জেলা কারাগার পুনর্নিমাণ’ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।

সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশা অনুযায়ী ২১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে এই কারগারের বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৩০৭ জন থেকে ৫০০ জনে উন্নীত করা হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। আগামী ২১ জুন রবিবার ঢাকায় একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হওয়ার মধ্য দিয়েই জামালপুর জেলা কারাগারের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে।

প্রস্তাবিত নতুন এই প্রকল্পে জামালপুর কারাগারের পুরাতন অবকাঠামো বলতে আর কিছুই থাকবে না। সবকিছুই করা হবে নতুন করে। প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে- ভূমি উন্নয়ন, বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ব্যারাক (পুরুষ) নির্মাণ, পুরুষ শ্রেণিপ্রাপ্ত বন্দি ও কিশোর বন্দি ওয়ার্ড নির্মাণ, পুরুষ বন্দি হাসপাতাল, মানসিকভাবে অসুস্থ বন্দি ওয়ার্ড, মা বন্দিদের জন্য ওয়ার্ড ও শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টার, মহিলা বন্দিদের ওয়ার্কশেড ও বিনোদন সেন্টার, মহিলা জেল স্কুল, মহিলা শ্রেণিপ্রাপ্ত ও কিশোরী বন্দি ওয়ার্ড, মহিলা বন্দি সেল, সাক্ষাতকার ব্লক, প্রশাসনিক ভবন, ব্যাচেলর অফিসার্স কোয়াটার, ৮০০ বর্গফুট আয়তনের একটি এবং ৬৫০ বর্গফুট আয়তনের দুটি আবাসিক কোয়াটার নির্মাণ, ওয়ার্কশেড, স্টোর, লন্ড্রি এবং সেলুন, দর্শনার্থীদের অপেক্ষাগার, এমআই ইউনিটসহ ৭৫ জনের পুরুষ ব্যারাক ভবন, সীমানা প্রাচীর, পেরিমিটার দেয়াল, সেগ্রিগেশন দেয়াল, আরসিসি ওয়াকওয়ে, পাম্প হাউজ, ক্যান্টিন, প্যারেড গ্রাউন্ডসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ এবং সোয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি), পুকুর খনন, লিফট, সৌরবিদ্যুৎ, বনায়ন, যানবাহন ক্রয়, আসবাবপত্র ক্রয়, জেল হাসপাতাল ও নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি, বহির্বিভাগের চারদিকে বিদ্যুতায়ন, বাইরে পানি সরবরাহ, অন্যান্য অফিস সরঞ্জামাদি, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন স্থাপন করা হবে।

উল্লেখ্য, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জামালপুর জেলার উন্নয়নের এক নতুন যুগে অবস্থান করছে। তারই প্রচেষ্টায় জেলায় অন্তত পক্ষে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বেশ কিছু প্রকল্প দৃশ্যমান হয়েছে, অনেক প্রকল্প দৃশ্যমান হওয়ার পথে রয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়ে ৬৪টি জেলার মধ্যে ১০টি উন্নত জেলার তালিকায় জামালপুর জেলাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মির্জা আজম এমপি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে জামালপুর জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প এবং জেলার উন্নয়ন ও পরিচিতির তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৩৭ কোটি টাকার পাট গবেষণা উপকেন্দ্র প্রকল্প। এছাড়া শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী, শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ বেশ কয়েকটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, দুটি ইপিজেড, তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ডায়াবেটিস হাসপাতাল নির্মাণ, স্কাউট ভবন নির্মাণ, ফায়ারসার্ভিস ভবন নির্মাণ, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ ও জাহেদা সফির মহিলা কলেজের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণ, কামালপুর স্থলবন্দরের আধুনিকায়ন, তিনটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুরে শেখ হাসিনা নকশীপল্লী ও প্রায় ৬১ কোটি ৮১ লাখ ১৭ হাজার টাকার ‘ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট প্রকল্প’। সব মিলিয়ে সারা জেলায় প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ হচ্ছে।