শেরপুরে করোনাসন্দেহে ১৪৭টি নমুনার প্রতিবেদন ৬ দিনেও আসেনি, জনমনে শঙ্কা

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুর থেকে করোনাক্রান্ত সন্দেহে সংগ্রহ করা ১৪৭টি নমুনার ফলাফল গত ৬ দিনেও হাতে পায়নি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ২০ এপ্রিল ওই নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয়। আজ ২৬ এপ্রিল বিকাল পর্যন্ত হাতে পাওয়া যায়নি পূর্বের পাঠানো সন্দেহভাজনদের পরীক্ষার ফলাফল। জেলায় ইতিমধ্যে চিকিৎসক, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীসহ করোনাক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন। এর মধ্যে পাঁচজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকী ১৯ জন হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা এবং করোনা উপসর্গের রোগীদের কাছ থেকে ওইসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে করে আইসোলোশনে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের পরবর্তী পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়া যাওয়ায় ওইসব রোগীদের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ যেমন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। অন্যদিকে সংগ্রহ করা যাচ্ছেনা নতুন করে করোনাক্রান্ত সন্দেহভাজনদের নমুনা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ল্যাব থেকে শেরপুরের করোনাক্রান্ত সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

এদিকে নমুনা সংগ্রহকরা করোনাক্রান্ত সন্দেহভাজন ১৪৭ জন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। ফলে এ নিয়ে শঙ্কিত খোদ সিভিল সার্জন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মাসের ৫ তারিখ শেরপুরে প্রথম করোনাক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর পরপরই জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সম্মিলিতভাবে করোনা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল রাত ১০টা থেকে জেলা লকডাউন করার ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা বলবৎ থাকবে। নির্দেশনার আওতায় রয়েছে জেলার সদরসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা। ইতিমধ্যে চিকিৎসক, পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীসহ করোনাক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে করোনাক্রান্ত পাঁচজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকী আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন এবং যাদের করোনা উপসর্গ আছে এমন ১৪৭জন ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে তা পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ২০ এপ্রিল ওই নমুনাগুলো পাঠানো হলেও আজ ২৬ এপ্রিল বিকাল পর্যন্ত হাতে পাওয়া যায়নি পূর্বের পাঠানো সন্দেহভাজনদের পরীক্ষার ফলাফল। এতে করে আইসোলোশনে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের পরবর্তী পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়া যাওয়ায় ওইসব রোগীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছেনা। অন্যদিকে সংগ্রহ করা যাচ্ছেনা নতুন করে করোনাক্রান্ত সন্দেহভাজনদের নমুনা।

সিভিল সার্জন চিকিৎসক এ কে এম আনোয়ারুর রউফ বলেন, নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট ল্যাবে জমা রয়েছে। এছাড়া সেখানে অন্যান্য জেলার এ রকম আরও ৭০০ নমুনা পরীক্ষার জন্য সেখানে সংরক্ষিত আছে। তাদেরকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও শেরপুরের প্রতিবেদনগুলো এখনও হাতে পাইনি। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জানানো হয়েছে। তিনি জানান, জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন করোনাক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কারো কারো প্রথম বা দ্বিতীয় বার পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে। যদি তাদের মধ্যে কারও প্রতিবেদন নেগেটিভ পাওয়া যেতো তারা বাড়ি ফিরে যেতে পারতো। এদিকে নমুনা সংগ্রহকরা করোনাক্রান্ত সন্দেহভাজন ১৪৭ জন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। ফলে এ নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বৈদ্যুতিক সমস্যা এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চিকিৎসক ও নার্স করোনা পজিটিভ হওয়ায় শেরপুরের প্রতিবেদনগুলো হাতে আসতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব । তিনি বলেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।