শেরপুরে বর্গা চাষিদের ধান কেটে দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা

নকলায় বর্গাচাষী ও দরিদ্র কৃষকের ধান কাটছেন ছাত্রনেতা আবু হামযা কনক ও তার অনুসারী ছাত্ররা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরে বর্গা চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তরুণ ছাত্রনেতা আবু হামযা কনক ও তার অনুসারী একদল শিক্ষার্থী। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মতো শেরপুর জেলাকেও লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে সরকারের নির্দেশ মতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কৃষক, দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষ।

কৃষক এনায়েত আলী, শরীফ মিয়া, হাসান শেখ ও সুরুজ্জামানসহ আরো অনেকেই বলেন, রোপণকৃত বোরো ধান এখন পাঁকতে শুরু করেছে। অপরদিকে কালবৈশাখী ঝড়ের ছোবলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন জেলার সদরসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার লাখো কৃষক। শ্রমিক সংকটের কারণে উৎপাদিত সোনালি ফসল ঘরে তুলতে দুশ্চিন্তায় আছে কৃষক সমাজ। বিশেষ করে ছোট-মাঝারি শ্রেণির কৃষক ও বর্গা চাষিরা।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় দরিদ্র কৃষকের ক্ষেতের ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ।

এরই ধারাবাহিকতায় শেরপুরের নকলার তরুণ ছাত্রনেতা আবু হামযা কনকের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী অসহায় কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। এ কাজের প্রথম দিন ২২ এপ্রিল দিনব্যাপী পৌরসভার ধুকুড়িয়া এলাকার মোহাম্মদ আলী নামে এক ঠেলাচালক বর্গাচাষির ৫৫ শতাংশ জমির ধান কেটে দিয়েছে। এবং ২৩ এপ্রিল গনপদ্দী ইউপির বিহারীপাড় গ্রামের অসহায় প্রান্তিক কৃষক মোস্তফা মিয়ার ৪০ শতাংশ ও দরিদ্র বর্গা চাষি ফযল মিয়ার ৩৫ শতাংশ জমির ধান কেটে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।

ছোট-মাঝারি শ্রেণির কৃষক ও বর্গা চাষিদের ধান কাটা, আটি বাঁধা ও বাড়িতে পৌঁছে দিতে কনকের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীরা সহায়তা করেছেন।

বর্গাচাষী ও দরিদ্র কৃষকের ধান কাটার পর বাড়িতে পৌঁছে দেন ছাত্রনেতা আবু হামযা কনক ও তার অনুসারী ছাত্ররা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সহায়তাকারীদের উল্লেখযোগ্যরা হলেন- আল আমীন আহমেদ, সাকিব মিয়া, মেহেদী হাসান, মোশারফ হোসেন, ইউসুফ নবী স্বর্ণ, নাঈম ইসলাম, ইয়ামিন, রানা আহমেদ, মারুফ হাসান, জিসান, অর্ণব, তাঈফ হাসান, শাহীন আলম, হৃদয় হাসান, আল আমীন, শাওন, নাজমুল ইসলাম নাঈম ও রাজু আহমেদসহ আরো অনেকেই।

ছাত্রনেতা আবু হামযা কনক জানান, কৃষক বান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশব্যাপী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অসহায় কৃষকদের বোরো ধান কাটা ও বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের পরামর্শে তারা সরকারের এমন উন্নয়নমূলক নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র কৃষকদের ধান কেটে দিতে মাঠে নেমেছেন।

তিনি বলেন, দরিদ্র কৃষক মোহাম্মদ আলী, মোস্তফা মিয়া ও ফযল মিয়ার ধান কাটার মাধ্যমে আমরা এ মিশন শুরু করেছি তাদের মতো অন্য কোনো এলাকার দরিদ্র কৃষক যদি শ্রমিক সংকট ও দারিদ্রতার কারণে তাদের জমির ধান কাটতে সমস্যায় পড়েন, তাহলে আমরা ওইসব কৃষকের জমির ধান কেটে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে সদা প্রস্তুত আছি। তাদের এ ধানকাটা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

দরিদ্র কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন লাখো কৃষক, দিনমজুর ও অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ। শিক্ষার্থীদের সহায়তায় জমির পাঁকা ধান ঘরে তুলতে পেরে তিনি খুব খুশি। তার মতো এখন অনেক কৃষকের মনে এখন স্বস্থি ফিরে এসেছে।