শেরপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের কাছে পৌঁছেনি করোনা সচেতনতার বার্তা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিশুরা এদিক সেদিক খেলাধুলা করে সময় পার করছে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

সরকারিভাবে দেশজুড়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক নানা প্রচারাভিযান চলমান রয়েছে। কিন্তু সচেতনতার কোন বার্তা এখন পর্যন্ত পৌঁছেনি শেরপুর সীমান্তে বসবাসকারি তিনটি উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের ঘরে। ওইসব এলাকায় অর্ধলক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। করোনাভাইরাস নিয়ে ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটছে এসব জনপদের মানুষের। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন, স্বাস্থ্যকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি। অন্যদিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের সচেতন করতে খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসক।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিশুরা এদিক সেদিক খেলাধুলা করে সময় পার করছে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

২৪ মার্চ বিকালে শ্রীবরদীর হারিয়াকোনা গ্রামে গেলে কথা হয় কৃষক হরিপদ মারমার সাথে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রামের মাঠে প্রতিদিনই শতশত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিশুরা সকাল-সন্ধ্যা খেলায় মত্ত থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুরা এদিক সেদিক খেলাধুলা করে সময় পার করছে। আর বয়স্করাও প্রতিদিন একে অপরের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করছে। চলছে সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানসহ কাজের তাগিদে ঘোরা ফেরা। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কিছু জানেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শুনেছি রোগটা নাকি খুব খারাপ।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের এক নারী পানি সংগ্রহ করছেন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সজল চাকমা বলেন, জেলার ভারত সীমানা ঘেঁষা ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার ১০৯টি গ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ভুক্ত কোচ, ডালু, মারমা, বানাই, হদি, চাকমা, বর্মন, গারো ও হাজংদের বাস। ওইসব গ্রামে এখনো পৌঁছায়নি করোনাভাইরাস সতর্কতার বার্তা। সরকারি কোন প্রতিষ্ঠান তো নয়ই কোন এনজিওকর্মী পর্যন্ত আমাদের খোঁজ নেয়নি। অসুস্থ হলে কোথায় যাবো, করোনা থেকে কিভাবে বাঁচবো এমন কোন তথ্যই জানা নেই এই জনপদের মানুষদের। এখন করোনা আতঙ্কে ওইসব এলাকার প্রায় আট হাজার পরিবারের অর্ধলক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের দিন কাটছে।

কাজ করছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকরা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

ঝিনাইগাতীর হলদি গ্রামের রিনা রানী কোচ বলেন, আমরা শুনছি দেশের মধ্যে নাকি করোনা নামে এটা রোগ আয়ছে। এটা কোন ধরনের রোগ এটা আমরা জানিনা।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নেতা ও শ্রীবরদী ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রশাসনের তরফ থেকে আমাদের এলাকায় প্রচারপত্র বিতরণ বা মাইকিং কোনটাই করা হয়নি। তবে এ বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হতে আমাদের চার্চগুলোতে আলোচনা করেছি।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের এক মা তার সন্তানদের নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

যদি সীমান্ত এলাকায় করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিতরণ ও মাইকিং করা না হয়ে থাকে তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন চিকিৎসক এ কে এম আনোয়ারুর রউফ। তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত জেলায় কোন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত না হলেও ১২৭ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৫০ শয্যার আইসোলেশন।

অন্যদিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষদের সচেতন করার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে দাবি করেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব।