নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ ভারত

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : পাঁচ ম্যাচের টি-২০ সিরিজে ভারতের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিলো স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সেই প্রতিশোধ নিলো কিউইরা। ১১ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ৫ উইকেটের জয়ে ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করলো নিউজিল্যান্ড। ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজও জিতলো কিউইরা। এর আগে প্রথম দুই ওয়ানডে যথাক্রমে ৪ উইকেটে ও ২২ রানে জিতে নিউজিল্যান্ড। গেল ৩০ বছরের মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটে এই প্রথম দ্বিপাক্ষীক কোন সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো ভারত।

মাউন্ট মঙ্গানুইতে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে নিউজিল্যান্ড। ব্যাট হাতে নেমে ভারতকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি ভারতের দুই ওপেনার পৃথ্বী শ ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল। দলীয় ৮ রানে বিচ্ছিন্ন হন তারা। ১ রানে থাকা আগারওয়ালকে বোল্ড করেন আগের ম্যাচের হিরো পেসার কাইল জেমিসন।

অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে নিয়ে বড় জুটির চেষ্টা করেন পৃথ্বী। কিন্তু কোহলিকে বড় ইনিংস খেলতে দেননি নিউজিল্যান্ডের পেসার হামিশ বেনেট। ১টি ছক্কায় ৯ রানে থামেন তিনি। সিরিজে কোহলির রান ৭৫। গেল ৫ বছরের মধ্যে তিন ম্যাচের সিরিজে এটিই সবচেয়ে কম রান কোহলির।

৩২ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারানোর পরও অন্যপ্রান্ত দিয়ে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন পৃথ্বী। মারমুখী মেজাজেই ছিলেন তিনি। বড় ইনিংস খেলার আভাস দিয়েও ব্যক্তিগত ৪০ রানে রান আউট হন পৃথ্বী। তার ৪২ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো।

৬২ রানের মধ্যে উপরের সারির তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদেই পড়ে ভারত। এ অবস্থায় দলকে বিপদমুক্ত করেন শ্রেয়াস আইয়ার ও উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল। ১১০ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন তারা। প্রথম দুই ম্যাচে একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন আইয়ার। এ ম্যাচেও নিজের ফর্ম অব্যাহত রাখেন তিনি। অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৬৩ বলে ৬২ রানে আউট হন আইয়ার। ৯টি চারে নিজের দায়িত্বশীল ইনিংসটি সাজান তিনি।

৩১তম ওভারে আইয়ার ফিরলেও, মনিষ পান্ডিয়াকে নিয়ে দলের স্কোরকে সামনের দিকে টানতে থাকেন রাহুল। প্রথম ওয়ানডেতে অনবদ্য ৮৮ রান করা রাহুল এবার আর সেঞ্চুরি স্পর্শ করতে ভুল করেননি। ১০৪ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রাহুল। ভারতের সাবেক অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে উপমহাদেশের বাইরে উইকেটরক্ষক হিসেবে সেঞ্চুরি করলেন রাহুল।

তিন অংকে পা দিয়ে ১১২ রানে আউট হন রাহুল। বেনেটের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ১১৩ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি। পান্ডিয়ার সাথেও সেঞ্চুরির জুটি গড়েন রাহুল। ৯৭ বলে ১০৭ রান যোগ করেন তারা। ইনিংসের শেষ দিকে রবীন্দ্র জাদেজার অপরাজিত ৮, শারদুল ঠাকুরের ৭ ও নবদীপ সাইনির অপরাজিত ৮ রানে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৯৬ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। নিউজিল্যান্ডের বেনেট ৬৪ রানে ৪ উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ২৯৭ রানের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতেই উড়ন্ত সূচনা করেন দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। ৯৩ বলে ১০৬ রান দলকে উপহার দেন তারা। বিধ্বংসী রুপ দেখিয়েছেন গাপটিল। ছক্কা মেরে ২৯ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৭তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ন করেন তিনি। দ্রুত হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসকে বড় করতে থাকা গাপটিলকে সরাসরি বোল্ড করে থামান ভারতের স্পিনার যুজবেন্দ্রা চাহাল। ৪৬ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৬ রান করেন গাপটিল।

গাপটিল বিদায় নিলেও আরেক ওপেনার নিকোলস দলের রানের চাকা ঘুড়াচ্ছিলেন। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে নিয়ে ৫৩ ও তৃতীয় উইকেটে রস টেইলরের সাথে ২৭ রান যোগ করেন নিকোলস। সিরিজে প্রথমবারের মত খেলতে নামা উইলিয়ামসন ২২ ও টেইলর ১২ রানে আউট হলেও, ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে তিন অংকের পথেই ছিলেন নিকোলস। কিন্তু নিকোলসকে ব্যক্তিগত ৮০ রানে থামিয়ে ভারতকে খেলায় ফেরান পেসার ঠাকুর। ৯টি চারে ১০৩ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান নিকোলস। ছয় নম্বরে নামা জেমস নিশামও ১৯ রানে আউট হলে জয় থেকে ৭৭ রান দূরে দাড়িয়ে ছিলো নিউজিল্যান্ড। বল ছিলো ৬৩টি।

এ অবস্থায় ভারতের বোলারদের উপর ছড়ি ঘুড়িয়েছেন অলরাউন্ডার কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। ২০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ১৭ বল বাকী রেখে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন গ্র্যান্ডহোম। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৮০ রান করেন গ্র্যান্ডহোম ও টম লাথাম। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৮ বলে অনবদ্য ৫৮ রান করেন গ্র্যান্ডহোম। ৩টি চারে ৩৪ বলে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন লাথাম। ভারতের চাহাল ৪৭ রানে ৩ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের নিকোলস ও সিরিজ সেরা হন টেইলর।

আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করবে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। তার আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে একটি তিনদিনের অনুশীলন ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত।সূত্র:বাসস।