জামালপুরে মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিদর্শনে দাতা সংস্থার প্রতিনিধি দল

দেওয়ানগঞ্জে মা দলের উঠান বৈঠকে কানাডা দূতাবাসের প্রথম সচিবসহ পরিদর্শন দলের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

মাতৃমৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যুরোধ এবং কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখতে দাতা সংস্থা গ্লোবাল এ্যাফেয়ারর্স কানাডা, ইউনিসেফ এবং ইউএনএফপিএ এর একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল জামালপুর পরিদর্শন করেছে। ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প পরিদর্শনে নেতৃত্ব দেন কানাডা দূতাবাসের প্রথম সচিব গাব্রিয়েল।

দুইদিনের এই পরিদর্শন দলে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জামালপুরের সিভিল সার্জন চিকিৎসক গৌতম রায়, জেলা পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক চিকিৎসক সাজদা ই জান্নাত, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক সৈয়দ আবু আহম্মেদ সাফি, মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক ফজলুল হক, ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি রন্ডি, গ্লোবাল এ্যাফেয়ারর্স কানাডা প্রতিনিধি চিকিৎসক মমেনা, ইউনিসেফ এর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শারমিন, ইউনিসেফ ময়মনসিংহ মাঠ অফিসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক আলমগীর, মাতৃ ও নবজাতক বিষয়ক পরামর্শক চিকিৎসক বুশরা আমেনা, ইউএনএফপিএ জামালপুর প্রতিনিধি মো. আতাহার আলী, উন্নয়ন সংঘের পরিচালক কর্মসূচি নারায়ণ চন্দ্র দাস, মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, জেলা ব্যবস্থাপক লিটন সরকার প্রমুখ।

দেওয়ানগঞ্জে আইএমএসআরএইচএমএনএইচ প্রকল্পের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন কানাডা দূতাবাসের প্রথম সচিব গাব্রিয়েল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দল উন্নয়ন সংঘ আয়োজিত মা সমাবেশ, পথনাটক, মা দলের সাথে উঠান বৈঠক, কমিউনিটি দলের সভা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি দেওয়ানগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে দেওয়ানগঞ্জ হাসপাতাল মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিদর্শন দলের সকল সদস্য হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, উন্নয়ন সংঘের মাঠ পর্যায়ের কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন দলের সদস্যরা প্রকল্পের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

সভাসূত্র জানায়, ২০১৯ সালে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মোট দুই হাজার ১৯টি সন্তান প্রসব হয়। এতে হাসপাতালে প্রসব হয় এক হাজার ১৯টি। এরমধ্যে বাড়িতে প্রসবকালীন তিন এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে একজন মায়ের মৃত্যু হয়।

উন্নয়ন সংঘের পথ নাটক উপভোগ করেন কানাডা দূতাবাসের প্রথম সচিব গাব্রিয়েলসহ এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

আলোচকরা দেওয়ানগঞ্জে মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করলেও নানা সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন। এরমধ্যে দুর্গম চরাঞ্চলের সাথে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা, গাইনী চিকিৎসকসহ জনশক্তির সঙ্কট, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোড়ামী, অদক্ষ দায় ও হাতুড়ে ডাক্তার ও কবিরাজদের অপচিকিৎসা মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এক্ষেত্রে তারা উন্নয়ন সংঘসহ বেসরকারি সংস্থাগুলোর অব্যাহত ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন।

বক্তারা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব এবং মাকে গর্ভকালীন চারবার এবং প্রসব পরবর্তী চারবার পরীক্ষা করাতে পারলে মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যু আশাব্যঞ্জকহারে হ্রাস পাবে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, চেয়ারম্যান, মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীদের বিশাল দায়িত্ব আছে। সরকারি, বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে যদি কাজ করা যায় তাহলে চলমান প্রকল্পের উদ্দেশ্য সফল হবে।

ইউনিসেফ এর সহায়তায় উন্নয়ন সংঘ জামালপুর জেলার ৬৮টি ইউনিয়নে মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্য, যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের অধিকার উন্নয়নের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক কার্যক্রম (আইএমএসআরএইচএমএনএইচ) বাস্তবায়ন করছে।