ইসলামপুরে প্রতিনিয়তই গ্রাম আদালতের সুবিচার পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

গ্রাম আদালতের উপকারভোগী বানেরা বেগমের সাথে কথা বলেন মাদারীপুর লিগাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের উপজেলা সমন্বয়কারী মোছা. রুবিনা বেগম। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের ইসলামপুরে পাথর্শী ইউনিয়নের গামারিয়া গ্রামের বানেরা বেগম অভাব আর অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করেন। তার নি¤œ আয়ের পরিবার প্রতিনিয়তই খাবার জোগাড় করাসহ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খায়। তাই কষ্ট করে তিনি ছাগল পালন করেন। একদিন তার পালিত ছাগলটি অন্যের ফসল খাওয়কে কেন্দ্র করে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তিনি লাঞ্চনার শিকার হন। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্তও হয়। পরে তিনি গ্রামের মুরুব্বিদের নিকট বিচার প্রার্থনা করেন। কিন্ত তাতে গড়িমসির সৃষ্টি হয়। সে সময় ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের কথা মনে পড়ে বানেরা বেগমের। তিনি ছুটে যান গ্রাম আদালতে। ১০ টাকা ফি দিয়ে সুবিচার পেতে মামলা করেন। তিনকার্য দিবসে জরিমানাসহ বিচারের রায় পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। সেই থেকে তিনি কম সময়ে ও অল্প খরচে প্রতিকার পাওয়ায় সাধারণ মানুষকে এখন গ্রাম আদালতের উপর আস্থা রাখারও পরামর্শ দেন। এমন বানেরা বেগমের মত উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ গ্রাম আদালতের মাধ্যমে সঠিক বিচার পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, ২০১৭ সনের জুলাই থেকে ১৯ মে পর্যন্ত উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে কুলকান্দি ইউনিয়নে ৫৩ মামলা দায়ের হয়ে ৪৪টি মামলা নিষ্পত্তি এবং ৯টি মামলা খারিজসহ ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। বেলগাছা ইউনিয়নে ১০৪টি মামলা দায়ের হয়ে ১০১টি নিষ্পত্তি ২টি মামলার খারিজসহ ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। চিনাডুলী ইউনিয়নের ৬৯টি মামলার মধ্যে ৬৪টি নিষ্পত্তি ও ৪টি খারিজ হয়ে ১টি মামলা চলমান রয়েছে এবং এতে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। সাপধরী ইউনিয়নে ৬৯টি মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি ৬৭টি ও ২টি খারিজ হয়ে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের ৬৩টি মামলার ৫৭টি নিষ্পত্তি ও ৬টি খারিজ হয়ে ২ লাখ ৪ হাজার ৯০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। ইসলামপুর ইউনিয়নে ৭৪টি মামলায় ৬৯টি নিষ্পত্তি ও ৫টি মামলা খারিজ হয়ে ৪ লাখ ৮১ হাজার ২০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। পাথর্শী ইউনিয়নের ১০২টি মামলার মধ্যে ৯৩টি নিষ্পত্তিসহ ৯টি মামলা খারিজ হয়ে ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৪২২ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। পলবান্ধা ইউনিয়নে ৮৪টি মামলার মধ্য ৮০টি নিষ্পত্তি ৪টি খারিজ এবং ৬ লাখ ১ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। গোয়ালেরচর ইউনিয়নে ৭১টির মধ্যে ৬৬টি নিষ্পত্তি এবং ৫টি বাতিল ও খারিজ হয়ে ৫ লাখ ৩৬ হাজার ১০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। গাইবান্ধা ইউনিয়নে ৭০টি মধ্যে ৬৮টি নিষ্পত্তি করে দুটি বাতিল হয় এবং ৭ লাখ ১ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। চর পুটিমারী ইউনিয়নে ৮৬টির মধ্যে ৭৬টি নিষ্পত্তি ১০টি খারিজ হয় এবং ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৪৫০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়। চরগোয়ালিনী ইউনিয়নে ৭৩টি মামলার মধ্যে ৬৯টি নিষ্পত্তি, ৪টি বাতিল ও ৪টি খারিজ হয় এবং ৯ লাখ ১১ হাজার ৯০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, বিগত দিনে যেকোনো অপরাধের বিচারের জন্য সাধারণ মানুষ গ্রাম থেকে থানা ও জেলা আদালতে দৌঁড়াতে হতো। এতে করে যেমন ছোট ছোট বিরোধের জন্য অনেক টাকা খরচ হতো, অন্যদিকে মামলার রায়ের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো । ফলে গ্রামের সাধারল দরিদ্র মানুষ আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউএনডিপি’র আর্থিক সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প সারাদেশে ২৭টি জেলায় ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলাসহ ইসলামপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত আছে।

গ্রাম আদালতে কেউ কোনো অভিযোগ আনলে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতের এখতিয়ারভুক্ত অভিযোগগুলো গ্রহণ করে এবং নিয়মানুয়াযী সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করা হয় বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা মাদারীপুর লিগাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের উপজেলা সমন্বয়কারী মোছা. রুবিনা বেগম জানান, সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায় বিচার পায়, হয়রানি যাতে না হয় সেই লক্ষ্যে গ্রাম আদালত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও ডিডিএলজি মহোদয়ের সময় উপযোগী পদক্ষেপ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়দের কার্যকরী তত্ত্বাবধান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের আন্তরিকতা এবং ফলেই গ্রামের সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জিত হচ্ছে।