বিপিএলের ফাইনালে ৮ ফেব্রুয়ারি মুখোমুখি ঢাকা-কুমিল্লা

বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
ফাইনাল দিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ আসরের পর্দা নামছে ৮ ফেব্রুয়ারি। তার আগে বিপিএলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়তে ফাইনালের মঞ্চে মুখোমুখি হবে গতবারের রানার্স-আপ ঢাকা ডায়নামাইটস ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শিরোপা জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে পারছে না দু’দল। ফাইনালের মঞ্চে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্য উন্মুখ হয়েছে সাকিব আল হাসানের ঢাকা ও তামিম ইকবালের কুমিল্লা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে ম্যাচটি।

টুর্নামেন্টের আগে থেকেই ফেবারিট হিসেবে ছিল ঢাকা। সাকিব আল হাসানের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, রুবেল হোসেনের মত পেসার, কাইরন পোলার্ড-আন্দ্রে রাসেল-সুনীল নারাইনের মত টি-২০ তারকারা থাকায় সঙ্গত কারণেই টুর্নামেন্ট ফেবারিট ছিল ঢাকা।

কাগজে-কলমে ফেভারিটের তকমা পাওয়া ঢাকা মাঠে দাপটের সাথে নিজেদের প্রমান করে। নিজেদের প্রথম চার ম্যাচেই জয় তুলে নেয় তারা। সবগুলো ম্যাচই ছিলো ঢাকার মাঠে। জয়ের বৃত্তে থেকেই সিলেট পর্ব শুরু করে ঢাকা। সেখানে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে সাকিবের দলের। সিলেটের মাটিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হেরে যায় তারা। তবে জয় দিয়ে সিলেট পর্ব শেষ করতে পেরেছিলো ঢাকা। সিলেটের মাটিতে নিজেদের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে জয় পেয়ে আবারো ঢাকা পর্ব শুরু করে ঢাকা।

তবে এবার নিজেদের মাঠে হতাশ হতে হয় ঢাকাকে। দু’ম্যাচের দু’টিতেই হারে তারা। এরপর চট্টগ্রাম পর্বে দু’টি ম্যাচই হারে ঢাকা। ফলে প্লে-অফে খেলা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় তারা। ঢাকায় পরের ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে মাত্র ১ রানে হেরে সমীকরনের মারপ্যাচে পড়ে যায় ঢাকা। প্লে-অফে খেলতে হলে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিলো না ঢাকার। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয় সাকিবের দল। খুলনা টাইটান্সকে হারিয়ে প্লে-অফ নিশ্চিত করে ঢাকা। তাই ১২ খেলায় ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থান পাওয়ায় এলিমিনেটরে খেলার টিকিট পায় সাকিব-রুবেলরা।

এলিমিনেটরে চিটাগং ভাইকিংসকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে নাম লেখায় ঢাকা। সেখানে অদম্য ছিলো ঢাকা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর রাইডার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মত বিপিএলের ফাইনালে উঠে ঢাকা (ঢাকা ডায়নামাইটস নামে তৃতীয়বার)।

ঢাকার মত কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে ফাইনালে আসেনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এবারের আসরে দাপট দেখিয়েই শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে উঠে তারা। জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও, নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই রংপুরের কাছে হেরে যায় কুমিল্লা। তবে এরপরই দুর্দান্তভাবে লড়াইয়ে ফিরে আসে । ঢাকায় ও সিলেটে দু’টি করে ম্যাচ জিতে নেয় কুমিল্লা। তবে ঢাকার দ্বিতীয় পর্বে দু’টি ম্যাচের মধ্যে একটিতে হয় পরাজিত । এরপর চট্টগ্রাম পর্বে দু’টি ও ঢাকায় দুই ম্যাচের মধ্যে একটিতে জিতে প্লে-অফে হেসেখেলেই জায়গা করে নেয় কুমিল্লা। ১২ খেলায় ১৬ পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয়স্থান পায় তামিম-ইমরুলরা। রংপুরের সাথে পয়েন্ট সমান হলেও, রান রেটে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকে কুমিল্লা।

টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকায় প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে খেলার টিকিট পায় কুমিল্লা। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিলো রংপুর। কিন্তু রংপুরকে পাত্তা না দিয়ে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে উঠে কুমিল্লা। এবার ঢাকার বিপক্ষে শিরোপা লড়াইয়ে নামবে কুমিল্লা।

কুমিল্লার শিরোপা নির্ভর করছে দলের সেরা তারকা তামিম-ইমরুল-সাইফউদ্দিন-মেহেদি হাসান-শহিদ আফ্রিদি-থিসারা পেরেরা-এভিন লুইস-ওয়াহাব রিয়াজের মত তারকাদের পারফরমেন্সের উপর। ব্যাট হাতে কুমিল্লার পক্ষে সেরাটা দিচ্ছেন তামিম। ১৩ ম্যাচে ২টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩২৬ রান করেছেন তিনি।

এরপরই কুমিল্লার পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভিন লুইসের। ১টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরিতে ৮ ম্যাচে ২৬৭ রান করেন তিনি।

বোলিং-এ কুমিল্লার পক্ষে দাপট দেখাচ্ছেন সাইফউদ্দিন-আফ্রিদি-রিয়াজ। সাইফউদ্দিনের শিকার ১৮উইকেট। বেশক’টি ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং-এ দলের জয়ে প্রধান ভূমিকা রাখেন সাইফউদ্দিন। এছাড়া আফ্রিদি ১৬ ও রিয়াজ ১৩ উইকেট শিকার করেছেন।

কুমিল্লার মত ঢাকার তারকা খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সও চোখে পড়ার মত। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাকিব। ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও বল হাতে তা পুষিয়ে দিচ্ছেন সাকিব। ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট শিকার তার। ২২ উইকেট শিকার করেছেন সিলেট সিক্সার্সের তাসকিন আহমেদও। তাই এখন অবধি এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে যৌথভাবে সবার উপরে সাকিব ও তাসকিন। ফাইনালের মঞ্চে ১ উইকেট পেলেই বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়ে যাবেন সাকিব। তবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের দৌঁড়ে আছেন ঢাকার রুবেলও। তার শিকার ২১। নারাইনের ঝুলিতে রয়েছে ১৮ উইকেট।

ব্যাট হাতে পুরোপুরিভাবে মেলে ধরতে না পারলেও ঢাকার পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কিন্তু সাকিবই। ২টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ২৯৮ রান রয়েছে সাকিবের। ৩ রান কম নিয়ে পরের স্থানেই রয়েছেন আন্দ্রে রাসেল। নারাইনের ব্যাট থেকে এসেছে ২৭৯ রান।

দুই দলই তারকায় ঠাসা। সুতরাং একটি জমজমাট ফাইনাল হবে বলেই ধারনা। বিপিএল ইতিহাসে আরো একটি দুর্দান্ত ফাইনালের অপক্ষোয় ক্রিকেট প্রেমিরা।

ঢাকা ডায়নামাইটস দল(সম্ভাব্য) : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), শুভাগত হোম, রনি তালুকদার, নুরুল হাসান সোহান, রুবেল হোসেন, কাজী অনিক, মিজানুর রহমান, আসিফ হাসান, শাহাদাত হোসেন রাজীব, নাইম শেখ, মোহর শেখ অন্তর, সুনিল নারাইন, রোভম্যান পাওয়েল, কাইরন পোলার্ড, লুক রাইট, আন্দ্রে রাসেল, হজরতউল্লাহ জাজাই, অ্যান্ড্র বার্জ ও ইয়ান বেল।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দল (সম্ভাব্য): তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আবু হায়দার রনি, এনামুল হক বিজয়, মেহেদি হাসান, জিয়াউর রহমান, মোশরারফ হোসেন রুবেল, মোহাম্মদ শহীদ, শামসুর রহমান শুভ, সঞ্জিত সাহা, লিয়াম ডসন, ওয়াহাব রিয়াজ, শহিদ আফ্রিদি, থিসারা পেরেরা, এভিন লুইস, ওয়াকার সালমা খাই ও আমির ইয়ামিন।
সূত্র : বাসস