জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবিতে জামালপুরে মানববন্ধন

সনাক ও টিআইবির আয়োজনে মানববন্ধন। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

‘জলবায়ু অর্থায়নে ঋণ নয় অনুুদান চাই’ এই স্লোগানে জামালপুরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পোল্যান্ডের কাতোভিতসেতে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৪ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দাবি উত্থাপনের জন্য সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি জামালপুর এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।

২৯ নভেম্বর সকালে শহরের দয়াময়ী মোড়ে ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কমর্সূচিতে বক্তব্য রাখেন সনাক সভাপতি অধ্যাপক মীর আনছার আলী, সনাক সদস্য অধ্যাপক এস এম কায়েদ-উয-জামান, অজয় কুমার পাল, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান নোমান প্রমুখ।

মানববন্ধনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক টিআইবি’র দাবি সম্বলিত এক ধারনাপত্র উপস্থাপন করা হয়। টিআইবি’র ধারনাপত্র ও দাবিসমূহ উত্থাপন করেন ইয়েস সদস্য মনিকা আক্তার।

এ সময় বক্তারা জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবের জন্য উন্নত বিশ্বকে দায়ী করে তাদের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ঋণের পরিবর্তে শর্তহীন অনুদান দাবি করেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশের সরকারসহ সকল অংশীজন ও নাগরিক সমাজকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসি) এ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশসমূহের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে উন্নত দেশসমূহ ‘দূষণকারী কর্তৃক পরিশোধযোগ্য’ যে নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে (অনুচ্ছেদ ৪.৪) কপ-২৪ সম্মেলন থেকে এটি আদায়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৩ এর আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতি তহবিল প্রদানের ব্যাপারে শিল্পোন্নত দেশসমূহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অনুদানভিত্তিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জলবায়ু অর্থায়ন এবং তার ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে টিআইবি ২০১১ সাল হতে ধারাবাহিকভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অংশীজনের সাথে গবেষণা-ভিত্তিক সুপারিশ বাস্তবায়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

টিআইবি জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত তার গবেষণালব্ধ সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বিসিসিটিএফ, কম্পট্রোলার অডিটর জেনারেলের কার্যালয়সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে অধিপরামর্শ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ফলে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন নিশ্চিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি ইতিমধ্যে টিআইবি প্রণীত জলবায়ু প্রকল্প তদারকি কৌশল এবং সামাজিক নিরীক্ষা টুল কেনিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, রুয়ান্ডা ও মেক্সিকোতে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিতে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের কোটি কোটি মানুষের স্বার্থে টিআইবি আসন্ন কপ-২৪ সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নে জলবায়ু অর্থায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা কাঠামো সম্বলিত রূপরেখা (রুলবুক) চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ প্যারিস চুক্তির সাক্ষরকারী দেশসমূহের সংশ্লিষ্ট অংশীজনের বিবেচনার জন্য পেশ করছে –

প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু অর্থায়নে উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় শ্রেণীর দেশের জন্য আইনী বাধ্যতামূলক, একটি ‘স্বচ্ছতা কাঠামো’ অবলম্বন করে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের শুদ্ধাচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদান নীতি বিবেচনা করে ঋণ নয়, শুধু সরকারি অনুদান, যা উন্নয়ন সহায়তার ‘অতিরিক্ত’ এবং ‘নতুন’ প্রতিশ্রুতির স্বীকৃতি দিয়ে জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞায়ন করা; স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থ নিশ্চিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের রুপরেখা চূড়ান্ত করা, উন্নত দেশগুলো হতে প্রয়োজনীয় সম্পদ (জলবায়ু তহবিল, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং কারিগরি সহায়তা) সরবরাহের জোর দাবি উত্থাপন করতে হবে; উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে চাহিদামাফিক জলবায়ু তহবিল প্রদানে একটি সময়াবদ্ধ রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা; ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশসমূহের পরিকল্পিত অভিযোজনের জন্য জিসিএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক তহবিল হতে প্রয়োজনীয় তহবিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথাসময়ে, সহজে সরবরাহের জন্য বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সমন্বিতভাবে (ক্লাইমেট ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে) দাবি উপস্থাপন করা এবং তা আদায়ে দর কষাকষিতে দক্ষতা প্রদর্শন করা; স্বল্পোন্নত দেশে অভিযোজন বাবদ অর্থায়নের অতিরিক্ত হিসেবে ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় বিশেষ তহবিল গঠন এবং তার জন্য দ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সোচ্চার হতে হবে; জলবায়ু-তাড়িত বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন, কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিতে জিসিএফ এবং অভিযোজন তহবিল থেকে বিশেষ তহবিল বরাদ্দ নিশ্চিত করা; এবং জিসিএফ এর ট্রাস্টি বোর্ডের কাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি সমতা-ভিত্তিক প্রতিনিধিত্বমূলক এবং কার্যকর ট্রাস্টি বোর্ড গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের অভিযোজন কার্যক্রমে অনুদানকে অগ্রাধিকার প্রদান করার জন্য সনাক টিআইবি’র মানববন্ধন থেকে দাবি জানানো হয়।