ক্যারিবিয়দের হোয়াইটওয়াশ করতে চায় বাংলাদেশ

বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ও শেষবারের মত টেস্ট সিরিজ জিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে কোন টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি টাইগাররা। তাই দীর্ঘদিন সিরিজ জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব ঘোচানোর সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে সাকিব আল হাসানের দল। ২৯ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ঢাকা টেস্ট জিতলে বা ড্র করলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দীর্ঘদিন পর সিরিজ জয়ের স্বাদ নিবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করাই প্রধান লক্ষ্য স্বাগতিকদের। তাই দলের কাছ থেকে চট্টগ্রামের চাইতেও ভালো পারফরমেন্স আশা করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অন্যদিকে, ঢাকা টেস্ট জিতে সিরিজ হার এড়াতে মুখিয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।

সাম্প্রতিক ফর্ম ও নিজেদের কন্ডিশনের কারনে ফেভারিট হয়েই টেস্ট সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। তবে চট্টগ্রামে সাগরিকার ভেন্যুতে বাংলাদেশের রেকর্ড ভাল নয় । সেখানে ১৭ ম্যাচে অংশ নিয়ে মাত্র একটিতে জয় পায় টাইগাররা। কিন্তু সিরিজ শুরুর আগে ভেন্যু নিয়ে কোন চিন্তাই ছিলো না বাংলাদেশের। নিজেদের কন্ডিশনে আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ব টাইগাররা। তাই সিরিজ শুরুর আগে নিজেদের পারফরমেন্স নিয়েই বেশি চিন্তিত ছিলো বাংলাদেশ।

কিন্তু চট্টগ্রামের ভেন্যুতে ব্যাট-বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে সেরা পারফরমেন্সই করেছে বাংলাদেশ। ৬৪ রানে ম্যাচ জিততে মোটেও বেগ পেতে হয়নি টাইগারদের। ব্যাটসম্যানদের চেয়ে বোলারদের নৈপুন্যটাই বেশি চোখে পড়ার মত ছিলো। দু’ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে শুধুমাত্র সেঞ্চুরি করেন মোমিনুল হক। তবে আর কোন ব্যাটসম্যানই হাফ-সেঞ্চুরি করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ১৬৭ বলে ১২০ রান করেন মোমিনুল। তাতে ৩২৪ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।

এই পুঁজি নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াই করে বাংলাদেশের বোলাররা। প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৪৬ রানে গুটিয়ে দেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা নাইম হাসান ও সাকিব আল হাসান। ৬১ রানে ৫ উইকেট নেন নাইম। ৪৩ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন সাকিব। প্রথম ইনিংস থেকে ৭৮ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ১২৫ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। ফলে ম্যাচ জয়ের জন্য ২০৪ রানের টার্গেট পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সেই লক্ষ্যে খেলতে মহাবিপদেই পড়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাত্র ৬ ওভারে ১১ রান যোগ হতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ক্যারিবীয়রা। শুরুর ধাক্কাটা পরবর্তীতে আর সামলে উঠতে পারেনি সফরকারীরা। সাকিব-মিরাজ ও তাইজুলের ঘুর্ণিতে পড়ে ১৩৯ রানে নিজেদের ইনিংস গুটিয়ে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাকিব-মিরাজ ২টি করে এবং তাইজুল ৬টি উইকেট নেন।

চট্টগ্রাম টেস্ট জয়ের দীর্ঘদিনের কষ্ট মুছে ফেলার দারুন এক সুযোগ পেল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আবারো সিরিজ জয়ের পথ পেল টাইগাররা। এজন্য ঢাকা টেস্টে হারা যাবে না বাংলাদেশকে। তবে হার এড়াতে চট্টগ্রাম টেস্টের চেয়েও ভালো পারফরমেন্স করতে হবে বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, ‘ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভালো করার চেষ্টা করবে। তারা ভালো করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। জিততেও পারে। তাই আমাদের জিততে হলে তাদের থেকে ভালো পারফর্ম করতে হবে। চট্টগ্রামে আমরা যেভাবে পারফর্ম করেছি তার চেয়েও ভালো করতে হবে। আমাদের নিজেদের ওপরই নিজেদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেগুলো টপকাতে হলে মানসিক ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে আমাদের।’

ঢাকা টেস্ট জিতলে দু’টি অর্জন হবে বাংলাদেশের। এক, সিরিজ জয়। দুই, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইওয়াশ করা। তাই সিরিজ জয়ের সাথে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার কোন চাপ বাংলাদেশ অনুভব করছে কি-না, এমন প্রশ্ন আজ সংবাদ সম্মেলনে রাখা হয়েছিলো সাকিবের সামনে। বেশ ফুরফুরা মেজাজে সাকিব বলেন, ‘না, আমার মনে হয় না অতিরিক্ত কোনো চাপ আছে। শেষ দুই দিনে ড্রেসিংরুমে সবাইকে খুব ফুরফুরে মেজাজে দেখেছি এবং সবাই খুব ভালো অবস্থায় আছে। ম্যাচের আগে একটা দলের যতটুকু আত্মবিশ্বাসের দরকার হয় ঠিক তাই-ই আছে। তবে যে কয়দিন টেস্ট চলবে সে কয়দিন যেন আমরা তা ধরে রাখতে পারি।’

এদিকে, গতকাল অনুশীলনে ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলে চোট পান মুশফিকুর রহিম। তবে আজ অনুশীলন করেছেন তিনি। তারপরও মুশফিকের খেলা নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকছে। কারন হাতের আঙ্গুলের ব্যান্ডেজ আছে তার। তাই মুশফিকের খেলা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সাকিব বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি যে মুশফিক ভাই খেলবেন। এমনকি দু’টি (ব্যাটিং-উইকেট কিপিং) কাজই করবেন।’

তবে ইতোমধ্যে মুশফিকের বিকল্প হিসেবে লিটন দাসকে দলে ডেকেছে বাংলাদেশ। ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের হয়ে বিসিএলের ম্যাচ খেলতে বগুড়ায় ছিলেন লিটন। জরুরি তলব পড়ায় বগুড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সকালেই রওনা হন লিটন।

বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিথুন, মোমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, আরিফুল হক, খালেদ আহমেদ,সাদমান ইসলাম ও লিটন দাস।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল : ক্রেইগ ব্রাফেট (অধিনায়ক), সুনীল অ্যাম্ব্রিস, দেবেন্দ্র বিশু, রোস্টন চেজ, শেন ডাউরিচ, শ্যানন গাব্রিয়েল, জাহমার হ্যামিল্টন, শিমরোন হেটমায়ার, শাই হোপ, শিরমন লুইস, কেমো পল, কাইরেন পাওয়েল, রেমন রেইফার, কেমার রোচ ও জোমেল ওয়ারিকান।
সূত্র : বাসস