ঢাকা ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ফাইনালে সরিষাবাড়ীকে পরাজিত করে জামালপুর পৌরসভা চ্যাম্পিয়ন ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে জামালপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল বকশীগঞ্জে অবৈধ চায়না জাল ও কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস শরিফপুরে ডাকাতির প্রস্তুতি, বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে আটক ৬ মেলান্দহে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিএনপি নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় ইসলামপুরে হামলা মামলার প্রতিবাদে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন জামালপুর বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির নির্বাচন ৪ অক্টোবর তারেক রহমান শিগগির দেশে ফিরবেন : এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত জামালপুর বিসিকে ৫ দিনব্যাপী উদ্যােক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ শুরু মেলান্দহে ২০৫০টি ইয়াবা বড়িসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
বই পর্যালোচনা

এ এস এম আব্দুল হালিমের ‘বিহঙ্গ কথা’ কাব্যগ্রন্থের একটি পর্যালোচনা

‘বিহঙ্গ কথা’ এ এস এম আব্দুল হালিমের কাব্যগ্রন্থ

সাহিত্যের একটি ধ্রুপদী মাধ্যম কবিতা। অ্যারিস্টেটল কবিতাকে সমাজ বদলের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করেছেন। মানুষের জীবনে কবিতার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কবিতার ছন্দ একদিকে যেমন মানব হৃদয়ে দোলা দেয়, অন্যদিকে জীবনবোধের উপলব্ধি জাগায়। সামাজিক মূল্যবোধ জাগাতে কবিরা সর্বজনীন ভূমিকা রাখেন। কবির কল্পনা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, সমাজ চেতনা জাগ্রত করে।

কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের (জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৪৮) সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তবে তার নাম ও কবিতার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল অনেকটা আকস্মিকভাবেই। ২০০৩ সালে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে এইচএসসি অধ্যয়নরত কালে সে বছর ডিসেম্বরে জামালপুর জেলার রজতজয়ন্তীর উৎসবে প্রকাশিত স্মরণিকায় তার লেখা ‘সৃষ্টি সুখ’ নামে একটি কবিতার মধ্য দিয়ে। কবি এ এস এম আব্দুল হালিম তখন সম্ভবত কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে চাকরি করেন। তার ‘সৃষ্টি সুখ’ নামের দীর্ঘ কবিতার
অংশবিশেষ নিম্নরূপ :
জেগে আছি এখনো
একটি ভাবের জন্য
জেগে আছি এখনো
একটি ছন্দের জন্য
জেগে আছি এখনো
একটি কবিতার জন্য।
[রজতজয়ন্তী : জামালপুর জেলার স্মরণিকা (২০০৩), ‘জেগে আছি’, পৃ. ৫৩]

এরপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ঢাকায় আসি। ঢাকার বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা না থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প নম্বরের জন্য ভর্তির সুযোগ না পেয়ে আমি ঢাকা কলেজে পড়ার সিদ্ধান্ত নিই। ২০০৯ সালের দিকে আমি মাস্টার্সে পড়ি। তখন কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের সঙ্গে আবার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ফোনে কথা বলে জানতে পারি, তিনি ঢাকার মতিঝিলে একটি ইন্সুরেন্সে উপদেষ্টার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। আমি ঐ অফিসে কয়েকবার তার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে গিয়েছি, মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলতাম। সেই থেকে আজও কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের সঙ্গে আন্তরিক পরিচয় অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এই তো কিছুদিন আগে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের জন্মদিন স্মরণে অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে বক্তৃতাও করেছি।

কবি এ এস এম আব্দুল হালিম আমলা হলেও চলনে বলনে ব্যবহারে অনন্য। একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ। অতি সাধারণ বাচন ভঙ্গি, নম্র, বিনয়ী, helpful, বন্ধুবৎসল-সব মিলিয়ে তিনি চমৎকার একজন মানুষ। তিনি সবকিছুতেই খুবই আশাবাদী। তিনি লেখালেখির ভুবনে রয়েছেন কিশোর বয়স থেকেই। তিনি বেশ প্রস্তুতি নিয়েই লেখালেখি শুরু করেছেন। কিশোর বয়সের লেখা কবিতাগুলো সংরক্ষণ করেননি, গ্রন্থ প্রকাশ করেননি তিনি। এ কারণে তার লেখক সত্তা পরিচয় ততোটা প্রচার পাইনি, যতটা পরিচিতি সুনামধারী সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে। কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘মোনালিসা, ‘যন্ত্রণা’, ‘শিশির বিন্দু’, ‘প্রেমসুধা’, ‘একটি ভালো মেয়ে’, ‘চিত্রাঙ্গদা ও আমি’, ‘কবিতা সংগ্রহ’, ‘Selected Poems’, `বিহঙ্গ কথা’, ‘নারী নানা বর্ণা’ ও ‘We Revolt’ উল্লেখ্যযোগ্য।

আলোচ্য ‘বিহঙ্গ কথা’ কাব্যগ্রন্থে তিনি তার দর্শন, স্বপ্ন, প্রকৃতি, প্রেম, আরাধনা ও জীবনাচরণের কথা তুলে ধরেছেন। একজন কবির দেশের প্রতি সমাজের প্রতি দায় রয়েছে। এ জন্যই বলা হয় কবিতার ভাষা বিশ্বজনীন। কবিরা দেশকে পাহারা দেন। কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের কবিতা পাঠ করে বিস্তৃত ও ক্ষুদ্র পরিসর এ দুটি সুর লক্ষ্য করা যায়। বিস্তৃত পরিসর বলতে গেলে মা-মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং ক্ষুদ্র পরিসরে নিজ এলাকার প্রতি ভালোবাসা, নিজ জেলার প্রতি ভালোবাসা, ইসলামপুরের নিজ গ্রাম বলিয়াদহের প্রতি ভালোবাসা। জন্মভূমির শিকড় তাকে খুব টানে, শৈশব-কৈশোরের নস্টালজিকতার চিত্র তার কবিতায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

২০২৫ সালের প্রকাশিত ‘বিহঙ্গ কথা’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত একাশিটি কবিতায় মোটাদাগে প্রেম, প্রকৃতি ও প্রার্থনা এই তিনটি প্রত্যয়ের অভিব্যক্তি ব্যাপক লক্ষ্য করা যায়। এসব কবিতায় মানবিক মর্যাদার দর্শনের সুস্পষ্টের ছাপ রয়েছে। যে দর্শন তিনি আশৈশব লালন করে এসেছেন, বিশ্বাস করে এসেছেন। এই দর্শন সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে মানবিক মর্যাদা ফিরে আসবে, বৈষম্য বিলোপন হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। মোট কথা,‘বিহঙ্গ কথা’ কাব্যগ্রন্থে প্রকারান্তরে নিজের দর্শনের কথাই ব্যক্ত করেছেন তিনি।

তার বিহঙ্গ কথা’ কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতায় শৈশব-কৈশোরের নস্টালজিকতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত তার কবিতার বিরহতাপিত হৃদয়ের আর্তসুর শোনা যায়। এ প্রসঙ্গে কাব্যগ্রন্থভুক্ত কয়েকটি কবিতাটির শব্দ চয়ন ও ভাষা লক্ষ্য করা যাক :

একি হাসি হাসিলে তুমি নন্দিতা?
তুমি কি জানতে চাও তব বয়সের ইতিহাস?
তব যৌবন সুবর্ণ-সুভাস?
কোমল দেহের সরস নির্যাস?
[বিহঙ্গ কথা (২০২৫), ‘নন্দিতা : রহস্যময়ী’, পৃ. ১৩]

তোমার অজানা নাই কিছু-
এই পথে আসি রোজ, ঘনছায়া, বৃক্ষ-তরু চিনি আমি
চিনি সবই আদি-অন্ত-বটবৃক্ষ, আম্রকুঞ্জ, বাঁশ বাগান, পুষ্পবৃন্ত।

এ বাড়ি-ওবাড়ি, উঠান-জলাধার-কাচারি
তুমি কোথা বাস করো, তা-ও আমি জানি।
তোমারেই দেখিতে আমি, এ পাড়াতে আসি
পড়ন্ত বেলায়, জলঘাটে কাহার সনে তুমি করো হাসাহাসি।
[বিহঙ্গ কথা (২০২৫), ‘তোমার অজানা নাই কিছু’, পৃ. ৪২]

কবিতা দুটির ইমেজ চিরদিন মনে রাখার মতো। নারীর চিরন্তন সৌন্দর্য এ কবিতা পাঠে ভাবনার জগতে জায়গা করে নিয়েছে। মা-মাটি-মানুষের কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের কবিতায় আবহমান বাংলাদেশের প্রকৃতি পরিবেশ-প্রতিবেশকে খুঁজে পাওয়া যায়। তার লেখার শৈলী অত্যন্ত সহজ সরল।
এ প্রসঙ্গে কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘একদিন গিয়েছিল গান’ কবিতায় ভাষা ও শব্দচয়ন লক্ষ্য করা যাক :

একদিন, বহুদিন হয়েছে গত
কতশত স্মৃতিবিজড়িত এ পথে হাঁটিয়াছি কত।
এই সমতল ভূমে, এই শস্যক্ষেত্রে ধবল ধবলীর হাম্বাধ্বনি
শ্রবণ করিয়াছি অবিরত!
পক্কশস্যকর্তন কৃষক-কৃষাণীর অপূর্ব-অনুপম শৈল্পিক নিদর্শন
কর্তন মৌসুম, আনন্দ কেতন!
[বিহঙ্গ কথা (২০২৫), ‘একদিন গেয়েছিল গান’, পৃ. ৫৬]

এই কবিতায় কবি শৈশব-কৈশোর-যৌবনের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। একজন মানুষের নস্টালজিকতা না থাকলে সে হৃদয়বান মানুষ হতে পারে না। কবিতাটিতে সুখস্মৃতির এমন সাবলীল অনুপ্রাস প্রকাশ যা মনোমুগ্ধকর এক আবেশ কল্পনায় ভেসে ওঠে। এ রকম অনেক কবিতা কাব্যগ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলোতে পাওয়া যায়।

গ্রন্থের নাম : বিহঙ্গ কথা, লেখক : এ এস এম আব্দুল হালিম, প্রচ্ছদ : ফারাহ আফজা বিনতে হালিম, জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, ঢাকা, প্রকাশকাল : বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা ২০২৫, পৃষ্ঠা ১১৯, দাম : ৩০০ টাকা, ISBN : 978-984-99836-4-4

শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
জনপ্রিয় সংবাদ

ফাইনালে সরিষাবাড়ীকে পরাজিত করে জামালপুর পৌরসভা চ্যাম্পিয়ন

বই পর্যালোচনা

এ এস এম আব্দুল হালিমের ‘বিহঙ্গ কথা’ কাব্যগ্রন্থের একটি পর্যালোচনা

আপডেট সময় ১১:০৫:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

সাহিত্যের একটি ধ্রুপদী মাধ্যম কবিতা। অ্যারিস্টেটল কবিতাকে সমাজ বদলের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করেছেন। মানুষের জীবনে কবিতার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কবিতার ছন্দ একদিকে যেমন মানব হৃদয়ে দোলা দেয়, অন্যদিকে জীবনবোধের উপলব্ধি জাগায়। সামাজিক মূল্যবোধ জাগাতে কবিরা সর্বজনীন ভূমিকা রাখেন। কবির কল্পনা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, সমাজ চেতনা জাগ্রত করে।

কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের (জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৪৮) সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তবে তার নাম ও কবিতার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল অনেকটা আকস্মিকভাবেই। ২০০৩ সালে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে এইচএসসি অধ্যয়নরত কালে সে বছর ডিসেম্বরে জামালপুর জেলার রজতজয়ন্তীর উৎসবে প্রকাশিত স্মরণিকায় তার লেখা ‘সৃষ্টি সুখ’ নামে একটি কবিতার মধ্য দিয়ে। কবি এ এস এম আব্দুল হালিম তখন সম্ভবত কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে চাকরি করেন। তার ‘সৃষ্টি সুখ’ নামের দীর্ঘ কবিতার
অংশবিশেষ নিম্নরূপ :
জেগে আছি এখনো
একটি ভাবের জন্য
জেগে আছি এখনো
একটি ছন্দের জন্য
জেগে আছি এখনো
একটি কবিতার জন্য।
[রজতজয়ন্তী : জামালপুর জেলার স্মরণিকা (২০০৩), ‘জেগে আছি’, পৃ. ৫৩]

এরপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ঢাকায় আসি। ঢাকার বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা না থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প নম্বরের জন্য ভর্তির সুযোগ না পেয়ে আমি ঢাকা কলেজে পড়ার সিদ্ধান্ত নিই। ২০০৯ সালের দিকে আমি মাস্টার্সে পড়ি। তখন কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের সঙ্গে আবার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ফোনে কথা বলে জানতে পারি, তিনি ঢাকার মতিঝিলে একটি ইন্সুরেন্সে উপদেষ্টার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। আমি ঐ অফিসে কয়েকবার তার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে গিয়েছি, মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলতাম। সেই থেকে আজও কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের সঙ্গে আন্তরিক পরিচয় অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এই তো কিছুদিন আগে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের জন্মদিন স্মরণে অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে বক্তৃতাও করেছি।

কবি এ এস এম আব্দুল হালিম আমলা হলেও চলনে বলনে ব্যবহারে অনন্য। একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ। অতি সাধারণ বাচন ভঙ্গি, নম্র, বিনয়ী, helpful, বন্ধুবৎসল-সব মিলিয়ে তিনি চমৎকার একজন মানুষ। তিনি সবকিছুতেই খুবই আশাবাদী। তিনি লেখালেখির ভুবনে রয়েছেন কিশোর বয়স থেকেই। তিনি বেশ প্রস্তুতি নিয়েই লেখালেখি শুরু করেছেন। কিশোর বয়সের লেখা কবিতাগুলো সংরক্ষণ করেননি, গ্রন্থ প্রকাশ করেননি তিনি। এ কারণে তার লেখক সত্তা পরিচয় ততোটা প্রচার পাইনি, যতটা পরিচিতি সুনামধারী সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে। কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘মোনালিসা, ‘যন্ত্রণা’, ‘শিশির বিন্দু’, ‘প্রেমসুধা’, ‘একটি ভালো মেয়ে’, ‘চিত্রাঙ্গদা ও আমি’, ‘কবিতা সংগ্রহ’, ‘Selected Poems’, `বিহঙ্গ কথা’, ‘নারী নানা বর্ণা’ ও ‘We Revolt’ উল্লেখ্যযোগ্য।

আলোচ্য ‘বিহঙ্গ কথা’ কাব্যগ্রন্থে তিনি তার দর্শন, স্বপ্ন, প্রকৃতি, প্রেম, আরাধনা ও জীবনাচরণের কথা তুলে ধরেছেন। একজন কবির দেশের প্রতি সমাজের প্রতি দায় রয়েছে। এ জন্যই বলা হয় কবিতার ভাষা বিশ্বজনীন। কবিরা দেশকে পাহারা দেন। কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের কবিতা পাঠ করে বিস্তৃত ও ক্ষুদ্র পরিসর এ দুটি সুর লক্ষ্য করা যায়। বিস্তৃত পরিসর বলতে গেলে মা-মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং ক্ষুদ্র পরিসরে নিজ এলাকার প্রতি ভালোবাসা, নিজ জেলার প্রতি ভালোবাসা, ইসলামপুরের নিজ গ্রাম বলিয়াদহের প্রতি ভালোবাসা। জন্মভূমির শিকড় তাকে খুব টানে, শৈশব-কৈশোরের নস্টালজিকতার চিত্র তার কবিতায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

২০২৫ সালের প্রকাশিত ‘বিহঙ্গ কথা’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত একাশিটি কবিতায় মোটাদাগে প্রেম, প্রকৃতি ও প্রার্থনা এই তিনটি প্রত্যয়ের অভিব্যক্তি ব্যাপক লক্ষ্য করা যায়। এসব কবিতায় মানবিক মর্যাদার দর্শনের সুস্পষ্টের ছাপ রয়েছে। যে দর্শন তিনি আশৈশব লালন করে এসেছেন, বিশ্বাস করে এসেছেন। এই দর্শন সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে মানবিক মর্যাদা ফিরে আসবে, বৈষম্য বিলোপন হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। মোট কথা,‘বিহঙ্গ কথা’ কাব্যগ্রন্থে প্রকারান্তরে নিজের দর্শনের কথাই ব্যক্ত করেছেন তিনি।

তার বিহঙ্গ কথা’ কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতায় শৈশব-কৈশোরের নস্টালজিকতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত তার কবিতার বিরহতাপিত হৃদয়ের আর্তসুর শোনা যায়। এ প্রসঙ্গে কাব্যগ্রন্থভুক্ত কয়েকটি কবিতাটির শব্দ চয়ন ও ভাষা লক্ষ্য করা যাক :

একি হাসি হাসিলে তুমি নন্দিতা?
তুমি কি জানতে চাও তব বয়সের ইতিহাস?
তব যৌবন সুবর্ণ-সুভাস?
কোমল দেহের সরস নির্যাস?
[বিহঙ্গ কথা (২০২৫), ‘নন্দিতা : রহস্যময়ী’, পৃ. ১৩]

তোমার অজানা নাই কিছু-
এই পথে আসি রোজ, ঘনছায়া, বৃক্ষ-তরু চিনি আমি
চিনি সবই আদি-অন্ত-বটবৃক্ষ, আম্রকুঞ্জ, বাঁশ বাগান, পুষ্পবৃন্ত।

এ বাড়ি-ওবাড়ি, উঠান-জলাধার-কাচারি
তুমি কোথা বাস করো, তা-ও আমি জানি।
তোমারেই দেখিতে আমি, এ পাড়াতে আসি
পড়ন্ত বেলায়, জলঘাটে কাহার সনে তুমি করো হাসাহাসি।
[বিহঙ্গ কথা (২০২৫), ‘তোমার অজানা নাই কিছু’, পৃ. ৪২]

কবিতা দুটির ইমেজ চিরদিন মনে রাখার মতো। নারীর চিরন্তন সৌন্দর্য এ কবিতা পাঠে ভাবনার জগতে জায়গা করে নিয়েছে। মা-মাটি-মানুষের কবি এ এস এম আব্দুল হালিমের কবিতায় আবহমান বাংলাদেশের প্রকৃতি পরিবেশ-প্রতিবেশকে খুঁজে পাওয়া যায়। তার লেখার শৈলী অত্যন্ত সহজ সরল।
এ প্রসঙ্গে কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘একদিন গিয়েছিল গান’ কবিতায় ভাষা ও শব্দচয়ন লক্ষ্য করা যাক :

একদিন, বহুদিন হয়েছে গত
কতশত স্মৃতিবিজড়িত এ পথে হাঁটিয়াছি কত।
এই সমতল ভূমে, এই শস্যক্ষেত্রে ধবল ধবলীর হাম্বাধ্বনি
শ্রবণ করিয়াছি অবিরত!
পক্কশস্যকর্তন কৃষক-কৃষাণীর অপূর্ব-অনুপম শৈল্পিক নিদর্শন
কর্তন মৌসুম, আনন্দ কেতন!
[বিহঙ্গ কথা (২০২৫), ‘একদিন গেয়েছিল গান’, পৃ. ৫৬]

এই কবিতায় কবি শৈশব-কৈশোর-যৌবনের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। একজন মানুষের নস্টালজিকতা না থাকলে সে হৃদয়বান মানুষ হতে পারে না। কবিতাটিতে সুখস্মৃতির এমন সাবলীল অনুপ্রাস প্রকাশ যা মনোমুগ্ধকর এক আবেশ কল্পনায় ভেসে ওঠে। এ রকম অনেক কবিতা কাব্যগ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলোতে পাওয়া যায়।

গ্রন্থের নাম : বিহঙ্গ কথা, লেখক : এ এস এম আব্দুল হালিম, প্রচ্ছদ : ফারাহ আফজা বিনতে হালিম, জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, ঢাকা, প্রকাশকাল : বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলা ২০২৫, পৃষ্ঠা ১১৯, দাম : ৩০০ টাকা, ISBN : 978-984-99836-4-4

শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক।