একটি দেশের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক পত্র-পত্রিকা সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য ঐতিহাসিক মর্যাদা লাভ করে। পত্র-পত্রিকা বা সাময়িকীর ক্ষেত্রে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ বা ধর্মকে ব্যবহার না করে জাতি-গোষ্ঠী ঊর্ধ্বে উঠে পক্ষপাত মুক্ত সংবাদ বা সাহিত্য প্রকাশই হলো একটি প্রগতিশীল পত্রিকার নীতি।
মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার (১৯০৫-১৯৮৫) সম্পাদিত ও প্রকাশিত এবং তার আমেনা প্রেস থেকে মুদ্রিত ‘সাপ্তাহিক তওফিক’ পত্রিকার মাধ্যমে তিনি জ্ঞান ও কর্ম দ্বারা নির্মোহভাবে সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার কাজটি করেছেন। এতে বোঝা যায়, তিনি প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ছিলেন।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে তার পত্রিকার নামের সঙ্গে মুসলিম শব্দটি ব্যবহার করলেও এই পত্রিকাটি একটি প্রগতিশীল পত্রিকা ছিল। এই পত্রিকার বিভিন্ন সংবাদ ও সাহিত্য পাতার লেখা পাঠ করলে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আমরা মনে করি, এই আলোকচিত্রের সংবাদটি এ-কথার অন্যতম প্রামাণক।

উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালের ২১শে মার্চ এ পত্রিকায় প্রকাশিত আলোচ্য সংবাদের পর্যালোচনা হচ্ছে-জামালপুর শহরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শতাধিক বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানের আয়োজন করে এসেছেন। জানা যায়, অষ্টমীর এই স্নান উপলক্ষে জামালপুর শহরের দয়াময়ী মন্দির সংলগ্ন মাঠে মেলা হতো। এ সংবাদে অষ্টমী স্নান উপলক্ষে কয়েকটি সমস্যা নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ ঊর্ধ্বতন মহলের সহৃদয় ও ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রার্থনা করেছেন।
আমরা মনে করি, মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার তার তওফিক পত্রিকাটির জন্য এতদ্দ্বৎ অঞ্চলে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
২য় কিস্তি
এই সংবাদের কম্পিউটারে টাইপকৃত পাঠোদ্ধার নিম্নরূপ :
আগামী ১৭ই চৈত্র ইং ৩১ শে মার্চ্চ বৃহস্পতিবার অষ্টমী স্নান উপলক্ষে জামালপুরে বিরাট জনসমাগম ও স্নানার্থীর ভিড় হইবে।
সহরে ইতিমধ্যেই অনেক স্থানে বসন্তের প্রাদুর্ভাব এবং পেটের অসুখ দেখা যাইতেছে মিউনিসিপাল কর্তৃপক্ষ সেনিটারী বিভাগ পূর্ব্বাহ্ণেই যথোপযুক্ত স্নান ঘাটের ব্যবস্থা, পাণীয়জলের ব্যবস্থা, পচা বাসী খাদ্য দ্রব্য নিষিদ্ধ করণ, স্নান যাত্রীর বিশ্রাম ব্যবস্থা ও সহর পরিষ্কার অভিযান আরম্ভ করিয়া সতর্কতা মূলক ব্যাবস্থাদী করা প্রয়োজন। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি।

প্রথম কিস্তি পড়ুন → বহুমাত্রিক মির্জা সাহেব : ইতিহাসের অনালোচিত অধ্যায় ‘সাপ্তাহিক তওফিক’