২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর শিশু অধিকার সপ্তাহ শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও জামালপুরে অনাড়ম্বর আয়োজনে রবিবার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। একই সাথে আজ বিশ্ব শিশু দিবস। দিবসটির প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে, ‘শিশুর অধিকার, রক্ষা আমাদের অঙ্গীকার’।
বছর ঘুরে যখন এ দিবস বা সপ্তাহ আসে তখন বক্তা বা আলোচকদের মুখে শিশু সুরক্ষা বিষয়ে আলোচনা, পত্রিকায় বড় বড় নিবন্ধ লেখাসহ নানা ধরণের তথ্যচিত্র লক্ষ্য করা যায়। সারা বছর আর কোন খবর থাকে না শিশু অধিকার রক্ষায় আমাদের অঙ্গীকার পালনের।
১৯৪৩ সালে ছাড়পত্র কবিতার মাধ্যমে কবি সুকান্ত এ পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। তার একত্রিশ বছর পর ১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে শিশুদের সুরক্ষায় শিশু আইন প্রণীত হয়। এর ১৫ বছর পর ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ প্রণয়ন করে। আইন ও সনদ বা নীতিমালা যাই রচিত হোক না কেনো শিশুদের জীবন ও ভাগ্যবদলে কতটুকু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে তা বিবেচনার বিষয়।
আমি সারাদেশের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কথা বলতে চাই না। দেশের অন্যতম অনগ্রসর জেলা জামালপুরে শিশু পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই।
গতকাল (২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার) বাংলারচিঠি ডটকমে প্রকাশিত খবরে এক তথ্যে জানা যায়, গত তিনমাসে জামালপুরে ১১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার, ২২ জন শিশু চরম শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে জামালপুর যৌনপল্লী থেকে ৯০ জনের অধিক শিশুকে মানাবাধিকার কর্মীরা পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করেছ বলে সূত্র জানায়।
জানা যায়, জন্ম নিবন্ধনের হার এখনও ৬০ থেকে ৬৫ ভাগের মধ্যেই আছে। জামালপুরে এত আন্দোলনের পর বাল্যবিয়ের হার ৬০ ভাগ অতিক্রম করেছে। জামালপুরে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ক্রমেই বাড়ছে। বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার আশঙ্কাজনক। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা কমছেই না। গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছেই। এছাড়া পরিবারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, খেলার মাঠে, পরিবহনে অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে শিশু যৌন, শারীরিক, মানসিক এবং আবেগীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেই।
বিভিন্ন শিশু বিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মীদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, বর্তমানে শিশুর সার্বিক বিকাশে অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে স্মার্টফোনের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যবহার, অনৈতিক আড্ডাবাজি, মাদকাসক্ত, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম, ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ চর্চা থেকে বিরত রাখা, তাদের সামনে আদর্শ না তুলে ধরতে না পারা, অভিভাবকদের বিলাসি এবং অবাঞ্ছিত জীবন যাপন, অপসংস্কৃতির রাহুগ্রাস ইত্যাদি।
আমাদের হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, ধর্মীয় সম্প্রীতির বিপরীতে পাশ্চাত্যের গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসছে প্রজন্ম। এর জন্য আমাদের পরিবার থেকে রাষ্ট্র যন্ত্র কম দায়ী নয়।
জামালপুরের কথাই যদি বলি এখানে ক্রমশই খেলার মাঠ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছ। বিদ্যালয় মাঠে খেলার বদলে সবজি চাষ করা হচ্ছে। পুকুর, জলাশয় ভরাট করে ফেলছে। এতে সাঁতার শিখতে পারছে না শিশুরা। বিদ্যালয়গুলোতে সহশিক্ষা কার্যক্রম নাই বললেই চলে। উদ্ভট শিক্ষা পদ্ধতি ও পরীক্ষা পদ্ধতি এবং নানা ধরনের সুশিক্ষা পরিপন্থি কার্যকলাপ গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটাকেই ধংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষায় নৈতিকতা বোধ অর্জনের বিপরীতে নকলবাজিই বেশি হচ্ছে।
শিশুদের সর্বোত্তম সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার শিশু পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়োপযোগী কার্যক্রম হাতে নিবেন বলে আশা করছি। বিশেষ করে জামালপুরে শিশুর স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর উদ্যোগ নিবেন বলে আশা করছি।