নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে চাপে থাকবে ভারত

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক :

বিশ্বকাপে নিজেদের পরিচিত পরিবেশে গ্রুপ পর্ব শেষে একমাত্র দল হিসেবে অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। এ পর্যন্ত দুর্দান্ত পারফরমেন্সে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ চারে বাড়তি চাপ ভারতের উপরই থাকবে বলে অনেকে মনে করছেন। নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলার লোকি ফার্গুসনের দাবী ১৫ নভেম্বর মুম্বাইয়ে সেমিফাইনাল ম্যাচে দুই দলকেই আবারো শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৩০ মিনিটে।

গ্রুপ পর্বে ৯ ম্যাচে শতভাগ জয় নিয়ে যদিও বাড়তি আত্মবিশ্বাসী রোহিত শর্মার দল। তাছাড়া তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলি আসরে এখনো সর্বোচ্চ ৫৯৪ রান সংগ্রহ করেছেন। অধিনায়ক রোহিত ৫০৩ রান নিয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই।

একইসাথে ফাস্ট বোলিং লাইন-আপে জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ ও মোহাম্মদ শমি – প্রত্যেকেই রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে।

একটি দলের সফলতার পিছনে ভাগ্য যদি কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে তবে সেটা এবারের বিশ্বকাপে ভারতের জন্য একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে। টুর্ণামেন্টের মাঝপথে ছন্দে থাকা অল-রাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার ইনজুরিতে কপাল খুলে যায় শামির। অভিজ্ঞ এই পেসার দলে ফিরে পাঁচ ম্যাচে ১০’এরও নীচে গড়ে ইতোমধ্যেই ১৬ উইকেট দখল করেছেন। পেস বোলারদের সাথে স্পিনার রবিন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদব নিয়মিত উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে এগিয়ে নিচ্ছেন।

নিজ মাটিতে ২০১১ সালে সর্বশেষ মুম্বাইয়ে শ্রীলংকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছিল ভারত। তৃতীয় শিরোপার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার পর আবারো ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা ভারতের সামনে এর চেয়ে ভাল সুযোগ আর আসবে না। বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে সর্বশেষ ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া।

এদিকে শেষ দুই বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে পরাজিত দল নিউজিল্যান্ড এবারের আসরে প্রথম চার ম্যাচে জয়ী হবার পর টানা চার ম্যাচে পরাজিত হয়। মুম্বাইয়ে সোমবার অনুশীলনের আগে গণমাধ্যমের কাছে ফার্গুসন বলেছেন, ‘আমাদের দুই দলকেই আবারো শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। কালকের ম্যাচটি ভিন্ন একটি ম্যাচ, নতুন দিন, আশা করছি চ্যালেঞ্জটা ভালই হবে।’

চার বছর আগে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টারে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ভারতকে ১৮ রানে পরাজিত করে ফাইনালের টিকেট পেয়েছিল। বৃষ্টির কারনে ম্যাচটি রিজার্ভ ডে’তে গড়িয়েছিল। এ পর্যন্ত ১৩টি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড নবমবারের মত সেমিফাইনালে খেলছে। ফার্গুসন বলেন, ‘ সে সময়ের অনুভূতি সত্যিই আমাদের সকলের জন্য বেশ আনন্দের ছিল। কিন্তু চার বছর পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে আমরা প্রচুর ক্রিকেট খেলেছি।’

২০১৯ সেমিফাইনালে অংশ নেওয়া পাঁচজন খেলোয়াড় – রোহিত, কোহলি, কেএল রাহুল, বুমরাহ ও জাদেজা বর্তমান ভারতীয় দলে আছেন । আগামীকাল এই পাঁচজনেরই খেলা প্রায় নিশ্চিত।

ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে সব দলই টুর্ণামেন্টের শেষ ধাপে রয়েছে, এখানে আর ভুলের সুযোগ নেই। ভারতের উপর কিছুটা হলেও প্রত্যাশার চাপ থাকবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি সেই চাপ সামলে আমরা ভালভাবেই ম্যাচটি উপভোগ করতে পারবো। আমাদের নিজেদের উপর সেই আস্থা আছে।’

গত মাসে ধর্মশালায় গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকে চার উইকেটে হারিয়ছিল ভারত। ড্যারিল মিচেলের ১৩০ রান সত্ত্বেও ভারত নিউজিল্যান্ডকে ২৭৩ রানে আটকে দেয়। শামি ৫৪ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। কোহলির ৯৫ জাদেজার অপরাজিত ৩৯ রানে ভারতের জয় নিশ্চিত হয়।

মুম্বাইয়ের ওয়ানখেড়ে স্টেডিয়াম ভারতীয় অধিনায়ক রোহিতের হোম গ্রাউন্ড। এই মাঠেই গ্রুপ পর্বে শ্রীলংকাকে মাত্র ৫৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৩০২ রানের বিশাল জয় পেয়েছিল ভারত। ৩৬ বছর বয়সী ওপেনার রোহিতের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ভারত বড় স্কোর গড়ে তুলে। ধারনা করা হচ্ছে এটাই রোহিতের শেষ বিশ্বকাপ। ভারতীয় ব্যাটিং লিজেন্ড দ্রাবিড় বলেন, ‘রোহিতের নেতৃত্বগুন নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সে আমাদের জন্য প্রায় প্রতি ম্যাচে দারুনভাবে শুরু করেছেন।’

তবে নিউজিল্যান্ড দলেও পরীক্ষীত বিশ^মানের ব্যাটার রয়েছে। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের দক্ষতা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। ইনজুরি থেকে সুস্থ হয়ে টুর্নামেন্টে ফিরে এসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৫ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন।

ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি অভিজ্ঞ পেসার হিসেবে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের সাথে রয়েছেন ফার্গুসন। বাঁ-হাতি স্পিনর মিচেল স্যান্টনার ইতোমধ্যেই ১৬ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন।

তবে এবারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় সম্পদ ২৩ বছর বয়সী রাচিন রবিন্দ্রকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতেই হচ্ছে ভারতকে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই বাঁ-হাতি ব্যাটার ইতোমধ্যেই তিন সেঞ্চুরিসহ ৫৬৫ রান সংগ্রহ করেছেন । এটাই রাচিনের প্রথম বিশ্বকাপ। রাচিন বলেছেন, ‘ওয়ানখেড়েতে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকের সামনে ভারতের বিপক্ষে খেলাটা স্বপ্ন সত্যি হবার মত। এই মাঠের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ।’

ফার্গুসনও রাচিন প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ঘরোয়া পর্যায় থেকে আমি রাচিনের উন্নতি দেখেছি। তার সাথে নিউজিল্যান্ডের কিছু প্রথম শ্রেণীর ম্যাচও খেলেছি। তার মধ্যে আলাদা একটি প্রতিভা আছে। ক্রিকেটের পাড় ভক্ত বলতে যা বোঝা রাচিন সেটাই। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সেহ নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। এই বিশ্বকাপে তার উন্নতি দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত।’