প্রেমের টানে ইন্দোনেশিয়ায় জামালপুরের তরুণ

ইন্দোনেশিয়ায় বিয়ের সাজে সিতি ও অর্ক।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: সচরাচর শোনা যায় প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসে ভিনদেশী তরুণ তরুণী। বিয়ে করেন পছন্দের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে। আবার অনেকেই বাধেন সুখের ঘর। কেউ আবার একটি সময় পর ফের পাড়ি জমান নিজ দেশে। কিন্তু এবারের চিত্রটি ভিন্ন। এবার প্রেমের টানে ইন্দোনেশিয়া গিয়েছে অর্ক নামে জামালপুরের এক তরুণ। সেখানে ১০ নভেম্বর বিয়ে করেছেন প্রেমিকা সিতি মারিয়াকে।

২৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ তানজিলুর রহমান অর্ক জামালপুর শহরের বানিয়াবাজার এলাকার মো. মিজানুর রহমানের সন্তান।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষে একটি বেসরকারি আইটি প্রতিষ্ঠানে চিফ অপারেটিং অফিসার পদে চাকরি করছেন তানজিলুর রহমান অর্ক।

তানজিলুর রহমান অর্ক জানান, ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট মুসলিমা ডটকম নামে একটি সাইটি একাউন্ট করেন তিনি। এরপর তার সাথে কথা হয় সিতি মারিয়া (২৩) নামে এক নারীর।

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে ৪০ মিনিটের দূরে বগর জেলার সেলতুন সিটির জাবা প্রবিন্স নামক এলাকায় বাস করেন সিতি মারিয়া। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় সিতি মারিয়া। তার বাবা ওমর একজন ব্যবসায়ী। লেখাপড়া শেষে সিতি মারিয়া সেখানকার তাসকিয়া গ্লোবাল ইসলামিক বিদ্যালয়ে কোরআন হাদিস বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন।

ইন্দোনেশিয়ায় ঘুরাঘুরির সময় সিতি ও অর্কর সেলফি।

মুসলিমা ডটকমে পরিচয় হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসএপে নিয়মিত কথা বলতে বলতে একসময় গভীর প্রেম হয় দুইজনের। এরপরই তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

নানা জটিলতায় শেষ করে গত ১৮ অক্টোবর বিমানযোগে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশে পাড়ি জমান অর্ক।

মোবাইল ফোনে তানজিলুর রহমান অর্ক এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার অনেক আগেই ইন্দোনেশিয়াতে আসার কথা ছিলো। প্রথমে করোনার কারণে এরপর অনেকদিন ভিসা বন্ধ ছিলো। ভিসা চালু হওয়ার পর আবার ভিসা জটিলতা দেখা দেয়। তার জন্য আসতে দেরী হয়েছে। এখানে এসে অনেক কাগজপত্র ঠিক করতে হয়েছে। এর জন্য বিয়ে দেরী হয়েছে।’

অর্ক আরো বলেন, ‘বিয়ের পর সিতিকে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অনেক কাগজ পত্রের প্রয়োজন। এসব করতে আরও ৬ মাসের মতো সময় লাগবে। সব কাজ শেষ করে ইনশা’আল্লাহ ৬ মাস পর আমরা বাংলাদেশে থাকবো।’

তানজিলুর রহমান অর্ক বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে দোয়া চাই যাতে আমরা সুখি হতে পারি। বিয়ের পর আমাদের নিয়মিত যাতায়াত থাকবে। আমি সিতির সকল সিদ্ধান্তে একমত। সিতি চাইলে বাংলাদেশেও থাকতে পারে, ইন্দোনেশিয়াতেও থাকতে পারে। এই বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।’

মোবাইল ফোনে সিতি মারিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আগে বাংলাদেশের ছেলেদের সম্পর্কে আমাদের খারাপ ধারণা ছিলো। কিন্তু এখন অর্কের সাথে মিশে সেই ধারণা বদলে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত মিশুক ও সহজ সরল। এখানে কাগজপত্র ঠিক হলেই আমি বাংলাদেশে যাবো।’

এদিকে বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে।

জামালপুরের মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘আমরা সবসময় শুনি যে প্রেমের টানে বিদেশ থেকে তরুণ তরুণী আসে। কিন্তু এবার প্রেমের টানে জামালপুরের এক তরুণ ইন্দোনেশিয়া গিয়েছে। এই বিষয়টি একটু ভিন্ন রকম হয়েছে। শুনতেও ভালো লাগে। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখা যায়।’