নাহিদের উদ্ভাবিত ১২ হাজার টাকার মোটর বাইক লিটারে চলে ৯০ কি: মি:

নিজের বানানো বাইকে নাহিদ। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নিজের ছোট্ট গ্যারেজে কাজ শুরু করেছেন সবেমাত্র। তেমন কারিগরি জ্ঞান রপ্ত করার সুযোগ হয়েও উঠেনি। তবু নিজের মেধা খাটিয়ে মাত্র একমাস পরিশ্রমের পর মাত্র ১২ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন একটি মোটরবাইক। স্থানীয়রা বলছেন, ওই মোটর বাইক দেখতে এখন প্রতিনিয়ত ভীড় করছে তার নিজ এলাকাসহ আশ-পাশের গ্রামের হাজারো মানুষ। শুধুমাত্র পুরনো বাইসাইকেল ও মোটর বাইকের কিছু যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে তৈরি করা হয় জ¦ালানী সাশ্রয়ী এই মোটর বাইক। আলোচিত ওই যুবকের নাম নাহিদ।

তার বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের সন্নাসীরচর গ্রামে। নাহিদ ওই গ্রামের আব্দুল মালেক ভান্ডারি ও নাজমুন্নাহারের ছেলে।

এলাকাবাসী জানায়, নাহিদ দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা পেশায় একজন বাউল শিল্পী ও মা গৃহিনী। ছোটবেলা থেকেই নাহিদ খুব চঞ্চল প্রকৃতির। সে এক সময় জুতা তৈরির কারখানায় কাজ করতো। পরে তার মা-বাবা বাড়ির পাশে একটি ছোট গ্যারেজ প্রতিষ্ঠা করে দেয়। সেখানেই নাহিদ ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও বাই সাইকেল মেরামতের কাজ করতো। এক সময় নাহিদ নিজের মেধা ও চেষ্টা দিয়ে তৈরি করে ফেলেন জ¦ালানী সাশ্রয়ী মোটরবাইক। ওই বাইক প্রতি লিটার তেলে চলে প্রায় ৯০ কি: মি:। যা দেখে সবাই বিস্মিত।

স্থানীয় শরীফুন্নেছা বলেন, আমাদের এলাকার ছেলে নাহিদ অল্প খরচে মোটর সাইকেল তৈরি করেছে। আর ওই মোটর সাইকেল চালাতে জ্বালানী তেলের খরচও কম। এখন সরকার তাকে সাহায্য করলে ওই মোটর সাইকেলের উন্নত সংস্করণ সে তৈরি করতে পারবে।

নাহিদের বাইক। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নাহিদের বাবা আব্দুল মালেক ও মা নাজমুন্নাহার বলেন, কিছু দিন আগে নাহিদকে একটি গ্যারেজ তৈরি করে দেই। তার ব্যবহারের জন্য একটা পুরাতন বাই সাইকেল ছিল। সেটা ভেঙে চুরে ইঞ্জিন সংযোজন করে গাড়ি তৈরি করেছে। ওই গাড়ি খুব দ্রæত পেট্রোলে চলে। এটা দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষজন বাড়িতে ভীড় জমাচ্ছে। আমার ছেলে এতটুকু কাজ করেছে এটাই আমাদের গর্ব।

উদ্যোক্তা নাহিদ বলেন, সবাই বাইক চালায় তা দেখে আমারও বাইক চালোর ইচ্ছা জাগে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সে ইচ্ছা আর পুরণ হয়ে ওঠে না।

নাহিদ আরো বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে মাথায় আসে আমার পুরাতন বাইসাইকেলটি কিভাবে বাইকে রূপান্তর করা যায়। সে ইচ্ছা থেকে নানাভাবে বাইকের পুরাতন যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করি। পরে তা বাইসাইকেলের সাথে জুড়ে দেই। এই বাইকটি তৈরি করতে এক মাস সময় লেগেছে আর খরচ পড়েছে ১২ হাজার টাকা। আর এটি এক লিটার পেট্রোলে চলে প্রায় ৯০ কিলোমিটার।

সদর উপজেলার কামারেরচর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, নাহিদের প্রতিভায় আমরা ইউনিয়নবাসী কৃতজ্ঞ। সে যদি ভবিষ্যতে ওই বাইকটির উন্নত সংস্করণ নিয়ে আরো কাজ করতে চায় তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগীতা করা হবে। পাশাপাশি সরকারের তরফ থেকেও অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করা হবে।