উৎপাদন খরচ বাড়ায় পাটের ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্কিত শেরপুরের কৃষকরা

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: শেরপুরে এবার পাটের ফলন ভাল হয়েছে। তবে বাজারে কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। চাষিরা বলছেন, সার, তেল ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। শুধু তাই না বৃষ্টির অভাবে পানির সংকটে সেচের পানি কিনে পাট পঁচাতে অতিরিক্ত খরচ গুণতে হচ্ছে। ফলে পাটের মূল্য নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। অন্যদিকে বিকল্প উপায়ে কম খরচে পাট উৎপাদনের পদ্ধতি অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, শেরপুরে এবার ২ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় পাটের ফলন আশাতীত হয়েছে।

শ্রীবরদীর তাঁতীহাটি গ্রামের কৃষক আলতাফ মিয়া বলেন, এবার হুহু করে বেড়েছে সার, তেল ও শ্রমিকের মজুরি। ফলে পাট উৎপাদনে অনেকটাই খরচ বেড়েছে। এখন চলছে পাট কাটা, পঁচানো ও পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়ে শুকানোর কাজ।

আরেক কৃষক আকাব্বর মিয়া বলেন, বৃষ্টির অভাবে অনেকে সেচের পানি কিনে পাট পঁচাতে পানির ব্যবস্থা করছেন। এতে বাড়ছে খরচের মাত্রা। এবার পাটের মূল্য না বাড়লে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।

সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক লতিফ মিয়া বলেন, এবার এক একর জমিতে পাট রোপণ করে ছিলাম। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২২ মণ। এরমধ্যে প্রতিটি শ্রমিক পিছু মজুরি দিতে হয়েছে সাতশ টাকা। পাট পঁচানোর জন্য সেচের পানি নিতে খরচ হয়েছে ঘণ্টায় দুইশ টাকা। আর পাইকাররা প্রতি মণ পাটের দাম বলছে ২০০০-২২০০ টাকা। সংসার চালাতে গিয়ে ঘাটতির মধ্যে আছি।

কৃষাণী তবেজা খাতুন বলেন, ৭০০-৮০০ টাকা শ্রমিক মজুরি, দুই বেলা খাবার দিতে হয়। এছাড়া জমিতে হালের খরচ ও সার কিনতে অনেক খরচ পড়ে যায়। অন্যদিকে বাজারে পাটের ন্যায্য মূল্য না থাকায় এ আবাদ আর পোষাচ্ছেনা।

শ্রমিক আফাজ মিয়া বলেন, পাট পরিষ্কার করতে দৈনিক ভিত্তিতে আটশ টাকা মজুরি নেই। বর্তমানে বাজারে পাটের দাম কম। এ কারণে গৃহস্থরা বিপদে পড়েছে। আনেকে আগামীতে পাটের আবাদ ছেড়ে দিতে চাচ্ছে। এখন গৃহস্থরা যদি পাট আবাদ ছেড়ে দেয় তাহলে মৌসুমের এই সময়ে আমরা বেকার হয়ে পড়বো। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে আগাম জাতের বোরো ধান চাষ করলে সেই জমিতে বোনাস ফসল হিসাবে পাট চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায় বলে উল্লেখ করেছেন জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুলতান আহমেদ।

এ সময় তিনি পাট পঁচাতে পানির সংকট মোকাবেলায় রিমন্ড পদ্ধতি অবলম্বন করতে কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান।