ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ উজান থেকে বয়ে আসা পানি প্রবাহ সামান্য কমলেও গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় এই পর্যন্ত ২ লাখের বেশি মানুষ দুর্গত হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) কর্মকর্তারা জানান, ২১ জুন সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার ১০টি পয়েন্টে প্রধান নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান নদীগুলোর পানির স্তর তুলনামূলক কম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কিছু নিচু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

একই সময়ে ধরলা কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার এবং গাইবান্ধা পয়েন্টে ঘাগোটে ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ১০৭ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার এবং ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৮ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বাহাদুরাবাদে যমুনা বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

২১ জুন সকাল ৯টায় সারিয়াকান্দি, কাজিপুরে বিপদসীমার ৫০ সেমি এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৪৯ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় পানির স্তর কমে যাওয়ায় পাটেশ্বরীতে দুধকুমার বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার এবং ডালিয়ায় তিস্তা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিডাব্লিউবিডি-এর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেদ্রের (এফএফডাব্লিউসি) এক বুলেটিন অনুসারে, ২১ জুন সকাল ৯টায় শেষ হওয়া গত ২৪ ঘণ্টার রেকর্ড করা বৃষ্টিপাত ছিল চেরাপুঞ্জিতে ১৬৪ মি.মি. এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাসিঘাট পয়েন্টে ৫৭ মি.মি.।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং ভারতের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যের উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম।

বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, ‘কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।’

বিডাব্লিউবিডি- এর রংপুর জোনের প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঁইয়া এবং তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করার পাশাপাশি রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার প্রধান নদীগুলোর পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করছেন।

ইঞ্জিনিয়ার ভূঁইয়া বলেন, রংপুর বিভাগের বিডব্লিউবি’র রংপুর জোনের বন্যা নিযন্ত্রন বাধ এবং অবকাঠামোগুলো নিরাপদ রয়েছে।

রংপুর আঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. ইমদাদ হোসেন শেখ বলেন, রংপুর কৃষি অঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের ১৫,৬৯৭ হেক্টর জমির উঠতি ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

এ সব ফসলের মধ্যে রয়েছে ৫০৩ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা, ১,৫৫৯ হেক্টর জমির শাকসবজি, ৩,০১৬ হেক্টর জমির আউশ ধান, ১৩৮ হেক্টর জমির বাদাম, ১০,০৮৩ জমির পাট এবং ৩৯৫৮ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসল।

তিনি বলেন, আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে বন্যার পানি নেমে গেলে এ সব ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। তিনি আরো জানান, বন্যা দীর্ঘায়িত হলে এবং ফসলের ক্ষতি হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বন্যাদুর্গত কুড়িগ্রাম জেলার জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার বলেন, বন্যা পরিস্থিতি এখনো অবনতির দিকে, তবে গতকালের পর থেকে উজান থেকে পানি নেমে আসার পরিমান হ্রাস পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নের ৩১৯টি গ্রামের ৩,৫৪,৪০০ পরিবারের প্রায় ১,৪১,৬১২ জন মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসন জেলার ৯ টি উপজেলা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৩৩৮ টন চাল, ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বর্ন্যাতদের মধ্যে বিতরণ করেছে।

পাশাপাশি, ১৮ লাখ টাকার শিশু খাদ্য এবং ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পশু খাদ্য জেলার বন্যা দুর্গত এলাকায় বিতরন করা হয়েছে। বন্যার্ত লোকদের চিকিৎসা সেবায় ৮৫ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

বন্যার কারণে জেলার ২৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতটি মাদ্রাসা এবং একটি কলেজসহ ৩২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল ওহাব ভূঁইয়া বলেন, রংপুর বিভাগের বন্যা উপদ্রুত জেলার বর্ন্যাত লোকদের সহায়তায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।সূত্র:বাসস।