কাছ থেকে দেখা বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে আনন্দময় কিছু প্রহর

ঢাকায় বিশ্বকাপ ট্রফির সামনে লেখক।

নজরুল ইসলাম:
৪০ বছর যাবত দেখেছি। দূর থেকে, বহুদূর থেকে। কখনও টিভির পর্দায়। কখনও পত্রিকার পাতায় দেখেছি। সেই কৈশোরে আবেগঘন জীবনে, রাতের পর রাত জেগে ম্যাচ দেখার এক অনন্য অনুভূতি। চার বছর পরপর ফিরে আসা সেই উত্তেজনা- নতুন রূপ, নতুন আকর্ষণ! আজ পৌঢ়ত্বের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আবেগ কমেছে, তবে আকর্ষণ রয়েছে অম্লান। বিশ্বকাপ! প্রতিটি লড়াই, প্রতিটি উত্তেজনা উপভোগ করেছি। নিজের দল, নিজের দেশ নেই ওই বিশ্বমঞ্চে। তাতে কি! সমানুভূতির ময়ুরপঙ্খি ডানা হাওয়ায় মেলেছি। বন্ধুদের সামনে আউড়েছি সুনীলের কবিতা – দেখিস একদিন আমরাও – -! সেই দেখা হয়নি এতদিনেও। সুযোগ হয়নি কাছে যাবার, কাছে থেকে দেখার। পুলকিত শিহরিত মাহেন্দ্রক্ষণ আসেনি কখনও। আর আজ! আজ সেটা কত কাছে! চোখ মেললেই দেখা যায়। হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়- এমন দূরত্বে।

আজ সকালে (৯ জুন) হোটেল রেডিসনে গিয়েছিলাম। হলরুমে সাজানো বিশ্বকাপটা। বহু দর্শনার্থী ছিল লাইন ধরে। আমার ছেলে ইনান ছিল সাথে। তাড়না ছিল তারই বেশি। ছিল আমার এনডিসি সতীর্থ ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল শরীফ ভাইয়ের সহযোগিতা। আর দু’হাত বাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ব্রিগ্রেডিয়ার (অব.) লুৎফুল কবীর। বেশ সময় নিয়েই আমরা থেকেছি। উপভোগ করেছি। তারই লেশমাত্রভাগ শেয়ার করছি বন্ধুদের সাথে।

প্রায় সোয়া ছয় কেজি ওজন। ১৮ কেরেট সোনা দিয়ে বানানো। বাজারদরে সোনার মূল্যমান দাঁড়ায় প্রায় ১৯ কোটি টাকা। কত ধনীই তো আছে, যারা কিনে নিতে পারে এই কাপ। কারও কারও ঘরে আছে এর চেয়ে বেশি সোনা। আমাদের চর্যাপদের একজন কবির ঘরেও তো ছিল পৌনে চার মণ সোনা! কিন্তু না। এই একটি কাপের সাথে সোনার মূল্যমান, ধনী ব্যক্তির সঞ্চিত সোনার দাম মেলানো যায় না। বিশ্বের শত শত কোটি মানুষের আবেগ, আকর্ষণ জড়িয়ে আছে এই কাপটির প্রতি। আজীবন অনুশীলন করে, শ্রম দিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে, শিল্প, গতি আর দক্ষতার পরাকাষ্ঠায় নিজেদেরকে শীর্ষে নিয়ে তবেই মেলে ওই কাপটি। নিছক আর্থিক দামে একে মূল্যায়ন করা যায় না। এটা আর্থিক দামের অনেক উর্ধের মহামূল্যবান আকর্ষণ।

ইটালীর ডিজাইনার, শিল্পীরা গড়েছেন এবারের কাপটি। দাম নিয়েছেন চার বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশী টাকায় যা দাঁড়ায় প্রায় ৩৭ হাজার দুইশ কোটি টাকা মাত্র! কাপটি বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে চার্টার্ড ফ্লাইটে করে। আজই চলে যাবে চাটার্ড ফ্লাইটে। সারা বিশ্বে ফুটবলের শিহরণ ছড়িয়ে, তারপর যাবে কাতারে। ফিফার মাত্র ১৫ জন জন নিরাপত্তা কর্মী আছে এই কাপটির সাথে। আর প্রত্যেক দেশের পুলিশসহ নানা বাহিনী তো আছেই। ঢাকায় কাপটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার নেতৃত্বে আছে পুলিশের একজন এসপি। আছে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাও। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো হোটেলে এই কাপটি সংরক্ষণ করার জন্য রয়েছে দুটো রুম । না না। একটা রুমে বসা আর অন্য রুমে শুয়ে থাকার ব্যবস্থা- সেই রকম নয়। সংলগ্ন কক্ষেই থাকছেন নিরাপত্তারক্ষী অফিসারগণ। আর ওপরে-নীচে, চারপাশের কক্ষগুলো জুড়ে আছে নিরাপত্তা বলয়। কাপটির স্পর্শকাতরতা, ফিফার ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য এই নিরাপত্তা; মোটেও বাড়াবাড়ি রকমের নয়।

আকর্ষণ, ভালোবাসা, সন্তানের আবদার সব মিলিয়ে এই মুহূর্তটা আমার কাছেও অনন্য, আবেগঘন এবং আনন্দমুখর।

লেখক: জামালপুরের সাবেক পুলিশ সুপার