কমিউটার ট্রেনে ডাকাতের হামলায় মৃত্যু ২, রেলওয়েতে তোলপাড়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

ঢাকা-জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে যাত্রীবাহী জামালপুর কমিউটার ট্রেনের ছাদে ডাকাতদের হামলা ও মালামাল লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ওই হামলায় গুরুতর আহত দু’জন যাত্রীর মৃত্যু এবং একজন যাত্রী জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হতাহতদের সবার বাড়ি জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায়। ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে মৃত দুজনের ময়নাতদন্ত শেষে তাদের পরিবারের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ট্রেনের ছাদে ডাকাতি ও দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে রেলওয়ে পুলিশসহ সর্বত্র তোলপাড় চলছে। রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের একজন এসপিসহ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ২৪ সেপ্টেম্বর জামালপুর পরিদর্শন করে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

ডাকাতের হামলায় মারা যাওয়া দু’জন যাত্রীর মধ্যে একজন হলেন- জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের মো. ওয়াহিদুজ্জামানের ছেলে মো. নাহিদ হাসান (৪০)। নাহিদ গাজীপুরে নেসলে কোম্পানিতে চাকরি করতেন। স্ত্রীকে নিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে জামালপুর কমিউটার ট্রেনে দেওয়ানগঞ্জে নিজ বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। ট্রেনে অনেক ভিড় থাকায় স্ত্রী বিপাসাকে ট্রেনের বগিতে রেখে নাহিদ ট্রেনের ছাদে উঠে আসছিলেন। ট্রেনের ছাদে ডাকাতদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মারা যান তিনি।

মৃত অপরজন হলেন জামালপুর শহরের বাগেরহাটা এলাকার আচার বিক্রেতা দরিদ্র মো. হাফিজুর রহমানের ছেলে মো. সাগর (২৪)। তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রয়েছে। তার বাবা হাফিজুর রহমান জানান, সাগর কমিউটার ট্রেনে উঠার আগে বাড়িতে আসার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু ট্রেনের সময় পাড় হয়ে গেলেও সারারাত সে বাড়িতে যায়নি। ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে জানতে পারেন ট্রেনে ডাকাতের হামলায় দু’জন মারা গেছেন। পরে জামালপুর সদর হাসপাতালের লাশ রাখার ঘরে ছেলেকে শনাক্ত করেন হাফিজুর রহমান। এছাড়া ওই হামলায় গুরুতর আহত জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুবেল (২২) জেলার ইসলামপুর উপজেলার মাঝপাড়া গ্রামের হীরু মিয়ার ছেলে।

ডাকাতদের হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই ট্রেনের যাত্রী ফারুক নামের এক যুবক জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে তারা ঢাকা থেকে কমিউটার ট্রেনের ছাদে ওঠে জামালপুরে আসছিলেন। ট্রেনটি ময়মনসিংহের গফরগাঁও রেলস্টেশন ছাড়ার পর ট্রেনের ছাদের যাত্রীদের অনেকেই ডাকাতদলের কবলে পড়েন। ৪/৫ জনের ডাকাতদলটি নাহিদসহ অনেক যাত্রীর কাছ থেকে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোনসেট লুট করে ট্রেনের ইঞ্জিনের দিকে চলে যায়। এরপর ট্রেনটি রাত আনুমানিক পৌনে ৯টার দিকে ময়মনসিংহ রেলস্টেশন ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই যাত্রী ফারুক ও নাহিদসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী এক হয়ে ট্রেনের ছাদে ডাকাতদের খুঁজতে যান। তারা ডাকাতদের চিনতে পেরে কিছু বলার আগেই ডাকাতরা তাদের ওপর হামলা করে। এতে যাত্রী নাহিদ, সাগর ও রুবেল গুরুতর আহত অবস্থায় ট্রেনের ছাদেই পড়ে থাকেন। ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে ট্রেনটি জামালপুর রেলস্টেশনে পৌঁছুলে গুরুতর আহত তিনযাত্রীকে ছাদ থেকে নামিয়ে রেলওয়ে থানা পুলিশ তাদেরকে জামালপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। তাদের মধ্যে নাহিদ ও সাগরকে মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার মো. জাকিউল আলম খান। গুরুতর আহত যাত্রী রুবেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে কমিউটার ট্রেনের ছাদে ডাকাতদের হামলা, লুটপাট, যাত্রীদের মারধর এবং দুই যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় চলছে। রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুনসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে জামালপুর রেলওয়ে থানা পরিদর্শন করেন। তারা মৃত দুই যাত্রীর পরিবারের স্বজনদের সাথে দেখা করেন এবং সমবেদনা জানান। তারা হাসপাতালে ভর্তি থাকা যাত্রী রুবেলের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তার কাছ থেকেও ঘটনার বর্ণনা শুনেন।

রেলওয়ের ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে জামালপুর কমিউটার ট্রেনের ছাদে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় দুজন যাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি দুষ্কৃতিকারীর আক্রমণেই তারা মারা যান। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখছি। দুই যাত্রীর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তাদের পরিবারের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রেলওয়ে থানায় মামলা দায়েরসহ ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।