ব্রহ্মপুত্র নদে ডুবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী সিয়ামের মৃত্যু, যায়নি ডুবুরি দল

হাসানুল ইসলাম সিয়াম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও ইসলামপুর প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী হাসানুল ইসলাম সিয়ামের (২৩) মৃত্যু হয়েছে। ১ জুলাই সন্ধ্যায় উপজেলার বীর উত্তম খালেদ মোশারফ সেতু এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ডুবুরি সঙ্কটের কারণে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার দল ঘটনাস্থলে না যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে স্থানীয়রা রাত ৯টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে। এর আগে বিকেলে দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে ওই সেতুতে বেড়াতে গিয়েছিলেন সিয়াম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার কিংজাল্লা গ্রামের বাসিন্দা ও সরকারি নেকজাহান পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. উমর আলীর ছেলে। সিয়াম এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.২৯ পেয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ঘ-ইউনিটে তিনি মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হলের আবাসিক এই শিক্ষার্থী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সিয়াম ১ জুলাই বিকেলে তার দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে ইসলামপুরের বীর হাতিজা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বীর উত্তম খালেদ মোশারফ সেতুতে ঘুরতে যায়। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর সেতু থেকে নেমে স্থানীয় পাইলিং ঘাটে গোসল করতে নামেন তারা। এ সময় সিয়াম পানিতে ডুবে নিখোঁজ হন। তার দুই বন্ধু অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে বাড়িতে খবর দেন। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর অঙ্কন কর্মকার ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ইসলামপুর ফায়ার সার্ভিসে ফোন করে সিয়ামকে উদ্ধারের জন্য ডুবুরি পাঠাতে বলেন। কিন্তু ডুবুরি না থাকায় ফায়ারসার্ভিস উদ্ধার কাজে যায়নি। সিয়ামের পরিবারের স্বজনরাসহ স্থানীয় বিপুল সংখ্যক লোক নদীতে জাল ফেলে এবং ডুব দিয়ে সিয়ামের অনুসন্ধানে নামে। রাত ৯টার দিকে সেতুর কাছেই এক ব্যক্তির জালে আটকা পড়ে সিয়ামের দেহ। পাড়ে তুলে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

পরে তার পরিবারের স্বজনরা মরদেহ তার দাদাবাড়ি ইসলামপুরের গোয়ালের চর ইউনিয়নের চরচারিয়া গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর জীবিত আছে সন্দেহ হলে পরিবারের স্বজনরা তাকে ইসলামপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মেধাবী শিক্ষার্থী সিয়ামের এভাবে অকাল মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের স্বজন, বন্ধু সহপাঠী ও এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর অঙ্কন কর্মকার বাংলারচিঠিডটকম বলেন, সিয়াম পানিতে ডুবে নিখোঁজ হওয়ার কথা জানতে পেরে প্রথমেই আমি ইসলামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তাকে জানাই। ডুবুরি নাই বিধায় তারা সেখানে আসবে না বলে জানান। ডুবুরি দল না যাওয়ায় স্থানীয়রা প্রায় দুই ঘন্টা অনুসন্ধান চালিয়ে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। যেখানে ছেলেটি ডুবেছে সেখানে অনেক গভীর পানি। সবাই ধরেই নিয়েছিলাম যে ছেলেটি মারা গেছে। তারপরও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত সেখানে গিয়ে অনুসন্ধান চালালে হয়তো আরও আগেই তাকে উদ্ধার করা যেত।

ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিসহ উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে না যাওয়া প্রসঙ্গে ইসলামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা মো. খায়রুল আলম বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর অঙ্কন কর্মকার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ফোনে জানান ব্রহ্মপুত্র সেতু এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছে। আমাদের স্টেশনে ডুবুরি না থাকায় জামালপুর জেলা কার্যালয়ে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে জানানো হয় জামালপুর ফায়ার সার্ভিসের মাত্র একজন ডুবুরি যিনি কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরবর্তী অসুস্থতায় ভুগছেন। ময়মনসিংহের বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল কিশোরগঞ্জে উদ্ধার অভিযানে গেছে। ডুবুরি পাওয়া যায়নি বিধায় আমরা ঘটনাস্থলে যাইনি। বিষয়টি আমি ইসলামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।

ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজেদুর রহমান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ইসলামপুর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিক্ষার্থী হাসানুল ইসলাম সিয়ামকে মৃত ঘোষণার পর তার মরদেহ পরিবারের স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে গেছে।