জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, ভোগান্তিতে রোগীরা, তদন্ত শুরু

জামালপুর সদর হাসপাতালে হামলা, ভাংচুর ও চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনা খতিয়ে দেখছে প্রশাসনিক তদন্ত দল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

এক নারী রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২৫০ শয্যার জামালপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বহিরাগতদের হামলা, ভাংচুর ও দু’জন চিকিৎসকসহ কয়েকজন ইনটার্ন চিকিৎসক গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখতে সাত সদস্যের প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে তার কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমানকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গঠিত তদন্ত কমিটি ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমান কমিটির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ২৭ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলা ও ঘটনার সময়ের তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তদন্ত কমিটি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার সাথে সম্পর্কিত সব বিষয়েই তদন্ত করে দেখছি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক চিকিৎসক মো. শাহ আলম ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে জামালপুর পরিদর্শনে এসে সদর হাসপাতালের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের সাথে জরুরি বৈঠক। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত চিকিৎসকদের সাথেও বৈঠক করেন তিনি। তিনি দ্রুত সমস্যা সমাধান করে চিকিৎসকদের কাজে ফিরে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বলে ওই সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

এদিকে হাসপাতালে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ২৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জেলা শাখার ডাকে সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং জেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখা থেকে বিরত রয়েছেন সকল চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। ফলে জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ২৭ ডিসেম্বর সারাদিন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বেড়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের দুর্ভোগ। চিকিৎসকরা অনুপস্থিত থাকায় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদেরকেও অন্যত্র চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে তাদের স্বজনদের।

প্রসঙ্গত, জামালপুর শহরের ইকবালপুর এলাকার গুরুতর অসুস্থ করিমন (৬৪) নামের এক নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে জামালপুর সদর হাসপাতালে মারা যান। চিকিৎসকদের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হামলা ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে। বহিরাগতদের হামলায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা চিকিৎসক চিরঞ্জীব সরকারসহ চারজন ইন্টার্ন চিকিৎসক গুরুতর আহত হন। এর জের ধরে একই দিন হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বহিরাগত লোকজন ও ইন্টার্ন চিকিৎসদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়াও সদরের ইউএইচএফপিও চিকিৎসক মো. লুৎফর রহমান পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনায় জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ২৬ ডিসেম্বর রাতে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় পাঁচজনের নামে এবং আরও অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম (৪২) ও সাইদুর রহমান (৩৮) নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ।

আগের খবরগুলোও পড়তে পারেন :
জামালপুর সদর হাসপাতালে হামলা, ভাংচুর, জরুরি বিভাগ অচল, গুরুতর আহত ৫
জামালপুর সদর হাসপাতালে হামলা ভাংচুর : তদন্ত কমিটি হচ্ছে, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা