শারীরিক প্রতিবন্ধী মেধাবী আকলিমা একটি চাকরি চায়

শারীরিক প্রতিবন্ধী মেধাবী আকলিমা আক্তার। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

‘হামাগুঁড়ি দিয়ে কষ্ট করে স্কুল-কলেজে গেছি। মাস্টার্স পর্যন্ত ভালো রেজাল্টও করছি। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিছি। আমি কি পরিবারের বোঝা হয়েই থাকবো আজীবন। হামাগুঁড়ি দিয়ে অফিসের সিঁড়ি বেয়ে উঠেও চাকরি করতে পারব। আমাকে কেউ একটা চাকরি দেন। আমি বাঁচতে চাই। পরিবারের হাল ধরতে চাই।’ শারীরিক প্রতিবন্ধিত্বকে জয় করে উচ্চশিক্ষা লাভ করেও বেকার মেধাবী আকলিমা আক্তার এভাবেই আকুতি জানায় একটা চাকরির জন্য।

আকলিমাদের বাড়ি জামালপুর পৌরসভার কম্পপুর গ্রামে। স্থানীয় নিম্ন-মধ্যবিত্ত কৃষক আলতাফ হোসেনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে আকলিমা দ্বিতীয়। বয়স ২৬ বছর। জন্মের ছয় মাস বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আকলিমার দুটি পা অবস হয়ে যায়। হাটতে পারে না সে। হামাগুঁড়ি আর হুইলচেয়ারই তার ভরসা।

আকলিমা জানায়, স্কুলে যাওয়া শুরু হয় মায়ের কোলে চড়ে। হামাগুঁড়ি দিয়ে স্কুলে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছে স্থানীয় ব্র্যাক স্কুল থেকে। পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর শুরু হয় আরেক যুদ্ধ। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য সে যায় শহরের হযরত শাহ জামাল (রহ.) উচ্চ বিদ্যালয়ে। তাকে ভর্তি করেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পড়ালেখার জন্য আরো জেদ চাপে তার। এরপর ভর্তি হতে যায় শহরের ইকবালপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। তৎকালীন প্রধান শিক্ষিকা সৈয়দা সাউদা বেগম প্রথম দেখাতেই তাকে ভর্তি করেন। একই সাথে আকলিমার আশ্রয় জুটে ওই প্রধান শিক্ষিকার বাসায়। পড়ালেখার দায়িত্বও নেন তিনি।

আকলিমা ২০১০ সালে ওই বিদ্যালয় থেকেই প্রথম বিভাগে (জিপিএ-৪.৩১) এসএসসি, ২০১২ সালে জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে (জিপিএ-৩.৯০) এইচএসসি এবং একই কলেজ থেকে ২০১৬ সালে দর্শন বিষয়ে দ্বিতীয় বিভাগে (সিজিপিএ-২.৯৫) বিএ-অনার্স পাস করে। ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ থেকে মাস্টার্সেও প্রথম বিভাগে (সিজিপিএ ৩.০৯) পাস করেছে সে। কম্পিউটার প্রশিক্ষণও নিয়েছে সে। উচ্চ শিক্ষালাভ করায় সমাজে এক অনন্য উদাহরণ আকলিমা। জীবনের ২৪ বছরের মাথায় এসে ২০১৯ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে জুটে শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। প্রতিমাসে পাচ্ছে ৭৫০ টাকার আর্থিক সহায়তা।

আকলিমা আরো জানায়, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের মাত্র চার বছর সময় আছে তার। ২০১৮ সালে পৌরসভার চন্দ্রায় একটি বেসরকারি স্কুলে সামান্য বেতনে শিক্ষকতা করেছে কয়েক মাস। এরপর স্থানীয় একটি কেজি স্কুলে সামান্য বেতনে শিক্ষকতা শুরু করে সে। গত মার্চে করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। বেকার হয়ে পড়ে সে। কিন্তু বাবা-মায়ের বোঝা হয়ে আর থাকতে চায় না সে। একটা চাকরি পেলে সে পরিবারের হাল ধরতে চায়। একটা চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজের বিত্তবানসহ সবার কাছেই আকুল আকুতি জানিয়েছে আকলিমা।

আকলিমার মা পিয়ারা বেগম তাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। তিনি বললেন, অরে নিয়া মেলা কষ্ট করছি। পড়ালেহার জন্য মেলা কষ্ট করছে ও। অর মেলা বুদ্ধি আছে। বিয়াশাদিও দিহাইতাছি না। এডা চাকরি অইলে অর মেলা দাম অবো। অরে এডা চাকরির ব্যবস্থা কইরে দেন আপনেরা।’