করোনাভাইরাস : জামালপুরের নমুনার ফলাফলে আসছে নটপারফরমড, ইনকনক্লুসিভ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

‘ইনকনক্লুসিভ’ এর বাংলায় প্রতিশব্দ অমীমাংসিত। আর ‘নটপারফরমড’ এর প্রতিশব্দ অসম্পন্ন। করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জামালপুরের কিছু নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের মন্তব্যে ইনকনক্লুসিভ ও নটপারফরমড আসায় নমুনাদাতাকে ফলাফল জানাতে এবং পদক্ষেপ বেশ দ্বন্দ্বে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

১৫ ও ১৬ জুন নমুনা পরীক্ষার এই ধরনের ফল নিয়ে জামালপুর স্বাস্থ্য বিভাগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বেশ বিব্রত ও দ্বন্দ্বে পড়েছেন। এ নিয়ে তাদেরকে মাঠপর্যায়ে কাজ করতেও বেশ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। করোনার রোগী শনাক্ত করার এই সমস্যাটি পিসিআর ল্যাব কর্মকর্তাদের জানিয়ে দ্রুত এর সমাধান চাওয়া হয়েছে বলে জেলার সিভিল সার্জন চিকিৎসক প্রণয় কান্তি দাস জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনাভাইরাস শনাক্ত করার পিসিআর ল্যাব মেশিন অচল হয়ে যাওয়ায় গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জামালপুরের নমুনাগুলো ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। ওই ল্যাবে ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহসহ চার জেলার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এতে করে জামালপুরের নমুনাগুলো জটে পড়ে তিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত বিলম্বে পরীক্ষা করা হলেও এতদিন প্রতিদিন ঠিকঠাক মতোই প্রতিবেদন আসছিলো। কিন্তু ১৫ জুন জামালপুরের বেশকিছু নমুনার ফল ইনকনক্লুসিভ বা অমীমাংসিত এবং ১৬ জুন রাতে বেশ কিছু নমুনার ফল নটপারফরমড বা অসম্পন্ন আসে।

১৬ জুন পিসিআর ল্যাব থেকে আসা নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ২০ জনের নমুনা পরীক্ষায় সবগুলোরই নটপারফরড বা অসম্পন্ন প্রতিবেদন এসেছে। এ প্রসঙ্গে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএচএফপিও) চিকিৎসক সৈয়দ আবু আহম্মদ শাফী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘১৬ জুন রাতে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের ইমেইল বার্তা খুলেই দেখি ২০ জনের নমুনায় নটকনফারমড লেখা। সাথে সাথে জেলায় সিভিল সার্জন স্যারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানাই। তিনি ময়মনসিংহের ল্যাবে যোগাযোগ করে বিষয়টি আমাকে জানাবেন বলেছেন। ফলে ১৬ জুন রাতে ওই ২০ জনের নমুনাদাতাদের ফলাফল জানানো থেকে বিরত থাকি। ওই নমুনাগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকজন আগে আক্রান্ত রোগীর ফলোআপ নমুনাও রয়েছে।’

তিনি আরও জানান, কি কারণে এমন হয়েছে তা ল্যাবে যারা কাজ করেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। ল্যাবে সংগৃহিত নমুনাগুলো পুনরায় পরীক্ষা করা হবে, নাকি গতকাল মেশিনে দেওয়ার পর কাজ অসম্পন্ন রয়ে গেছে তার কিছুই বুঝতে পারছি না। আর যদি সংগৃহিত নমুনাগুলো ল্যাবে নষ্ট হয়ে থাকে তাহলে পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করে পুনরায় ল্যাবে পাঠাতে হবে। ১৭ জুন রাতের প্রতিবেদন হাতে পেলে পরে বোঝা যাবে যে ওই নমুনাগুলোসহ প্রতিবেদন আসে কি না।

এদিকে ১৫ জুন পিসিআর ল্যাব থেকে আসা প্রতিবেদনে জেলার ইসলামপুরের ৩৪টি নমুনার মধ্যে ইনকনক্লুসিভ বা অমীমাংসিত ফল এসেছে ৩৩টি এবং নেগেটিভ এসেছে একটি। সদর উপজেলার ৫০টি নমুনার মধ্যে ইনকনক্লুসিভ বা অমীমাংসিত ফল এসেছে আটটি, পজিটিভ তিনটি এবং নেগেটিভ এসেছে ৪১টি। মাদারগঞ্জে তিনটির মধ্যে সবগুলোই ইনকনক্লুসিভ বা অমীমাংসিত। মেলান্দহ উপজেলার ১০টি নমুনার মধ্যে নয়টি ইনকনক্লুসিভ বা অমীমাংসিত এবং একটি নেগেটিভ এসেছে।

ইসলামপুরের ইউএইচএফপিও চিকিৎসক এ এ এম আবু তাহের এ প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদককে বলেন, এভাবে নমুনার ফল আসলে আমাদের কাজ করতে খুবই সমস্যা হয়। বিষয়টি সিভিল সার্জন স্যারকে জানানো হয়েছে। অন্যান্য ইউএইচএফপিওদের সাথে কথা বলে একই প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

জামালপুরের সিভিল সার্জন চিকিৎসক প্রণয় কান্তি দাস এ প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদককে জানান, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। একদিকে হাতের কাছে ল্যাব না থাকায় ময়মনসিংহে নমুনা পাঠিয়ে বেশ জটে পড়তে হয়। জটে পড়লেও জামালপুরের নমুনা তারা প্রতিদিনই পরীক্ষা করছেন। কিন্তু গত দু’দিনের কিছু মনুনার ফলাফলে ইনকনক্লুসিভ ও নটপারফরমড মন্তব্য থাকায় আমাদের বেশ সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি ময়মনসিংহের ল্যাব কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত এর সমাধান চাওয়া হয়েছে।’