জামালপুরে খাদ্যকর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্সসহ করোনায় নতুন আক্রান্ত ১৮

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের ইসলামপুর আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলালের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পরের দিন ৪ জুন তার ব্যক্তিগত সচিবেরও করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। একই দিনে তিনিসহ জেলায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া ১৮ জনের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা, পোশাককর্মী ও সাধারণ শ্রেণির মানুষ রয়েছেন। তাদের মধ্যে জেলার মাদারগঞ্জের করোনা পজিটিভ শনাক্ত এক যুবকের সন্ধান পাচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলার ইসলামপুরের ইউএইচএফপিও চিকিৎসক এ এ এম আবু তাহের এ প্রতিবেদককে জানান, ৪ জুন ইসলামপুর উপজেলায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া ছয়জনের মধ্যে আগের দিন ৩ জুন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান দুলালের সংস্পর্শে আসা তার ব্যক্তিগত সচিবেরও (৪৫) করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সচিব ছাড়া বাকি পাঁচজনের মধ্যে চারজনই উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। গত ২৫ মে ইসলামপুরের ইউএনও’র করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে তার সংস্পর্শে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্য দপ্তরের বেশ কয়েক জনের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর (৩১), উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক (৪৯), জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী (৩০), পাথর্শী ইউপি চেয়ারম্যানের বাইকচালক (৩০) ও ৪৫ বছর বয়সের নারী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এই উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলায়। প্রতিদিন শেরপুর থেকে ইসলামপুরে কর্মস্থলে যেতেন তিনি। বর্তমানে তিনি শেরপুরের নিজ বাসায় অবস্থান করছেন।

জামালপুর সদরের ইউএইচএফপিও চিকিৎসক. মো. লুৎফর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, সদর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত ছয়জনের মধ্যে জামালপুর সদর হাসপাতালের পুরুষ চিকিৎসা কর্মকর্তা (৪০), একই হাসপাতালের ২৪ ও ২৭ বছর বয়সের দু’জন জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স ও একজন পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মী (৪০) রয়েছেন। এই চারজন জামালপুর করোনা আইসোলেশন সেন্টারে দায়িত্ব পালনের পর শহরের একটি আবাসিক হোটেলে চৌদ্দদিনের কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হলেন। এ ছাড়া জামালপুর পৌরসভার চন্দ্রা বটতলা এলাকায় ঢাকা থেকে আসা পুরুষ পোশাককর্মী (৩৫) এবং ১ জুন জামালপুর শহরের বানাকুড়া এলাকায় একটি ছয়তলা আবাসিক ভবনে করোনায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির বাবার (৬৫) করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। ২ জুন থেকেই লকডাউন করে ভবনটিতে বসবাসকারী অন্তত ৩৫টি পরিবারের চলাফেরায় কড়া নজরদারি করে আসছে স্বাস্থ্যবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন।

এছাড়া জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আওতাধীন পাররাম রামপুর ইউনিয়নে কর্মরত ২৪ বছর বয়সের নারী স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পুরুষ স্বাস্থ্য সহকারী (৪০), সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া দক্ষিণপাড়ায় আগে আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে থাকা এক ব্যক্তির ছোট ভাইয়ের স্ত্রী (৪০) ও পাশের বাড়ির একই বয়সের এক ব্যক্তি এবং মাদারগঞ্জ উপজেলার জোনাইল এলাকায় স্থানীয় দরিদ্র একজন কৃষি শ্রমিক (৫০) ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ২৮ বছর বয়সের এক যুবকের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। মাদারগঞ্জ হাসপাতালের ইউএইচএফপিও চিকিৎসক. মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ল্যাবের প্রতিবেদনে ওই যুবকের নাম থাকলেও সেখানে ফোন নম্বর লেখা নেই। হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহের রেজিস্ট্রার খাতায়ও ওই নামটি নেই। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি সিভিল সার্জনকেও জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

জেলার সিভিল সার্জন চিকিৎসক প্রণয় কান্তি দাস এ প্রতিবেদককে বলেন, ৪ জুন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে জামালপুরের ১৩৩টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১৮ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ল্যাব থেকে আসা প্রতিবেদনে মাদারগঞ্জের এক যুবকের নামের সাথে ফোন নম্বর দেওয়া নেই। মাদারগঞ্জের নমুনা সংগ্রহের তালিকাতেও ওই নাম নেই। তাই তাকে খুঁজে বের করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ওই যুবক ছাড়া বাকি ১৭ জনকে উপসর্গের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ নিয়ে জেলার সাত উপজেলায় মোট ৩২২ জন করোনার রোগী শনাক্ত হলো।