সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র রুকনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ কাউন্সিলরদের

সংবাদ সম্মেলনে সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র রুকনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন কাউন্সিলররা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পৌরসভার মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার অভিযোগ এনে অনাস্থা দিয়েছেন কাউন্সিলররা। ১ মে দুপুরে সরিষাবাড়ী স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব পত্র পাঠ করেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কালা চাঁন পাল। এতে পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলর একযোগে উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত অনাস্থা প্রস্তাবটি উল্লেখ করে বলা হয়, পৌরসভার মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে ত্রাণ, এডিপি, বাস টার্মিনাল বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারী, কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, টেণ্ডারবাজি, অস্ত্রের মহড়া, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাসিক বেতন-ভাতা না দেওয়া, কাউন্সিলর ও সাধারণ নাগরিকদের হয়রানীসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়। মেয়র রুকুনুজ্জামানের কর্মকা-ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও সাধারণ নাগরিকরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা দ্রুত মেয়রের অপসারণ দাবি করেন।

অনাস্থা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে আসছেন। ২০১৭-১৮ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব খাতে অর্জিত টাকা নামে-বেনামে খরচ করেছেন। বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে মেয়র নিজের ইচ্ছায় খরচ করেছেন। উন্নয়ন কর্মকা- অধিকাংশ দরপত্র ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে এবং নামেমাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নিজেই বাস্তবায়ন করেন। উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্নতার চেয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বিভিন্ন স্থানে অনুমোদনহীন পার্ক নির্মাণ দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা মেয়র নষ্ট করেন। ডেঙ্গু নিধন বরাদ্দের আট লাখ টাকা ও পৌর কবরস্থান উন্নয়নের সাড়ে চার লাখ টাকা পুরোটা হাতিয়ে নেন। চলমান করোনাভাইরাসের ত্রাণ বরাদ্দ নিজের খেয়াল-খুশিমতো নামেমাত্র বিতরণ দেখিয়ে অধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করছেন।

আরো অভিযোগ বলা হয়, মেয়র নিজের মাসিক সম্মানী নিয়মিত ভোগ করলেও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সকল কাউন্সিলদের বেতন-ভাতা ১৩-১৬ মাস ধরে বকেয়া রেখেছেন। পৌরসভার কোনো কাজেই কাউন্সিলরদের মতামত নেয়া হয় না। মেয়র কার্যবিবরণী খাতায় কাউন্সিলরদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অগ্রিম স্বাক্ষর আদায় করে পরবর্তীতে নিজের ইচ্ছামতো রেজুলেশন লেখেন। নিজের ইচ্ছামাফিক পৌর কর ৪-৫ গুন বৃদ্ধি করায় নাগরিকদের নাজেহাল করা হলেও কাক্সিক্ষত সেবা মিলছে না।

সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ আলী, প্যানেল মেয়র-২ জহুরুল ইসলাম, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল রানা, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চায়না বেগম প্রমুখ।

এদিকে পৌরসভার মেয়র রুকুনুজ্জমান রোকন ১ মে বিকালে পৌর এলাকার সাতপোয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে তিনদিন ধরে পৌরসভায় যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। একটি মহল আমাকে বাসা বন্দী করে রেখেছেন। আমি নৌকা মার্কার মেয়র। শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আমি বিজয়ী হয়ে পৌরবাসির সকল উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। আজ আমাকে সকল উন্নয়ন কাজ থেকে বিরত রাখা হচ্ছে। এর বিচার সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানালাম।